শেষ মুর্হূতের প্রস্তুতি। বাঁকুড়ার সার্কিট হাউস।
মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন বৈঠকে পুরুলিয়া জেলার সব বিডিও থাকলেও সম্ভবত হাজির থাকতে পারছেন না পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা। আজ, সোমবার পুরুলিয়া জেলা পরিষদের হলে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে উন্নয়ন পর্যালোচনা বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তারা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন দফতরের আধিকারিক এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষেরা উপস্থিত থাকছেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা এই বৈঠকে থাকছেন না বলেই রবিবার বিকেল অবধি জানা গিয়েছে।
পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে রবিবার সন্ধ্যায় নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোটে বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্রে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শেষ এই জেলায় এসেছিলেন। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে। সেই সমস্ত প্রকল্পগুলি কোন অবস্থায় রয়েছে তা পর্যালোচনা করতেই পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক করবেন।” কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন বৈঠকে ডাক না পাওয়ায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা হতাশ। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও একান্তে তাঁদের কয়েক জনের বক্তব্য, নিচুতলায় থেকে তাঁরাও উন্নয়নের কাজই করছেন। তবু তাঁরা এই বৈঠকে ব্রাত্য। জেলার একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে জানিয়েছেন। জানানো হয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কেও।
পুরুলিয়ায় জেলা পরিষদের সভাগৃহ।
পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী সীমা বাউরির খেদ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেলায় বৈঠক করতে আসেন, আমরা সেই বৈঠকে থাকতে পারি না। অথচ আমরাও তো নিচুতলায় উন্নয়নের কাজটাই করছি! মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে থাকতে পারলে আমরা অনেক কিছু জানতে পারতাম। কিন্তু কখনওই আমাদের এ ধরনের বৈঠকে ডাকা হয় না। কেন এ ধরনের বৈঠক থেকে আমাদের বাদ রাখা হয়, তা দুই মন্ত্রীকে জানিয়েছি। রবিবার বিকেল অবধি জানি না আমরা বৈঠকে থাকতে পারব কিনা।’’ একই সুরে বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা বৈঠকে ডাক পাইনি। কেন পাইনি জানি না।’’ কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার কথায়, ‘‘আমরা উন্নয়নেরই কাজ করছি। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে হাজির থাকার সুযোগ হলে আমরা আরও প্রেরণা নিয়ে কাজ করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে থাকার সুযোগ দেওয়া হয় না।’’
নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণ প্রসাদ যাদব আরও খোলাখুলি বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেলায় উন্নয়নের বৈঠকে আসছেন। অথচ আমরা ব্রাত্য। বিডিও-রা পঞ্চায়েত সমিতির সচিব হিসেবে কাজ করেন। আমাদের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে, বিডিওরা থাকলে সভাপতিরা নয় কেন?’’ তিনি জানান, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও শান্তিরাম মাহাতোকে বলার পাশাপাশি বিষয়টি জানানো হয়েছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোকেও। রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউরিকেও জানিয়েছেন শান্তিভূষণবাবু।
সৃষ্টিধরবাবু বলেন, ‘‘সভাপতিরা উন্নয়নের কাজ দেখভাল করছেন, এটা ঠিক। যে কাজগুলি চলছে, সেগুলির পর্যালোচনার জন্যই বৈঠক। যেহেতু কাজগুলি বিডিও-দের গোচরে থাকে, তাই তাঁদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। তবে সভাপতিদেরও বৈঠকে ডাকা হলে ভালই হত।’’ আর শান্তিরামবাবুর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘কথা বলে দেখছি।’’
এ দিকে পঞ্চকোটে মুখ্যমন্ত্রীর রাত্রিবাস নিয়ে কার্যত সাজোসাজো রব পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে। সে জন্য শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্রে পর্যটকদের বুকিং নেওয়া হয়নি বলে নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্রের পাশেই বন দফতরের বাংলোও তৈরি রাখা হয়েছিল। ঘন জঙ্গলে ঘেরা পঞ্চকোট পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রী রাত্রিবাস করায় কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকা। এ দিন সকাল থেকেই নিতুড়িয়ায় উপস্থিতি ছিলেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার-সহ জেলার পদস্থ পুলিশ কর্তারা। দুপুরের দিকে নিতুড়িয়ায় পৌঁছন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা ও ডিআইজি বিশাল গর্গ। পুরুলিয়ায় বৈঠক সেরেই মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়ায় সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন। কাল মঙ্গলবার রাইপুরে তিনি প্রশাসনিক জনসভা করবেন।
রবিবারের নিজস্ব চিত্র।