দুর্বল ছাত্রকে দিশা দিতে বিশেষ ক্লাস

পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের মানোন্নয়নে বিশেষ ক্লাস শুরু হচ্ছে চিহ্নিত সাতটি ব্লকের বাছাই করা প্রাথমিক স্কুলগুলির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৭:৩০
Share:

বলা হয়, প্রাথমিক স্কুলেই এক জন পড়ুয়ার ভিত তৈরি হয়। কিন্তু, ২০১৬ সালে একটি সর্বভারতীয় সমীক্ষা, এএসইআর (অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অফ এডুকেশন রিপোর্ট) বলছে, সেই ভিতটাই কেমন যেন নড়বড়ে হয়ে রয়েছে বীরভূম জেলার পড়ুয়াদের। জেলায় প্রাথমিক পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ ঠিক মতো পাঠ্যবই পড়তে পারে না। করুণ অবস্থা অঙ্কেও।

Advertisement

সেই ফাঁক পূরণ করতে উদ্যোগী হল সর্বশিক্ষা মিশন। পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের মানোন্নয়নে বিশেষ ক্লাস শুরু হচ্ছে চিহ্নিত সাতটি ব্লকের বাছাই করা প্রাথমিক স্কুলগুলির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য। সর্বশিক্ষা মিশন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তালিকায় ২০১১ সালে দেশের নারী শিক্ষার গড় হারের তুলনায় পিছিয়ে থাকা মুরারই ১ ও ২ ব্লক, দুবরাজপুর, রাজনগর, মহম্মদবাজার এই পাঁচটি ব্লক তো আছেই, সঙ্গে নলহাটি ১ ও রামপুরহাট ১ ব্লকের মোট ১৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ভাবনা নেওয়া হয়েছে।

জানা গিয়েছে, মোট ১১ হাজার ৬০০-র বেশি পড়ুয়াদের একটি অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট নেওয়া হবে চলতি মাসের ১৬ এবং ১৭ তারিখ। ৪০ শতাংশের থেকে কম নম্বর প্রাপ্ত পড়ুয়াদের জন্য সপ্তাহে ছ’ঘণ্টা অতিরিক্ত ক্লাস করাবেন শিক্ষকেরা। সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষের ধারণা, ওই সংখ্যাটা কমপক্ষে ৫-৬ হাজারের মধ্যে থাকবে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওই বিশেষ ক্লাস শুরু হবে। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী বলছেন, ‘‘মোট সাতটি ব্লকের ১১টি চক্রের দুর্বল পড়ুয়ারা যাতে একটু এগিয়ে আসতে পারে, সেটাই লক্ষ্য।’’

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চিহ্নিত স্কুলগুলির শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক হয়ে গিয়েছে। দুর্বল পড়ুয়াদের চিহ্নিত করার পরেই সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। স্কুল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পাথর খাদান এলাকা, তফসিলি জাতি ও জনজাতি বা সংখ্যালঘু পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি এমন স্কুলগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, স্কুল ছুট রুখতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ-ফেল প্রথা উঠে যাওয়ায় এক জন পড়ুয়া কতটা শিখছে, তা যাচাইয়ের সুযোগ কম। ফলে দুর্বল পড়ুয়ারা বিনা বাধায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। কিন্তু, তারপরেই সমস্যার শুরু। এই সমস্যা কি গোড়াতেই কাটানো যেত না?

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পড়ুয়ার সংখ্যা যেখানে বেশি, সেখানে পিছিয়ে থাকা ছাত্র বা ছাত্রীকে চিহ্নিত করে তাকে আলাদা করে শেখানোর সুযোগ কম। তবে উঁচু ক্লাসে উঠে সেই পড়ুয়ার শিক্ষার ভিত যদি দুর্বল থাকে, তার দায় যে কিছুটা হলেও শিক্ষকদের ঘাড়ে এসে পড়ে, তাও অস্বীকার করছেন কেউ কেউ। তবে সেই রকম শিক্ষকের সংখ্যাও হাতে গোনা বলে জানাচ্ছে ওই সমীক্ষা। সর্বশিক্ষা মিশনের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর বিকাশ রায় বলছেন, ‘‘বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক এই তিনটি বিষয়ের প্রত্যেকটির জন্য দু’টি করে বিশেষ ক্লাস থাকবে। প্রয়োজনীয় টিচিং লার্নিং মেটেরিয়ালের ব্যবস্থা করবে সর্বশিক্ষা মিশন। চার মাস ধরে বিশেষ ক্লাস চলার পর ফের মূল্যায়ন করা হবে, পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াটি কতখানি উন্নতি করল। মাধ্যমিক স্কুলগুলি সমস্যা এড়াতে নবম শ্রেণির পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের মানোন্নয়নে আগেই স্কুলে স্কুলে শুরু হয়েছিল বিশেষ ক্লাস। এ বার প্রাথমিক স্কুলে থেকেই সেই চেষ্টাটা শুরু হতে যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement