তাণ্ডব: বিষ্ণুপুরের কলাবাগান গ্রামে ছাউনি উড়ে গেল ঝড়ে। নিজস্ব চিত্র
মাত্র কয়েক মিনিটের ঝড়। সঙ্গে শিলাবৃষ্টি। শুক্রবার রাতের ওই ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল বরাবাজারের কয়েকটি গ্রাম। ঝড়ে বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ পঞ্চায়েতের কলাবাগান, বাহাদুরপাড়া, হেতাগোড়া, দিগারপাড়া গ্রামেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাসিন্দাদের দাবি, ঝড়ের দাপটে কারও টিনের চালা বা খড়ের ছাউনি উড়ে গিয়ে পাশের জমিতে আছড়ে পড়ে। বহু গাছপালাও শিকড়-সহ উপড়ে পড়েছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাবাজারের লটপদা পঞ্চায়েতের লটপদা, মুদিডি, সরবেড়িয়া এবং সিন্দরি পঞ্চায়েতের আগাঝোর, বিশকুদরা গ্রামে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এছাড়া লাগোয়া আরও কয়েকটি গ্রামে আংশিক ক্ষতির খবর মিলেছে। ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে শনিবার ব্লক অফিস খুলে রাখা হয়।
লটপদা পঞ্চায়েতের সরবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা অর্ধেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি হয়েই থেমে যায়। কিন্তু রাত প্রায় সাড়ে ১০টার পরে হঠাৎ দমকা হাওয়া বইতে শুরু করল। সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হল। টিনের চালায় এত শব্দ হচ্ছিল যে মনে হল টিন ফুটো করে শিল ঘরে আছড়ে পড়বে। বাতাসও বাড়ে।’’
ওই গ্রামের গুরুপদ গড়াইয়ের অভিজ্ঞতা, ‘‘শোওয়ার পর থেকেই ঝড় ও বৃষ্টি নামল। ঝড় বেড়ে যেতেই বিকট শব্দে আমাদের টিনের চালাটা খুলে কোথায় উড়ে গেল। মাথার উপর ঘুটঘুটে অন্ধকার আকাশে তখন থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। শিলও আছড়ে পড়ছিল আমাদের উপর।’’
নরসিংহ ভুঁইয়া নামের আরও এক বাসিন্দার ঘরের চালা ঝড়ে উঠে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘শিলাবৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে পাচ্ছিলাম না। স্ত্রী ও দুই শিশুকে নিয়ে ঘরের কোণায় দেওয়ালে মুখ গুঁজে ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে ঝড়ের বেগ দেখি কমে এলো। ঝড় আর কিছুক্ষণ স্থায়ী হলে আরও বড় বিপদ হতে পারত।’’ সরবেড়িয়া গ্রামের আর এক বাসিন্দা তপন মহান্তী জানান, তাঁর পাকা বাড়ির ছাদের রেলিংও খসে পড়ে গিয়েছে।
সিন্দরি পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘ঝড়ে আমাদের এলাকার বিশকুদরা ও আগাঝোর গ্রামে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ করা হচ্ছে। সাধ্যমতো ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি প্রতুল মাহাতো জানান,ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। জয়েন্ট বিডিও (বরাবাজার) ধীমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত প্রধানদের কাছ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পুরো তালিকা হাতে পাইনি। শনিবার ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।’’
বিষ্ণুপুরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টি বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়। অনেকের বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে যায়, কারও ঘরের মাটির দেওয়াল ভেঙে পড়ে। বাঁকাদহ পঞ্চায়েতের প্রধান রঘুমণি সাহা বলেন, ‘‘ঘরবাড়ির যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনই করলা, লাউ, কুদরি, পটল প্রভৃতি সব্জিরও ক্ষতি হয়েছে।’’