‘লকডাউন’-এর সময়ে ‘মাস্ক’ তৈরির প্রশিক্ষণ হুড়ার বগদিসায়। নিজস্ব চিত্র
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা ও সামাজিক পুনর্গঠন সংক্রান্ত পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কেন্দ্রীয় সরকারি রিপোর্টে উঠে এল। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের ‘সিড’ বিভাগ (সায়েন্স ফর ইকুয়ালিটি, এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট) রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে।
করোনা-পরিস্থিতিতে তফসিলি জাতি ও জনজাতির মানুষজন নানা সমস্যার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছেন। তৃণমূল স্তর থেকে তাঁদের মধ্যে সচেতনতা ও প্রতিরোধের জোর তৈরির জন্য কাজ করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রিপোর্টে সেই সংক্রান্ত খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে পুরুলিয়ায় সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ এবং সুন্দরবনে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগরের নিমপীঠ বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির কাজকর্ম।
সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপককুমার কর বলেন, ‘‘২০১৯ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছিয়ে পড়া জনজাতির জীবন জীবিকার মানোন্নয়ন নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব দেয়।। কাজ শুরুর পরেই করোনা-পরিস্থিতি এসে পড়ে। তার মধ্যেও আমরা পিছিয়ে পড়া জনজাতির মধ্যে কাজ করেছি।’’
উন্নয়ন আধিকারিক গুরুদাস মণ্ডল জানান, পরিস্থিতির মোকাবিলা করে কী ভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে তা বোঝানো, করোনা নিয়ে সচেতনতা প্রচার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রচার-সহ নানা কিছু করা হয়েছে। রিপোর্টে সেই সমস্ত কাজই ঠাঁই পেয়েছে। উপাচার্য বলেন, ‘‘সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই কাজ করা গিয়েছে।’’
রিপোর্টে উল্লেখ, ডুমুরডি, খুদিটাঁড়, দামোদরপুরের মতো এলাকায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে কী ভাবে ‘মাস্ক’ উৎপাদন শুরু হয়েছে। তফসিলি জনজাতির মানুষজনকে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিতে ‘হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপ’ কাজে লাগানোর কথাও উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এই সমস্ত কাজের দায়িত্বে ছিলেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান সুব্রত রাহা। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের এই প্রকল্পে আমরা বিভিন্ন দফতরের সহায়তায় কৃষিকাজ, বনৌষধির চাষ, মৎস্যচাষ, আদিবাসী মহিলাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির মতো নানা বিষয়ে কাজ শুরু করি। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পরে, আমরাও আমাদের কাজকর্ম বদলে নিই।’’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক তথা চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, শবর এবং বীরহোড়দের মধ্যে প্রাকৃতিক গাছগাছড়া ব্যবহার করেই প্রাথমিক চিকিৎসা চলে। ওষধির গুণাগুণ প্রকৃত ভাবে কাজে লাগাতে পারলে তা থেকে ফল মিলতে পারে।’’