রজতপুরে মোমবাতি মিছিল

লড়াই শেষ, মারাই গেলেন নির্যাতিতা

এই ঘটনায় শোকের ছায়া গ্রামে। জমেছে জমাট ক্ষোভ। কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না নির্যাতিতার বাবা। কোনও রকমে বলেন, ‘‘মেয়েটা তো চলেই গেল। আর যেন কোনও বাবাকে এ রকম করে মেয়েকে হারাতে না হয়।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৫
Share:

রজতপুরে বিজেপির ধিক্কার মিছিল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

টানা কয়েক দিনের লড়াইয়ের পরে এসএসকেএম হাসপাতালে বোলপুরের রজতপুরের নির্যাতিতার মৃত্যু হল। সম্প্রতি ওই তরুণীকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে পড়শি এক যুবকের বিরুদ্ধে। পরিবারের দাবি, তারপরেই মানসিক অবসাদে ওই তরুণী ১১ ডিসেম্বর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সঙ্কটজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে, তারপরে গত বৃহস্পতিবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। রবিবার রাতে অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি হয়। সোমবার ভোররাতে মৃত্যু হয়।

Advertisement

এই ঘটনায় শোকের ছায়া গ্রামে। জমেছে জমাট ক্ষোভ। কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না নির্যাতিতার বাবা। কোনও রকমে বলেন, ‘‘মেয়েটা তো চলেই গেল। আর যেন কোনও বাবাকে এ রকম করে মেয়েকে হারাতে না হয়।’’ দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানিয়েছেন তিনি। ওই তরুণীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত রাজমিস্ত্রি শেখ হাফিজুলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল আগেই। এ দিন তার কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন পরিজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরা। পরিচিত, মেধাবী মেয়ের এমন পরিণতি বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁদের কারও। মৃত্যুর খবর নানা ভাবে ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমতে থাকে নির্যাতিতার বাড়ির সামনে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পথ অবরোধও হয়।

মৃতার দিদি বলেন, ‘‘বরাবরই চাপা স্বভাবের ছিল বোন। সেই জন্যেই হয়তো নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেনি।’’ পরে যোগ করেন, ‘‘এ কোন পরিবেশে বেঁচে রয়েছি আমরা? বোনটাকে আর ফেরত পাবো না। কিন্তু, আর কারও সঙ্গে যেন এমন না হয়, এটুকুই প্রার্থনা করি।’’

Advertisement

নির্যাতিতার উঠোন ছাড়িয়ে এই ঘটনা ছাপ ফেলেছে রাজনীতিতেও। সোমবার সকালে সিপিএমের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্যাতিতার বাড়ি এসে তাঁর বাবা ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন। বীরভূম জেলা বিজেপির সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলও বাড়ি যায়। এ ছাড়াও এসেছিলেন রায়পুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রীতিকণা দাস, অঞ্চল সভাপতি নিখিল বাছাররা। পরে বিকেলে রজতপুর ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে বিজেপি ধিক্কার মিছিল করে। রাতে দেহ পৌঁছয় রজতপুরের বাড়িতে। সেখানে উপছে পড়ে ভিড়।

কলকাতায় সরব হয়েছেন বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি আবার অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তের পরিজনেরা নির্যাতিতার পরিবারকে লাগাতার হুমকি দিচ্ছে। মৃতার দাদাই অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। বরং পরিবারের একাংশে তরফে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ জানানো হয়েছে। মৃতার দাদার দাবি, ‘‘এসএসকেএম-এ আইসিইউয়ের জন্য বারবার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু, হাসপাতাল সেটা না দিয়ে সকলের সঙ্গেই বোনকে রেখে দিয়েছিল।’’ তবে এ ব্যাপারে হাসপাতালের তরফে প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বিজেপি-র তরফে লকেট নির্যাতিতার পবিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও তুলেছেন। কেন এমন অত্যাচারের বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব এখনও চুপ, সেই প্রশ্ন তুলে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সমালোচনাও করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement