প্রতীকী চিত্র।
অপুষ্টি মোকাবিলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের সকালের খাবার হিসেবে গম, বাদাম, ছোলা, চিনির মিশ্রণে তৈরি ‘রেডি-টু ইট’ খাবার দেওয়া হবে। এক বছর আগেই এমন নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশ্ন হল, দীর্ঘকাল বন্ধ থাকার পরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি যদি চলতি বছরের শেষ ভাগে বা সামনের বছরের প্রথম দিকে চালু হয় তা হলে কি গোটা জেলার পাঁচ হাজারের বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের তিন লক্ষের বেশি শিশুর জন্য ওই খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হবে? প্রশাসনের কর্তারা এই ব্যাপারে আশাবাদী হয়েও কিছু কাজ এখনও বাকি সেটাও মেনে নিচ্ছেন।
প্রশাসন সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, প্ল্যান্ট গড়ে ‘রেডি-টু ইট’ তৈরি ও সরবরাহের দায়িত্বে আছেন মহিলা স্বনির্ভর দল সমূহের মাথায় থাকা জেলার তিনটি মহাসঙ্ঘ ও একটি সঙ্ঘ সমবায়। সেগুলি হল দুবরাজপুর মহাসঙ্ঘ, রামপুরহাট ১ মহাসঙ্ঘ, বোলপুর-শ্রীনিকেতন মহাসঙ্ঘ এবং মুরারই ২ ব্লকের পাইকর সঙ্ঘ। গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধীনে থাকা রাজ্য গ্রামীণ জীবিকা মিশন বা আনন্দধারা প্রকল্পের মাধ্যমেই এই প্রকল্প রূপায়িত হওয়ার কথা। উদ্দেশ্য শিশুদের পুষ্টির জোগানের পাশাপাশি মহিলাদের স্বনির্ভর করা।
প্রত্যেক সঙ্ঘ বা মহাসঙ্ঘকে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১৪ লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্য করা হচ্ছে। দুবরাজপুর মহাসঙ্ঘের ভবন তৈরির জন্য আরও ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল এক বছর আগেই। কিন্তু, করোনার জন্য বেশ কয়েক মাস অতিরিক্ত সময় পাওয়া গেলেও দুবরাজপুরে প্রকল্পের জন্য ভবন তৈরির কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। তবে অন্যত্র যন্ত্রপাতি লাগানোর কাজ চলছে। আবার ইউনিট চালানোর জন্য তিনটি মহাসঙ্ঘের মহিলা সদস্যাদের প্রশিক্ষণ শেষ হলেও পাইকরে সঙ্ঘের মহিলাদের প্রশিক্ষণ বাকি।
আনন্দধারার দুবরাজপুর ব্লক ম্যানেজার দুর্গা দত্ত দাস জানিয়েছেন, দুবরাজপুর সঙ্ঘের ভবন নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। আনন্দধারার জেলা প্রজেক্ট ম্যানেজার শ্রীধর সামন্ত জানিয়েছেন, কাজ শেষ হলেই যন্ত্রপাতি লাগিয়ে দুবরাজপুরে উৎপাদন শুরু করা যাবে। বাকিগুলিতে সেই সমস্যা নেই। যন্ত্রপাতি বসেছে বা বসছে। পাইকরের প্রশিক্ষণ দিতেও খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে রামপুরহাট মহাসঙ্ঘের জায়গার অভাব ছিল বলে সেটা রামপুরহাট কিসান মান্ডিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
অঙ্গনওয়াড়ি শিশুদের পরিপূরক পুষ্টি যোগাতে বীরভূমে আগে বিভিন্ন কেন্দ্র বিভিন্ন রকম খাবার দিত। সপ্তাহে তিন দিন সকালে শিশুদের কোথাও ১০০ মিলি দুধ, কোথাও ১০ গ্রাম ‘পুষ্টিকর পানীয়’য়ের গুঁড়ো কোথাওবা এক চামচ সোয়ামিল্কের গুঁড়ো কিংবা ২০ গ্রাম করে পৌষ্টিক ছাতু দেওয়া হত। প্রতিশিশুর সকালের খাবারের জন্য বরাদ্দ ২ টাকা। ভিন্ন প্রথা তুলে দিয়ে সব শিশুকে একই ধরনের খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জেলা সংহত শিশু বিকাশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাসের শেষ থেকেই নিউট্রিমিক্স বা ‘রেডি টু ইট’ খাবার সরবরাহ করার কথা ছিল। সেটা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তখন একদিন অন্তর শিশুদের একটি কলা ও অর্ধেক ডিম সেদ্ধ দেওয়া হচ্ছিল। লকডাউনের আগে পর্যন্ত। প্রশাসনিক আধিকারিকদের আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি খুললে এবার সমস্যা হবে না।