অচলাবস্থা কাটুক, দাবি বিক্ষুব্ধদের

যাঁদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে ঘিরে ঝালদা পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, এ বার সেই বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলররাই প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন। দাবি করলেন, যে ভাবে হোক অচলাবস্থা কাটিয়ে পুরসভায় উন্নয়নের কাজ হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০৩:০৫
Share:

যাঁদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে ঘিরে ঝালদা পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, এ বার সেই বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলররাই প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন। দাবি করলেন, যে ভাবে হোক অচলাবস্থা কাটিয়ে পুরসভায় উন্নয়নের কাজ হোক। বৃহস্পতিবার ঝালদার মহকুমাশাসকের কাছে তাঁরা এই দাবি রাখেন।

Advertisement

ঝালদার তৃণমূল পুরপ্রধান সুরেশ অগ্রবালের বিরুদ্ধে তাঁর দলেরই কয়েকজন কাউন্সিলর বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনাস্থা চেয়ে মহকুমাশাসককে চিঠি দেন ৫ মে। তারপর প্রায় তিন সপ্তাহ পার হতে চলল, কিন্তু অনাস্থা সংক্রান্ত তলবিসভা নিয়ম অনুযায়ী যাঁদের ডাকার কথা তাঁরা কেউ ডাকেননি। রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই অনাস্থার বিরুদ্ধে। অনাস্থা রুখতে বারবার বৈঠক করছেন। ফলে অনাস্থা আনতে চাওয়া তৃণমূল কাউন্সিলরদের প্রকাশ্যে তলবি সভা দ্রুত করার দাবি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রশাসনকে দিয়ে অনাস্থার পক্ষে পদক্ষেপ করার জন্য কৌশলে অচলাবস্থা ঘোচানোর নামে স্মারকলিপি দেওয়ার এই কর্মসূচি নেওয়া হয়।

পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব এলে ১৫ দিনের মধ্যে পুরপ্রধানকে তলবিসভা ডাকতে হয়। তা না হলে তার সাত দিনের মধ্যে উপপুরপ্রধান তলবিসভা ডাকবেন। তাও যদি না হয়, তখন তিন দিনের মধ্যে অনাস্থা যাঁরা এনেছেন, তাঁরাই তলবিসভা ডাকবেন। তাতেও না হলে প্রশাসন পদক্ষেপ করে। এখানে পুরপ্রধান ওই সভা ডাকেননি। উপপুরপ্রধান অনাস্থার পক্ষে হলেও দলের সম্মতি না থাকায় তিনি নিজেও তলবিসভা ডাকতে পারেননি। এ বার বাকি বিক্ষুব্ধেরা কী করেন, সে দিকেই তাকিয়ে ঝালদা।

Advertisement

যদিও বিক্ষুব্ধরা মহকুমাশাসককে এ দিন জানিয়ে এসেছেন, পুরপ্রধান নিয়মিত পুরসভায় আসছেন না। এর ফলে পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরির কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা আটকে রয়েছে। এ ছাড়া পুরপ্রধান পুরসভার কিছু নথি নিজের হেফাজতে রাখায় কিছু ক্ষেত্রে পুরসভার কাজে প্রভাব পড়ছে বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন।

কংগ্রেস পুরভোটে ঝালদার দখল নেয়। কিন্তু কংগ্রেস ও বাম দলগুলির কয়েকজন কাউন্সিলর তৃণমূলে চলে আসায় ঝালদা শাসকদলের পরিচালনায় চলে আসে। পুরপ্রধান হন সুরেশবাবু। ৫ মে পুরসভার ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৯ জন কাউন্সিলর পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থার চিঠি দেন। অনাস্থার পক্ষে স্বাক্ষর করা কাউন্সিলরদের মধ্যে যেমন তৃণমূলের কাউন্সিলর আছেন, তেমনই বিরোধী কংগ্রেস, সিপিএম, ফব-র কাউন্সিলরেরাও রয়েছেন। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, ওই চিঠি জমা পড়ার পর থেকে পুরপ্রধান পুরসভায় আসছেন না। এলেও কালেভদ্রে। বিষয়টি দলের জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েও অচলাবস্থা কাটানো যায়নি।

তৃণমূলের ঝালদা শহর কমিটির কার্যকরী সভাপতি তথা পুরসভার কাউন্সিলর প্রদীপ কর্মকারও অনাস্থার চিঠি সই করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘বড়বাবু দীর্ঘদিন ছুটিতে রয়েছেন। পুরপ্রধান কেন আসছেন না তাও আমরা জানি না।’’ উপপুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠকও পুরপ্রধানের বিপক্ষে। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এই অচলাবস্থা কাটাতেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি আমরা।’’

সুরেশবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ব্যক্তিগত কিছু অসুবিধার কারণে নিয়মিত পুরসভায় যেতে পারছি না। তবে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। কোনও নথিই বাড়িতে আনিনি।’’ বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলর তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন পুরপ্রধান মধুসূদন কয়াল বলেন, ‘‘তৃণমূল নিজেরাই বলছে পুরসভা অচল। আমরাই এ বার দেখি কী করা যায়।’’

মহকুমাশাসক (ঝালদা) সন্দীপ টুডু বলেন, ‘‘কাউন্সিলরদের বক্তব্য আমি জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement