পুজোয় মাঠ দাপাবে মেয়েরা

নাওয়া খাওয়ার সময় নেই নগরী নগরী এসবি শিক্ষানিকেতনের ছাত্রী দ্বাদশ শ্রেণির দেবী মুর্মু, মুখদি হেমব্রম, দশম শ্রেণির লক্ষ্মী মুর্মু, দাতামণি মুর্মু কিংবা নবম শ্রেণির পাপিয়া মুর্মুদের। এত ব্যস্ততা কিসের!

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৩০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

মাঠের মধ্যে বলদখলের উপভোগ্য লড়াই। তা দেখতে উপচে পড়া ভিড়। আদিবাসী ভাষায় ফুটবল ম্যাচের ধারা বিবরণী।

Advertisement

ফি বছর দুর্গাপুজোয় নবমীর দিন ফুটবলের আসর বসে সিউড়ির কাটাবুনি আদিবাসী গ্রামে। দিন ভর টানটান উত্তেজনায় কাঁপে গোটা এলাকা। আয়োজক গ্রামের পুরুষরা। এ বারও বসবে ফুটবলের আসর। তবে একটা মস্ত ব্যতিক্রম। পুরুষদের হাত থেকে পুরো ফুটবল টুর্নামেন্টের ব্যাটন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে গ্রামের স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীরা। সহযোগিতায় মায়েরাও। প্রতিযোগিতায় যোগদানকারী ৮টি দলও মহিলাদের। সব মিলে জমজমাট কাটাবুনির ফুটবল ময়দান! হাতে আর বেশি দিন নেই, এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি।

নাওয়া খাওয়ার সময় নেই নগরী নগরী এসবি শিক্ষানিকেতনের ছাত্রী দ্বাদশ শ্রেণির দেবী মুর্মু, মুখদি হেমব্রম, দশম শ্রেণির লক্ষ্মী মুর্মু, দাতামণি মুর্মু কিংবা নবম শ্রেণির পাপিয়া মুর্মুদের। এত ব্যস্ততা কিসের! দেবী, দাতামণি, পাপিয়ারা বলছে, ‘‘চাঁদা তোলা থেকে সার্থক ভাবে পুরো ফুটবল টুর্মামেন্ট পরিচালনা করার পরিকল্পনা, দায়িত্ব, সবই যে আমাদের কাঁধে। গ্রামে এতদিনের সুনাম ধরে রাখতে হবে না। এখনও স্কুলে ছুটি না পড়লেও, বাতাসে পুজোর ছুটির গন্ধ। তাই যেদিন স্কুল যেতে হচ্ছে না সেদিন সকালের পড়াশুনা সেরে এখন কেবল ফুটবল ভাবনা। ভরসা একটাই দাদা বাবারা তো উৎসাহ জোগাচ্ছেনই। সক্রিয়ভাবে মেয়েদের পাশে রয়েছে মায়েরাও।

Advertisement

হঠাৎ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজনে মেয়েরা কেন।

আসল সত্যিটা লুকিয়ে রয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরেই। ঘটনা হল, নগরী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ওই আদিবাসী গ্রামটি এবং সংলগ্ন এলাকায় অনেক দিন থেকেই ফুটবলে আগ্রহী ছিল মেয়েরা। গত কয়েক বছর ধরে নিয়ম করে বিকালে তাদের পায়ে ফুটবল উঠেছে। গত ১ বছর ধরে কাটাবুনি ঘেঁষা বাগানপাড়া মাঠে স্থানীয় একটি ক্লাবের সৌজন্য নিয়ম করে ফটবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এলাকার আট থেকে আঠারোর মেয়েরা। পাল্লাভারি কাটাবুনির। প্রশিক্ষক তথা অজয়পুর উচ্চবিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক মৃণাল মাল। মৃণালবাবু বলছেন, ‘‘এত আগ্রহ এদের, যে স্কুল থেকে বা মাঠে কাজ করে ফেরার পথে বল খেলে বাড়ি ফেরে অনেকে। ওই গ্রামেই দুটি মেয়েদের ফুটবল দল। যথেষ্ঠ সম্ভবনা রয়েছে ফুটবলে। শুধু মেয়েরা নয়, গেরস্থালী সামলে উৎসাহী মায়েরাও। মেয়েদের সঙ্গে মাঠে নামতে শুরু করেছেন তাঁরাও।’’

দেবী, পাপিয়ারা বলছে, ‘‘পাশের নগরী গ্রামে দুর্গাপুজোয় খুব ধুম। প্রচুর মানুষ আসেন। আমাদের কাটাবুনি আদিবাসী গ্রামে কোনও পুজো ছিল না। তাই বাবা দাদারা এতদিন ফুটবলের আসর বসিয়ে এসেছেন। মন ভরে যায়। ভাবলাম এ বার আমরাই যদি সেই দায়িত্ব নিই কেমন হয়।’’

ফুটবল টুর্নামেন্টটা করতে চায় মেয়েরা, এ কথা শোনার পর সন্দেহ না করে এক কথায় রাজি সকলে। মা বালিকা হেমব্রম, লক্ষী হেমব্রমরা বলছেন, ‘‘ফুটবলটা সত্যিই ওরা খুব ভলবাসে। ভালবাসি আমরাও। তাই পাশে রয়েছি।’’ অভিভাবক শিবলাল মুর্মু, গ্রিল বেমব্রম কানাই টুডুরা বলছেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত ওরা ভাল ভাবেই পুরো বিষয়টা আয়োজন করেবে।’’

গ্রামের ৬০টি পরিবারের কাছে এবং এদিক ওদিক থেকে চাঁদা তুলে হাজার ১০-১২ জোগাড় করে আয়োজন ঠিক মতো হবে তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী দেবী মুর্মু, পাপিয়া মুর্মু, মুখদি হেমব্রমরা। তবে একটাই আক্ষেপ। সেটা আযোজক হিসাবে নয় খেলোয়ার হিসাবে। যাদের এত আগ্রহ, সেই ফুটবলারদের পায়ে এখনও ফুটবলের বুট উঠেনি। টাকাপয়সার আভাবের জন্য ৮০০ টাকা দামের ফুটবলের বুট কেনা সম্ভব হয়নি তাঁদের। প্রশিক্ষক মৃণালবাবু বলছেন, ‘‘ফুলবল নিয়ে যাদের এত ভাললাগা তাদের পায়ে বুট উঠলে মেয়েগুলো ইন্টার স্কুল বা জেলাস্তরে প্রতিযোগিতায় আরও আনেক এগিয়ে যেতে পারত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement