কেন পানায় ঢাকা জাতীয় সরোবর

শিকারা নামল, সাজানোর পিছনে খরচ করা হল। কিন্তু কচুরিপানা রয়েই গেল। সাহেব আমলে তৈরি সাহেববাঁধের এমনই দশা পুরুলিয়ায়। শহরের বাসিন্দাদের অনেকে তাই প্রশ্ন করছেন, ‘‘জাতীয় সরোবরের এমন হাল কেন!’’

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৬
Share:

ছয়লাপ: এমনই অবস্থা পুরুলিয়ার সাহেববাঁধের। ছবি: সুজিত মাহাতো

শিকারা নামল, সাজানোর পিছনে খরচ করা হল। কিন্তু কচুরিপানা রয়েই গেল। সাহেব আমলে তৈরি সাহেববাঁধের এমনই দশা পুরুলিয়ায়। শহরের বাসিন্দাদের অনেকে তাই প্রশ্ন করছেন, ‘‘জাতীয় সরোবরের এমন হাল কেন!’’

Advertisement

১৮৩৮ সালে মানবাজার থেকে মানভূমের জেলা সদর চলে এসেছিল পুরুলিয়ায়। কংসাবতী নদী ছিল প্রায় ছ’কিলোমিটার দূরে। এই জনপদের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা দিলীপকুমার গোস্বামী জানাচ্ছেন, সদর শহরে জলের বন্দোবস্ত করার জন্য মানভূমের তখনকার ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) কর্নেল টিকলে জেলের বন্দিদের দিয়ে জলাশয়টি খোঁড়ানো শুরু করেন। প্রায় ৮৫ একর জুড়ে বিস্তৃত সরোবরের কাজ চলেছিল ১৮৩৮ থেকে পাঁচ বছর ধরে।

২০১১ সালে জাতীয় সরোবরের মর্যাদা পায় সাহেববাঁধ। তার পরে দফায় দফায় অনেক টাকা খরচ করে জলাশয়টির সংস্কার হয়েছে। সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। কিন্তু শহরবাসীর অভিজ্ঞতা, বছরের অনেকটা সময় আজও বাঁধের একটা বড় অংশের জল থাকে কচুরিপানায় ঢাকা। এখনও যেমন রয়েছে। শহরের বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বাঁধের আর একটা পরিচয় শহরের ফুসফুস হিসেবে। কিন্তু কচুরিপানায় ঢাকা বিস্তীর্ণ অংশ। কেন?’’ যখন এই জলাশয়কে কেন্দ্র জাতীয় সরোবরের মর্যাদা দেয়, সে সময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সাহেববাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে পুরসভা উদাসীন।’’ এই ‘উপেক্ষা’র প্রতিবাদে জেলা কংগ্রেস আন্দোলনে নামবে, এমনই দাবি তাঁর।

Advertisement

শাসকদলের নেতাদের একাংশও এ নিয়ে অস্বস্তি লুকোননি। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রবিশঙ্কর দাস বলেন, ‘‘সাহেব বাঁধ নিয়ে শহরবাসীর মনে যে প্রশ্ন উঠছে তার জবাব পুরসভাকেই দিতে হবে। কচুরিপানায় ঢেকে যাওয়ার ব্যাপারটা অস্বীকার করা যাবে না।’’ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘এতটা অংশ কচুরিপানায় ঢাকা যে সে দিকটাকে লোকে বলছে, ‘খেলার মাঠ’। জাতীয় সরোবর তো নামেই।’’ যদিও পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের সামিমদাদ খানের বক্তব্য, ‘‘পরিষ্কার করা হচ্ছে। জলদিই আগের চেহারায় ফিরে আসবে বাঁধ।’’

চেহারা ফিরে এলেও তা থাকবে ক’দিন— প্রশ্ন তুলছেন আবু সুফিয়ান। ‘সাহেববাঁধ বাঁচাও’ কমিটির মুখপাত্র তিনি। সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক সুব্রত রাহা বলেন, ‘‘কচুরিপানা সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সংখ্যায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।’’ তিনি জানাচ্ছেন, এই গাছ অনেকটা রক্তবীজের মতো। ছিঁড়ে গেলে সেই টুকরো থেকে নতুন গাছ হয়ে যায়। ঢেকে ফেলে জলের উপরের স্তর। ভিতরে সূর্যের আলো ঢোকে না। মুশকিলে পড়ে জলের নীচে থাকা প্রাণী ও অন্য গাছগাছালি।

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বাঁশ দিয়ে জলের একটা অংশ ঘিরে রাখলে পানার দ্রুত ছড়িয়ে পড়া অনেকটা রোখা যায়। আর সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘কোনও অর্থকরী কাজে কচুরিপানা ব্যবহারের উপায় খোঁজা দরকার। তা হলে নিয়মিত জল থেকে তোলার তাগিদটা থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement