ব্যস্ত: চলছে তৈরি। নিজস্ব চিত্র
মাস কয়েক আগেও মিতালি বাগদি, সুনীতা মির্ধা, লক্ষ্মীমণি হাঁসদা, সুমি হাঁসদারা ঘরের কাজ সামলাতেন। পরিবারের অনটন ঘোচাতে হাতের কাছে যে কাজ পেতেন করতেন। এখন বক্রেশ্বর ও লাগোয়া এলাকার প্রান্তিক পরিবারের ওই মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে বিক্রি করছেন। ‘সুকন্যা’ নামে মহিলা স্বনির্ভর দল গড়ে মাস দু’য়েক হল শুরু হয়েছে উৎপাদন। আগাগোড়া পাশে রয়েছে কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পরামর্শ দেওয়া থেকে, ঋণ পাইয়ে দেওয়া— সবেতেই প্রান্তিক মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সংস্থা।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে দেবযানী মিত্র জানান, এর ফলে মেয়েদের আয় যেমন বাড়বে। তেমনই ‘ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা’ সম্পর্কেও এলাকার মহিলাদের সচেতনতা বাড়বে। বক্রেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছের একটি বাড়িতেই ন্যাপকিন তৈরি করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। মিতালি, সুনীতা, লক্ষ্মীমণিরা জানালেন, সকাল ১১টার মধ্যে সংসারের কাজ সামলে চলে আসেন। চলে বিকেল চারটে পর্যন্ত। পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ হয় এখানে। ১০টি করে ন্যাপকিন ভরে তৈরি হয় একটি প্যাকেট। দৈনিক উৎপাদন গড়ে ১২-১৫ প্যাকেট।
স্বনির্ভর দলের স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির উদ্যোগ জেলায় প্রথম নয়। ব্যয় সঙ্কোচন এবং অন্য দিকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই এই ব্যবস্থা বছর দু’য়েক আগে বোলপুরে চালু করে স্বাস্থ্য দফতর। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং বোলপুর ব্লক মহিলা মহাসঙ্ঘের অন্তর্গত স্বনির্ভর গোষ্ঠীরা এই কাজ করছেন। এবং জেলার হাসপাতালগুলিতে অনেক কম দামে সরবরাহ করছেন।
বক্রেশ্বরের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আরও বড়। উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ থাকছে না মিতালিদের দায়িত্ব। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে দেবযানী মিত্র, সুব্রত বসুরা অনুঘটকের কাজ করলেও বক্রেশ্বর, ঝাপড়তলা, আদিবাসী গ্রাম আসানশুলির ওই প্রান্তিক মহিলারাই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এগিয়ে এসেছেন। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিধায়ক তথা স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ অশোক চট্টোপাধ্যায়। দামি ব্রান্ডের থেকে তাঁদের তৈরি ন্যাপকিনের দাম অনেক। মাত্র ২৫ টাকা প্যাকেট হওয়ায় স্বল্প সময়ে যথেষ্ট ভাল সাড়া মিলেছে, জানাচ্ছেন সুকন্যার মহিলা সদস্যরা। নানা জায়গায় বিক্রি হচ্ছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি অবশ্য মনে করছেন, ‘‘গুণমান যাচাই করিয়ে উৎপাদিত দ্রব্যের শংসাপত্র নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়ে সেটা করা যায়।’’