ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে টাকা। নিজস্ব চিত্র
শংসাপত্র দিতে টাকা পড়ুয়াদের থেকে ‘মিষ্টি খেতে’ টাকা নেওয়ার ঘটনায় স্কুলের বিরুদ্ধে তদন্তে নামল বাঁকুড়া জেলা শিক্ষা দফতর। জেলা শিক্ষা দফতরের নির্দেশে ওই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁকুড়া মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল। সোমবারই পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় টাকা।
সোমবার বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক গৌতম মালের নেতৃত্বে শিক্ষা দফতরের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্কুলে যায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি অবিলম্বে প্রতিটি পড়ুয়াকে ওই টাকা ফেরতের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরই পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘মিষ্টি খাওয়ার’ জন্য নেওয়া ওই টাকা।
সোমবার স্কুলে প্রধান শিক্ষক সাধন চন্দ্র ঘোষ না থাকায় ওই তিন আধিকারিক কথা বলেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সমীর আঠার সঙ্গে। কার অনুমতিতে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের কাছ থেকে এ ভাবে টাকা নেওয়া হল সে বিষয়টি খতিয়ে দেখেন তাঁরা। অবিলম্বে পড়ুয়াদের ওই টাকা ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলা স্কুল পরিদর্শক । বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক ( সেকেন্ডারি ) গৌতম মাল বলেন, “ অভিযোহ পাওয়ার পরই আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওা হয়েছিল। তিনি সেই নোটিশের উত্তর দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আজ আমরা স্কুলে এসেছিলাম । যে ১১২ জন পড়ুয়ার কাছ থেকে এই টাকা নেওয়া হয়েছিল তাদের অবিলম্বে টাকা ফেরত দিয়ে করে বুধবারের মধ্যে শিক্ষা দফতরে রিপোর্ট করার জন্য স্কুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ টাকা নিতে পারে না। এই ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট রাজ্যে পাঠানো হবে।’’
গত শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণদের মার্কশিট দেওয়ার পাশাপাশি স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বাঁকুড়া মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে মার্কশিট এবং স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট এক সঙ্গে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। গত শনিবার ওই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণরা ওই শংসাপত্র আনতে গেলে তাঁদের ‘মিষ্টি খাওয়ার’ জন্য মাথা পিছু ৫০ টাকা করে দাবি করা হয। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০৪ জন উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণর মধ্যে ১১২ জন মাথা পিছু ৫০ টাকা করে দিয়ে শংসাপত্র নেন। তা নিয়ে গোলমাল বাধে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে স্কুল শিক্ষা দফতরও।
পড়ুয়াদের কাছ থেকে জোর করে এই টাকা নেওয়ার ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবি তুলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে বিক্ষোভ দেখায় ওই ছাত্র সংগঠনটি।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনিই সংগ্রহ করেছিলেন। এখন তিনিই ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এ ভাবে পড়ুয়াদের কাছে টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ জানাব আমরা। প্রধান শিক্ষক আমাদের কেন কলঙ্কিত করলেন তা স্টাফ কাউন্সিলের সভায় আমরা জানতে চাইব।’’