ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক প্রৌঢ়াকে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিল গ্রামের কয়েকজন। তারপর স্বামীর সঙ্গে গত তিনমাস ধরে গ্রামছাড়া ওই দম্পতি। এমনই অভিযোগ জানিয়ে ছাতনা থানায় বৃহস্পতিবার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই দম্পতি। ছাতনা থানার হাসাবাউড়ি গ্রামের ঘটনা। রাতেই পুলিশ গ্রামে গিয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে। বিষয়টি মীমাংসা করতে শুক্রবার অভিযুক্তদের সঙ্গে ওই দম্পতিকে নিয়ে একটি আলোচনায় বসে পুলিশ।
অভিযোগকারী দম্পতি হিরামণি মুর্মু ও রঘুনাথ মুর্মুর অল্পকিছু জমি রয়েছে। তাতেই চাষাবাদ করে তাঁরা সংসার চালান। বছর খানেক আগে তাঁদের একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কিছু পড়শির সঙ্গে তাঁদের বিবাদ ছিল। অভিযোগ, তিনমাস আগে হিরামণিদেবীকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করে গ্রামের কয়েক জন। এই ঘটনায় ভয় পেয়ে ওই দম্পতি গ্রাম ছেড়ে বাঁকুড়া সদর থানার বড়চাকা গ্রামে ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। হিরামণিদেবীর ক্ষোভ, “গ্রামের কিছু লোক আমাদের দেখতে পারত না। ঝগড়া করত। ডাইনি অপবাদ দিয়ে একদিন ওরা আমাকে বলল দেড়লক্ষ টাকা না দিলে মারধর করা হবে। তাই ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।”
পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতি ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সকলেই তাঁদের আত্মীয়। যাতে সুস্থ ভাবে ওই দম্পতি গ্রামে ফিরে যেতে পারেন তার জন্য দু’পক্ষকে নিয়ে এ দিন বিকেলে বৈঠকে বসে পুলিশ। বিষয়টির উপরে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন ছাতনা বিডিও সুতপা নস্করও। ব্লক প্রশাসনের তরফে ওই গ্রামে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সুতপাদেবী বলেন, “ঘটনাটির উপরে আমাদের নজর রয়েছে। দম্পতিকে গ্রামে ফিরিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পুলিশের সঙ্গে আমরা সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছি।” তবে গ্রামে পুলিশ যাওয়ার পরেই অভিযুক্তেরা ভয় পেয়ে গিয়েছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন এ দিন দাবি করেন, “জমিজমা নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু ডাইনি অপবাদ দেওয়া বা জরিমানা করে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ ঠিক নয়। ওঁরা নিজেরাই গ্রাম ছেড়ে গিয়েছেন।”
হাসিপাহাড়ি গ্রামটি ছাতনা ব্লকের ঘোষেরগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। গ্রামটি আদিবাসী অধ্যুষিত ও শিক্ষার হারও কম বলে জানাচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান কালাচাঁদ মুর্মু। তিনি বলেন, “গ্রামে দু’একটি ঘর ছাড়া শিক্ষিত পরিবার তেমন নেই। এলাকার পঞ্চায়েত প্রতিনিধিকে গ্রামের পরিবেশের উপরে নজর রাখতে বলেছি। আমি নিজেও গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কেউই ওই দম্পতিকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রাম ছাড়া করা বয়েছে বলে মানতে চাননি।”