ফাইল চিত্র।
‘হীরকরাজার দেশে’ ছায়াছবির বড় অংশের শুটিং সত্যজিৎ রায় করেছিলেন পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড় ও আড়শার মিশিরডিতে। সেই সিনেমার উদয়ন পণ্ডিতের ভূমিকায় অভিনয় করা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে জয়চণ্ডী পাহাড় ও মিশিরডিতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। সিদ্ধান্ত হয়েছে, জয়চণ্ডী পাহাড়ে সৌমিত্র ও সত্যজিৎ রায়ের আবক্ষ মূর্তি তৈরি করা হবে। মিশিরডিতে উদয়ন পণ্ডিতের পাঠশালার পুর্ননির্মাণ করে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে।
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৯৮০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল হীরকরাজার দেশে। তাই ওই দিনটিতেই মিশিরডিতে উদয়ন পণ্ডিতের ‘পাঠশালা’র উদ্বোধন করা হবে।’’ তিনি জানান, ছায়াছবিতে উদয়ন পণ্ডিতের পাঠশালা যে ভাবে দেখানো হয়েছে, তেমনটাই তৈরি করা হবে। আর কী করা যায় ভাবা হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের মতামত নেওয়া হবে। তবে জয়চণ্ডী পাহাড়ে সত্যজিৎ ও সৌমিত্রের আবক্ষ মূর্তি কবে বসানো হবে, তা এখনও স্থির হয়নি। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুত মূর্তি বসাতে।”
সৌমিত্রের সঙ্গে পুরুলিয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বাংলা সিনেমার কালজয়ী ছবি ‘হীরকরাজার দেশে’র মাধ্যমে। অভিনেতার মৃত্যুর পরের দিন, সোমবার জয়চণ্ডীতে তাঁর স্মৃতিতে স্মরণসভা করে ‘জয়চণ্ডী পর্যটন উৎসব কমিটি’। জেলা পরিষদের উদ্যোগে আবক্ষ মূর্তি বসানোর বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে পর্যটন কমিটির সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী বলেন, ‘‘খুব ভাল সিদ্ধান্ত। আমারা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব জেলা পরিষদকে।”
তবে শুধু সৌমিত্র ও সত্যজিতের নয়, জয়চণ্ডীতে গুপী ও বাঘার মূর্তি বসানোরও দাবি উঠেছে। কিশোর অবস্থায় জয়চণ্ডীতে শুটিং দেখতে যাওয়া নন্দুয়াড়ার বাসিন্দা সাধনচন্দ্র মিত্র বলেন, ‘‘এখানে এসেছিলেন ‘গুপী গায়েন’ তপেন চট্টোপাধ্যায় ও ‘বাঘা বায়েন’ রবি ঘোষ-ও। প্রয়াত হলেও, দুই অভিনেতারই জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমরা চাইছি, একই সঙ্গে চার জনের আবক্ষ মূর্তি জয়চণ্ডীতে বসাক জেলা পরিষদ।”
জয়চণ্ডীকে ‘হীরক রাজ্য’ বলেই তুলে ধরছে পর্যটন উৎসব কমিটি। স্থানীয় বাসিন্দা সুপ্রিয় রায় বলেন, ‘‘যে কোনও রাজ্যেই প্রবেশ পথে একটা তোরণ থাকে। জয়চণ্ডী পাহাড়ে ঢোকার মূল রাস্তায় ‘হীরক রাজ্য’ নামের তোরণ করা হোক।” স্থানীয়দের আরও দাবি, পাহাড়ের যে গুহায় উদয়ন পণ্ডিত লুকিয়ে ছিলেন, সেখানে ফলক বসাক জেলা পরিষদ।
পর্যটন উৎসব কমিটির সদস্যদের একাংশের কথায়, জয়চণ্ডীপাহাড়ে প্রচুর পর্যটক আসেন। এই কাজগুলি করলে তাঁরা নতুন ভাবে জয়চণ্ডীকে চিনবেন। তবে এ বিষয়ে তাঁরা রঘুনাথপুর পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন সভাধিপতি।
সুজয়বাবু বলেন, ‘‘মিশিরডিতে উদয়ন পণ্ডিতের পাঠশালা পুড়িয়ে দেওয়া একটা রূপক। সেই পাঠশালা নতুন করে তৈরি করে আমরা একটা নির্দিষ্ট বার্তা দিতে চাইছি। এ ছাড়া, এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছেও ওই পাঠশালা অন্যতম দ্রষ্টব্য হয়ে উঠবে।’’
জেলা পরিষদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মিশিরডিতে হীরক রাজ্যের প্রহরীর ভূমিকায় অভিনয় করা পুরুলিয়ার বাসিন্দা অনুপ মুখোপাধ্যয়। তিনি বলেন, ‘‘মিশিরডিতেই ‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খানখান’ স্লোগান দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছিল হীরক রাজার মূর্তি। খুব ভাল হয়, মিশিরডিতে যদি হীরক রাজার একটা মূর্তি তৈরি করা হয়।’’ সে সময়ে সাইকেলে মিশিরডিতে শুটিং দেখতে যেতেন পুরুলিয়ার বাসিন্দা নাট্যশিল্পী সুদিন অধিকারী। তাঁর কথায়, ‘‘খুব ভাল ভেবেছে জেলা পরিষদ। এ সব তৈরি করা হলে পুরুলিয়ায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নতুন করে আবিষ্কার করবে আগামী প্রজন্ম।’’