—ফাইল চিত্র।
আর দিন কুড়ি পরেই জমি থেকে নতুন পাতা সংগ্রহ করে তাঁরা বাড়িতে বাড়িতে ডিম লালনপালন শুরু করতেন। পুজোর মরসুমে কিছুটা লাভের মুখ দেখতেন। কিন্তু, সেই আশায় জল ঢেলেছে সাম্প্রতিক বন্যা।
এ বারের বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন রামপুরহাট মহকুমার রেশমচাষিরা। তুঁতের জমি টানা কয়েক দিন ধরে জলের তলায় চলে যাওয়াতেই এই বিপর্যয়। এখনও পর্যন্ত টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ছাড়িয়েছে বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট দফতরই। জেলা বস্ত্র দফতরের রেশম বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সুব্রত দাস বলছেন, ‘‘রেশম চাষের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির হিসেব জেলার বন্যা কবলিত এলাকায় ঘুরে ঘুরে দফতরের কর্মীরা সংগ্রহ করছেন। সোমবারই রাজ্য সরকারের কাছে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। তাতে প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির হিসেব দেওয়া হয়েছে।’’ ক্ষতির পরিমাণ ওই হিসেবের চেয়েও অনেক বেশি বলেই তাঁর আশঙ্কা।
দফতর সূত্রের খবর, বন্যায় রামপুরহাট ১ ও ২, নলহাটি ২ এবং ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকেই রেশমচাষে ক্ষতির পরিমাণ সব থেকে বেশি। প্রায় ১২০ একর জমি জলের তলায় চলে যাওয়ায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই সমস্ত জমির তুঁত গাছের পাতা। ওই জমির মধ্যে রামপুরহাট ১ ব্লকের ৩০ একর, রামপুরহাট ২ ব্লকের ৯০ একর জমি আছে। আবার আংশিক ভাবে রামপুরহাট ১ ব্লকের ৫০ একর, রামপুরহাট ২ ব্লকের ৩৫৫ একর, নলহাটি ২ ব্লকের ৭০০ একর এবং ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের ২০ একর তুঁত গাছের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দফতর সূত্রে খবর। পাশাপাশি ৩ জনের সম্পূর্ণ এবং ১৫৭ জন রেশম চাষির পলুঘর আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া রেশম চাষের জন্য ‘ডিএফএল’ প্রজাতির ১৫,১০০টি ডিম নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেশম চাষিদের ডালা, তালিয়া ইত্যাদি সরঞ্জামও।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই মাথায় হাত পড়েছে রেশম চাষিদের। রামপুরহাট ১ ব্লকের বলরামপুর গ্রামের চাষি বুদ্ধদেব সরকার বলছেন, ‘‘দেড় বিঘে জমিতে রেশম চাষ করি। গ্রামে অনেকেই রেশম চাষের উপর নির্ভরশীল। জমিতে বন্যার জল ঢুকে তুঁত গাছের পাতার ক্ষতি করেছে। কী করে ঘর-সংসার চালাব, বুঝতে পারছি না।’’ একই দশা নলহাটি ২ ব্লকের টিঠিডাঙা গ্রামের বদর শেখ, আমিনুর ইসলাম, রামপুরহাট ২ ব্লকের কুতুবপুর গ্রামের গোলাম নবিরও। স্থানীয় মোতাইন, বালসা, বাবলাডাঙা, জয়চন্দ্রপুর প্রভৃতি গ্রামের রেশম চাষিদের আক্ষেপ, ‘‘এত দিন ধরে চাষ করে বড় করছলাম। কিন্তু জলে ডুবে যাওয়ায় ওই তুঁত পাতা আর আগামী আশ্বিনা মরসুমের জন্য কাজে লাগবে না। আবার অঘ্রানী মরসুমের আগে আর ওই জমিতে তুঁতপাতা নতুন করে জন্মাবে না।’’
অধিকাংশ চাষিই জানাচ্ছেন, আর দিন কুড়ি সময় পাওয়া গেলেই নতুন তুঁত পাতা জমিতে পাওয়া যেত। ‘আশ্বিনা মরসুমে’র জন্য ডিমের লালনপালন করে বিঘে প্রতি ৬০-৬৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত রেশমগুটি বের করে পুজোর মুখে ৬-৭ হাজার টাকা আয় করার সুযোগ ছিল। কিন্তু, বন্যার জল সেই আশায় জল ঢেলেছে প্রত্যেকেরই। এই পরিস্থিতিতে দফতর কি ওই চাষিদের পাশে দাঁড়াবে না? ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন সুব্রতবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক জেলার ক্ষতিগ্রস্ত রেশম চাষিদের যথাযথ সাহায্য করা হবে।’’