Liquor free Village

মদ-মুক্ত চিতিডি করতে দেওয়ালে লেখা ফতোয়া

আড়শার মানকিয়ারী পঞ্চায়েতের চিতিডি গ্রামে প্রায় ৩৪০টি পরিবারের বাস। একটি প্রাথমিক স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। শিক্ষার হার ভাল।

Advertisement

সমীরণ পাণ্ডে

আড়শা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৭:৪৭
Share:

গ্রাম ষোলোআনার দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র

গ্রামে মদ বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছিল ঘরে ঘরে অশান্তি। এমনকি কমবয়সিরাও আসক্ত হয়ে পড়েছিল সুরার নেশায়। তাই মদ-মুক্ত গ্রাম গড়তে ‘শাস্তি’ দেওয়ার ফতোয়া দিয়ে দেওয়াল লিখন করেছে আড়শার চিতিডি গ্রাম ষোলো আনা কমিটি। যদিও গ্রাম ষোলো আনা কমিটি শাস্তির নিদান দিতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে গ্রাম ষোলো আনা কমিটির দাবি, তারা শুধু সতর্ক করার জন্য ওই ঘোষণা করেছে। দেওয়াল লেখার ক’দিনের মধ্যেই গ্রামেশান্তি ফিরেছে।

Advertisement

আড়শার মানকিয়ারী পঞ্চায়েতের চিতিডি গ্রামে প্রায় ৩৪০টি পরিবারের বাস। একটি প্রাথমিক স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। শিক্ষার হার ভাল। তবে অধিকাংশ বাসিন্দাই চাষবাসের উপরে নির্ভরশীল। বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামে কয়েক বছর আগে দু’-তিনটি জায়গায় দেশি মদ অবৈধ ভাবে বিক্রি হত। ইদানীং ছ’-সাত জায়গায় মদের খুচরো বিক্রি শুরু হয়।

গ্রামের যুবক কালীচরণ মাহাতোর কথায়, ‘‘১০ টাকায় এক গ্লাস মদ বিক্রি হচ্ছিল গ্রামে। সে জন্য ছেলে-বুড়ো অনেকেই মদ্যপান শুরু করেছিলেন। গ্রামের পরিবেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। বহু বাড়িতে অশান্তি শুরু হয়।’’

Advertisement

চিতিডির এক বধূর কথায়, ‘‘সারা দিন দিনমজুরি করে যা পারিশ্রমিক পেতাম, স্বামী সেই টাকা নিয়ে গিয়ে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরত। প্রতিবাদ করলে অশান্তি হত।’’ গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন মাহাতো বলেন, ‘‘কম বয়েসি ছেলেরাও মদ খেতে শুরু করেছিল। বড়রা বারণ করলেও শুনছিল না।’’

গ্রাম ষোলো আনা কমিটির তরফে পেশায় গৃহশিক্ষক যুবক কালীচরণ মাহাতো ও তরণী মাহাতো বলেন, ‘‘গ্রামে মদ বিক্রি বন্ধ না করতে পারলে পরিবেশ দিন দিন খারাপ হয়ে যেত। তাই গ্রাম ষোলোআনার সবাই মিলে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিই মদ বিক্রি করা যাবে না, মদ খাওয়া যাবে না। বিষয়টি সবাইকে বোঝানো হয়। গ্রামে ঢোল বাজিয়ে ঘোষণা করা হয়।’’

এরপরেই সম্প্রতি গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় হলুদ রং করে তার উপরে কালো অক্ষরে লেখা হয়— ‘মদ বিমুক্ত চিতিডি। এই গ্রামে মদ বিক্রি করা, মদ খাওয়া ও মাতলামি করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। গ্রামের বাসিন্দা বা তাঁদের পরিচিত— সবার জন্যই এই নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে। নিয়ম ভাঙলে চিতিডি গ্রাম ষোলো আনা কমিটির বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে শাস্তি পেতে হবে’।

কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন থাকতে গ্রাম ষোলোআনাকে কেন এই সিদ্ধান্ত নিতে হল?

ষোলোআনার সদস্যদের দাবি, পুলিশের এক দিনের অভিযানে পাকাপাকি ভাবে মদের ঠেক বন্ধ করা যেত না। তাই এই সিদ্ধান্ত। তাঁদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মানকিয়ারী পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য যুধিষ্ঠির মাহাতো।

‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো বলেন, ‘‘অন্য গ্রামগুলিও মদের নেশা বন্ধ করতে উদ্যোগী হলে ভাল। তবে কোনও ভাবেই শাস্তি দেওয়ার নামে আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হবে না। পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য নিতে হবে।’’

গ্রাম ষোলোআনার দাবি, তারা কাউকে শাস্তি দেয়নি। জরিমানা করা হবে বলে সাবধান করাতেই মদ বিক্রি ঠেকানো গিয়েছে। তবে সুরাহা করতে না পারলে পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হবে। পুরুলিয়া জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেডেন্ট অসিত শর্মা বলেন, ‘‘ওই গ্রামের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement