ছাতা মাথায় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ভিড় করলেন মানুষজন। শুক্রবার পাড়া ব্লকের দুবড়ায় প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।
দলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ভরাতে ‘সরকারি সভা: বলে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএম তা নিয়ে প্রশাসনেরও দ্বারস্থ হয়। কিন্তু শুক্রবার বৃষ্টির মধ্যেও পাড়ার দুবড়ায় অভিষেকের সভা দেখল মানুষের মাথার গিজগিজে ভিড়ই। যা দেখে বক্তব্যের শুরুতেই যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বলেই বসলেন, ‘‘প্রাকৃতিক বিপর্যয় উপেক্ষা করে আপনারা এই সভাকে মিনি বিগ্রেডে পরিণত করেছেন।”
যুব তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত মাহাতো দাবি করলেন, ‘‘এ দিন সভায় ভিড় হয়েছিল কম বেশি ৩০ হাজার। সকাল থেকে টানা বৃষ্টি এবং ঈদের আগের শেষ শুক্রবার না হলে এ দিনের সভায় আরও হাজার পাঁচেক লোক বেশি আসত।’’ তবে পুলিশের পরিসংখ্যান, দুবড়ার ফুটবল ময়দানে শুক্রবার অভিষেক বন্দ্যেপাধ্যায়ের সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন হাজার কুড়ি মানুষ।
শহিদ স্মরণে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা করতে শুক্রবার পাড়া বিধানসভার দুবড়ায় এসেছিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক। সঙ্গে ছিলেন গায়ক তথা তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর রাজ্য চেয়ারম্যান ইন্দ্রনীল সেন, অভিনেতা তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি হিরণ চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সন্ধ্যা রায় প্রমুখ। সভার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল দুপুর ১টা। কিন্তু অভিষেক সভায় আসেন দু’ঘণ্টাও পরে বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ। আকাশ ভরা মেঘ, মাঝে মধ্যে বৃষ্টি কিন্তু ভিড় টলাতে পারেনি। দেড়টা থেকে ঠায় বসেছিলেন মানুষজন। মহিলাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
আজ শনিবার রানিবাঁধে আসছেন অভিষেক। তাই সারেঙ্গার পিড়রগাড়ি জঙ্গলে
শুক্রবার গাড়ি থামিয়ে চলল তল্লাশি। ছবি: উমাকান্ত ধর।
বস্তুত এ দিন সকাল থেকেই অঝোরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দুবড়াতে অভিষেকের সভায় উপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে কিছুটা চিন্তিতই ছিলেন তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের জেলা নেতারা। দলের পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পরে অভিষেক এই প্রথম জেলায় কোনও জনসভায় আসছেন। তাই সভা সফল করতে যুব তৃণমূলের পাশাপাশি দলগত ভাবেই উদ্যোগী হয়েছিল তৃণমূলের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিধায়করাও। সভা ভরাতে বিশেষ করে দায়িত্ব ছিল রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউরির। দলসূত্রের খবর, সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে বাসে, গাড়িতে করে নিজের বিধানসভা এলাকার তিনটে ব্লক ও একটি পুরসভা এলাকা থেকে ভাল সংখ্যক লোক নিয়ে যান পূর্ণচন্দ্রবাবু। একই ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন উমাপদ বাউরিও। সভাস্থলে মঞ্চের সামনের মাঠের কিছুটা জুড়ে ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে মেরে কেটে হাজার দশেক লোকের বসার ব্যবস্থা ছিল সেখানে। সভা শুরুর পরে দেখা যায়, ছাউনির বাইরে বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রচুর মানুষ। ভিড় মাঠ ছাপিয়ে পৌঁছেছিল রঘুনাথপুর-সাঁওতালডিহি রাস্তাতেও।
শহিদ স্মরণে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা হলেও আদতে কিন্তু সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কার্যত আগামী বছরের বিধানসভার নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। এ দিন দুবড়ার সভাতে উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায়। তাঁর বক্তব্যে সন্ধ্যাদেবী রাজ্য সরকার গ্রামে-গঞ্জে উন্নয়নমূলক প্রচুর কাজ করছেন বলে দাবি করে আগামী বিধানসভা ভোটে ফের তৃণমূলকেই রাজ্যে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান। কার্যত তাঁরই ধরিয়ে দেওয়া কথাক সূত্র ধরে অভিষেক বলতে শুরু করেন, ‘‘আগামী বিধানসভা ভোটে রাজ্যের ২৯৪টি আসনের সবকটিতেই তৃণমূল জিতবে।’’ তিনি গত চার বছরে রাজ্য সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজের ফিরিস্তি পেশ করেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান গ্রামের পাড়ায়, পুরসভার ওয়ার্ডে ছোট ছোট সভা করে ব্যাপক প্রচার শুরুর জন্য যুব তৃণমূলের কর্মীদের নির্দেশ দেন অভিষেক।