গানের অ্যালবাম প্রকাশ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিকে) বিশ্বভারতীর তৎকালীন উপাচার্য সুজিত বসু ও সন্জীদা খাতুন (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
“গান তাঁর জীবিকা নয়, গান তাঁর জীবন....’’। কবি শঙ্খ ঘোষ যাঁকে নিয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন, মঙ্গলবার দুপুরে প্রয়াত হয়েছেন বাংলাদেশের সঙ্গীত ও সংস্কৃতি জগতের সেই ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুন। গান ও পড়াশোনার সূত্রে শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ। এ দিন বিকেলে তাঁর মৃত্যুসংবাদ শান্তিনিকেতনে পৌঁছতে শোকের ছায়া নেমে আসে বিশ্বভারতী জুড়ে। শোকস্তব্ধ শান্তিনিকেতনের শিল্পীজগৎ, বিশ্বভারতীর শিক্ষক, কর্মী, পড়ুয়া—সকলেই।
এ দিন দুপুরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু সন্জীদার। মৃত্যুর সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দীর্ঘজীবনের একটি অংশ তিনি কাটিয়েছেন বিশ্বভারতীতে। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢাকা থেকে ১৯৫৪-৫৫ সালে শান্তিনিকেতনে পড়তে আসেন সন্জীদা। ভর্তি হন বাংলা বিভাগে। বিশ্বভারতী থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। পরে এখান থেকেই পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি সংগীতচর্চা চালিয়ে গিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনদের মতো প্রখ্যাত শিল্পীদের। পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশের ফিরে গিয়ে শুরু হয় তাঁর রবীন্দ্র সঙ্গীতের চর্চা ও প্রসারের কাজ। 'ছায়ানট' সংগঠনটি তৈরি করে মৌলবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করেন সন্জীদা। তবে শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান অটুট থেকে গিয়েছে। বিশ্বভারতী সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তম পুরস্কারে পান এই কিংবদন্তি শিল্পী। এ দিন সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তাঁর চলে যাওয়ায় সমগ্র রবীন্দ্রসংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভীষণ ক্ষতি হয়ে গেল। এই সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে তাঁর অবদান ইতিহাসে থেকে যাবে।”
বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের প্রধান মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী, 'দেশিকোত্তম' ভূষিত এমন শিল্পীর প্রয়াণে আমরা আত্মীয়-বিয়োগের বেদনা অনুভব করছি। ‘ছন্দের জাদুকর' সত্যেন্দ্রনাথ দত্তকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যের গবেষণা করেছিলেন সন্জীদাদি। বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের প্রথম বিভাগীয় প্রধান, ছান্দসিক প্রবোধচন্দ্র সেন ছিলেন তাঁর ছন্দচর্চার গুরু। তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত-আন্দোলনের ক্ষেত্রে। বর্তমানে বাংলাদেশ যে সাংস্কৃতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলেছে, সে সময়ে সন্জীদা খাতুনের মতো আলোকস্তম্ভটির আলো নিভে যাওয়া সুস্থ ও মুক্তবুদ্ধির মানুষদের জন্য নিদারুণ দুঃসংবাদ।”
বিশ্বভারতী ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, “উনি বিশ্বভারতীর পরিবারেই এক জন ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে আমরা মর্মাহত। তাঁকে বিশ্বভারতীর তরফেও শ্রদ্ধা জানানো হবে। ”