এক রাতেই পুরুলিয়ায় ধৃত ২০০, বাঁকুড়ায় ৭১

হুমকি দিচ্ছে বহিরাগতরা, নালিশ

এতদিনের সুনাম এ বার কি অক্ষুন্ন থাকবে? নির্বাচনে অশান্তির আবহ থেকে বরাবর দূরেই থেকেছে পুরুলিয়া। কিন্তু এ বার প্রচারের গোড়া থেকেই শহরের একের পর এক রাজনৈতিক ঝুটঝামেলা লেগে থাকায় আশঙ্কায় পুরবাসী। পুলিশও স্বস্তিতে নেই। রবিবার রাতেই বিভিন্ন অভিযোগে যুক্ত অভিযোগে সারা জেলা থেকে প্রায় ২০০ জনকে গ্রেফতার করেছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় রুটমার্চ শুরু করেছে পুলিশ বাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৮
Share:

পুরুলিয়া শহরে এখন টহল চললেও ভোটের দিন দেখা মিলবে তো বাহিনীর? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। —নিজস্ব চিত্র।

এতদিনের সুনাম এ বার কি অক্ষুন্ন থাকবে? নির্বাচনে অশান্তির আবহ থেকে বরাবর দূরেই থেকেছে পুরুলিয়া। কিন্তু এ বার প্রচারের গোড়া থেকেই শহরের একের পর এক রাজনৈতিক ঝুটঝামেলা লেগে থাকায় আশঙ্কায় পুরবাসী। পুলিশও স্বস্তিতে নেই। রবিবার রাতেই বিভিন্ন অভিযোগে যুক্ত অভিযোগে সারা জেলা থেকে প্রায় ২০০ জনকে গ্রেফতার করেছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় রুটমার্চ শুরু করেছে পুলিশ বাহিনী। অবাধ নির্বাচনের বিভিন্ন পরিকল্পনাও তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেলা পুলিশ কর্তারা।

Advertisement

গত লোকসভার মতো এ বারও অশান্তির ভয় করছেন সোনামুখী শহরের বাসিন্দাদের একাংশ। এখন থেকেই সেখানে শাসকদলের বহিরাগতরা হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা। পুলিশের একাংশও মেনে নিয়েছেন সোনামুখীতে বহিরাগতদের ঘোরাঘুরি তাদেরও নজরে এসেছে। জেলার পুলিশ কর্তারা আশ্বাস দিলেও নির্বচনে বহিরাগতদের কতটা ঠেকানো যাবে তা নিয়ে খোদ সংশয়ে নিচুতলার পুলিশ কর্মীরাই। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, শাসকদলের অঙ্গুলি হেলনে কর্তাদের কেউ কেউ পুলিশ কর্মীদের বসিয়ে রাখবে না তো? কারণ কলকাতা নির্বাচনের দিনভর পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠার পরে বিকেলে পুলিশ কর্মীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা সুদূর রাঢ়বাংলার পুলিশ কর্মীদেরও ভাবিয়ে তুলেছে।

গত কয়েকদিনের মধ্যে পুরুলিয়া শহরে কয়েক দফায় বিজেপির অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেসের প্রার্থীকে মারধরেও অভিযোগ উঠেছে। শাসকদলেরও প্রার্থীকে পাল্টা মারধর করা থেকে পতাকা, ফেস্টুন ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই শহরে। বিরোধীরা তো বটেই এখানে এ বার দলের একসময়কার নেতা-কর্মীরা নির্দল প্রার্থী হয়ে গোঁজ হয়ে ওঠায় শাসকদলও স্বস্তিতে নেই। তারই মধ্যে বিক্ষিপ্ত গোলমালে গরগরম পুরুলিয়ার পুরভোট।

Advertisement

এই অবস্থায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট করানোকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে দাবি করেছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে শুরু হয়ে দিয়েছে কমান্ডো বাহিনীর রুটমার্চ। সকাল-বিকেলই নয়, নির্জন দুপুরে বা রাতেও উত্তেজনা প্রবণ এলাকাগুলিতে শুরু হয়েছে টহল। বিশেষত যে এলাকাগুলিতে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে বা যে এলাকাগুলিতে উত্তেজনা রয়েছে সেইসব জায়গায় বাড়তি নজর রাখছেন জেলা পুলিশের আধিকারিকেরাও। কলকাতার ভোটের পরে রবিবার রাতে জেলা জুড়ে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার নিজে এই অভিযানে থেকেছেন সারারাত। তিনি বলেন, ‘‘এ দিনের অভিযানে ২০০-র বেশি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযান চলবে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথপুরে ও ঝালদায় ভোট সংক্রান্ত অশান্তির কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা না পড়লেও পুরুলিয়ায় ছ’টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তারমধ্যে পাঁচটি অভিযোগের ক্ষেত্রে মামলা শুরু করেছে পুলিশ। যদিও ওই ঘটনায় একজনকেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। আর একটি অভিযোগ ছিল তৃণমূলের নামে একটি বিতর্কিত প্রচারপত্রকে ঘিরে। তদন্ত করে পুলিশ ওই প্রচারপত্রের প্রকাশক কে তার হদিশ করতে পারেনি। তাই এই অভিযোগকে ঘিরে কোনও মামলা রুজু করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, বাকি মামলাগুলির অধিকাংশ ক্ষেত্রে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীদের নামে মামলা হয়েছে। সব ক’টি ক্ষেত্রেই তদন্ত চলছে।

তবে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের একটি ক্যাম্প অফিস পোড়ানো হচ্ছে, ভাঙচুর করা হচ্ছে, আমাদের কর্মীর বাবাকে মারধর করা হচ্ছে— গোলমাল তো থেমে নেই। দোষীদের গ্রেফতার না করলে তারা তো প্রশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানাচ্ছি মানুষকে নিজের ভোটটা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।’’ জেলা কংগ্রেস সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতোরও আশঙ্কা, ‘‘কোনওদিন পুরুলিয়ায় ভোট ঘিরে অশান্তি হয়নি। বরং এখানে উল্টো ছবিই দেখা যেত। কিন্তু এ বার আমাদের একটি ক্যাম্প থেকে পতাকা, ব্যানার ইত্যাদি খুলে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি গোলমাল হয়েছে। ভোটটা শান্তিতে কাটুক সেটাই চাই।’’ বামফ্রন্টের পুরুলিয়া জেলা কমিটির আহ্বায়ক মণীন্দ্র গোপ আবার প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কার কাছে আর্জি জানাব? রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরে আমাদের কোনও আস্থা নেই। এই গুন্ডামি মানুষ বেশিদিন সহ্য করবেন না। মানুষই আমাদের ভরসা।’’ জেলা তৃণমূল নেতা নবেন্দু মাহালি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘এখানে শান্তির আবহেই এতদিন ভোট হতো। এ বারও সে ভাবেই ভোট হবে। বিজেপি ও সিপিএমের কিছু লোক অশান্তি পাকাতে চাইছে। তারা সফল হবে না। প্রশাসন সজাগ রয়েছে।’’

বাঁকুড়া নিয়ে বিরোধীদের বিশেষ অভিযোগ না থাকলেও সোনামুখী ও বিষ্ণুপুরে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের মার্কামারা দুষ্কৃতীদের এলাকায় ঢোকাচ্ছে। তারা বামপ্রার্থী ও সমর্থকদের এলাকায় হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কিছুই করছে না।’’ বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি সুভায সরকারেরও অভিযোগ, ‘‘সোনামুখী ও বিষ্ণুপুর নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছি আমরা। সোনামুখীর বিধায়ক নিজে ছাপ্পা ভোটে জড়িত। ওখানে ইতিমধ্যেই বহিরাগতদের ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। বিষ্ণুপুরেও ইতিমধ্যেই সন্ত্রাস শুরু করেছে শাসক দল।’’ যদিও গত লোকসভা ভোটে এলাকার যে বিধায়ক দীপালি সাহার বিরুদ্ধে বুথে হামলা চালিয়ে ছাপ্পা মারার অভিযোগ উঠেছিল, তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই বিরোধীরা এখন থেকেই ও সব গান শুরু করেছে।’’ তবে পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার অভিযান চালিয়ে বাঁকুড়া সদর থানায় ৩০ জন, বিষ্ণুপুর থানার ২৬ জন ও সোনামুখী থানায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমারের দাবি, ‘‘পুলিশ পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement