কবিতা ও বাউল সুরে মেতে, এ বারও ১৪০০ পত্রিকা স্টল

সেই কবেই যেন শান্তিনিকেতন পৌষ মেলায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে ১৪০০ সাহিত্য পত্রিকার স্টল।

Advertisement

অরুণ মুখোপাধ্যায়

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৬
Share:

রং মিলিয়ে কেনাকাটি। শনিবার পৌষমেলায় ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

সেই কবেই যেন শান্তিনিকেতন পৌষ মেলায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে ১৪০০ সাহিত্য পত্রিকার স্টল।

Advertisement

রাজ্যের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক, বিশেষ করে কবিরা দল বেঁধে ফি বছর আসেন এখনও। মেলার তিন দিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে কবিতা পাঠ। সঙ্গে বাউল গান। আর তুমুল আড্ডা। এসব নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্টলের বয়স চব্বিশ বছর।

‘‘শান্তিনিকেতনের মেলাতে সাহিত্য চর্চার জন্য এখনও মেলা কর্তৃপক্ষ কিছু ভাবেনি। সেই অভাব পূরণ করেছে ১৪০০ সাহিত্য পত্রিকার স্টল।’’ বলেছেন, বর্ষিয়ান বাউল কবি, হুগলির হিন্দমোটরের বাসিন্দা অরুণ চক্রবর্তী। হুগলির আরামবাগের লিটিল ম্যাগাজিন কর্মী ও বিশিষ্ট ছড়াকার সাধন বারিক বলেছেন , “আমি প্রতি বছর এই মেলায় আসি। ছড়া পড়ি, তারপরে অন্যদের ছড়া, কবিতা বাউল গান শুনি ১৪০০ স্টলে বসে। তিনদিন নিশ্চিন্তে রাত্রিবাস করি এই স্টলেই।’’

Advertisement

কত মানুষের আসা যে এই স্টলকে ঘিরে। আমোদপুরের রসিক দাস বাউল শুক্রবার মেলা কমিটির মূল মঞ্চে একটি মাত্র গান করার সুযোগ পান। পরে ১৪০০ স্টলে এসে অনেকগুলি গান করেছেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “মূল মঞ্চে একটি মাত্র গান গেয়ে তৃপ্তি হয় না। গানের খিদে মেটে ১৪০০ স্টলে গান গেয়ে।” একই বক্তব্য শান্তিনিকেতনের প্রবীণ বাউল তরুণ খ্যাপার। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যে প্রায় দশ হাজার বাউল আছেন। মেলার মূল মঞ্চে তিনদিন বাউল গান গাওয়ার সুযোগ পান বড় জোর চল্লিশ পঞ্চাশ জন বাউল শিল্পী। অনেক বাউল আমন্ত্রণই পান না। সেই সব বাউলেরা মেলায় প্রাণ ভরে গান করে ১৪০০ স্টলে এসে।”

বরাবরই বিশিষ্ট মানুষের উপস্থিতিতে গৌরব বেড়েছে ১৪০০ স্টলে। বলেছেন, ১৪০০ পত্রিকার সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন একবার মেলায় ১৪০০ স্টলের উদ্বোধন করেছেন। বিশিষ্ট নাট্যকার বাদল সরকার তাঁর টিম নিয়ে এসে এই স্টলেই নাটক করে গিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর দু’বছর আগে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রখ্যাত মঞ্চ শিল্পী খালেদ চৌধুরী। এই স্টলেই জাপানের কাজু আজুমি বাউল গান গেয়েছেন। প্রয়াত বাউল কবি সাহিত্যিক আশানন্দন চট্টরাজ যতদিন জীবিত ছিলেন কাঁধে বড় ব্যাগ নিয়ে তিন দিনের জন্য চলে আসতেন পৌষ মেলায়। সন্ধ্যে থেকেই ১৪০০ স্টলে আস্তানা নিতেন। নিজের লেখা ছড়া পড়তেন গান করতেন। অন্যদের ছড়া, কবিতা গান মন দিয়ে শুনতেন। মেলার মধ্যে এটা ওটা খেয়ে এসে এই স্টলেই রাত্রিযাপন করতেন।’’

স্টলকে ঘিরে কত স্মৃতি! স্মৃতিচারণ করতে করতে আবেগ ঝরে পড়ে প্রদীপবাবুর গলায়। এ বার ১৪০০ পত্রিকার ২৪ বছর পূর্তি সংখ্যা বেরিয়েছে পৌষ মেলায়।

এমন স্টলের সংখ্যা কমছে। অনেক আগে কলকাতার কবিকন্ঠ পত্রিকা গোষ্ঠী বেশ কয়েক বছর পৌষ মেলায় স্টল দিয়েছিল। সেখানে তিন দিন ধরে কবিতা পাঠের আসর বসত। তার স্মৃতি বলতে গিয়ে বীরভূমের বাসিন্দা, কবি আদিত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সে ছিল একদিন। আমি, আমার কয়েকজন বন্ধু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়,জয় গোস্বামী একই আসরে কবিতা পড়েছি। এখন ১৪০০ স্টলই সাহিত্য সংস্কৃতির মিলন ক্ষেত্র।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement