গণপিটুনি-কাণ্ডে ক্ষোভ বাড়ছে

ধরা পড়েনি কেউ, চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে

সাইকেলে বিষ্ণুপুরের হাঁড়িপাড়া দিয়ে যাওয়ার সময় সোমবার সন্ধ্যায় দলমাদল রোডের বাসিন্দা সৌম্যর সাইকেলের ধাক্কায় এক শিশু পড়ে যায়। অভিযোগ, সৌম্য শিশুটিকে মাটি থেকে তুলতে গেলে উল্টে তাকেই ছেলেধরা বলে সন্দেহ করে এলাকার লোকজন চড়াও হন। বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে তাঁকে বেদম মারধর করা হয়। পুলিশই তাঁকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০০:২১
Share:

গণপিটুনির তিন দিন পেরেও কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের তদন্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন বিষ্ণুপুরের কিছু বাসিন্দা। বিএড পড়ুয়া সৌম্যপ্রসাদ দে কে ছেলেধরা সন্দেহে যারা বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করেছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার গণস্বাক্ষর করা ওই চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ছাড়া হয়েছে। তাঁরা চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘বিষ্ণুপুরবাসী হিসেবে পুলিশ প্রশাসনের কার্যকলাপে মর্মাহত’। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদার বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের ছবি ‘ভাইরাল’ হয়ে যাওয়ায় তারা গা ঢাকা দিয়েছে। তাই ওদের খোঁজ পেতে অসুবিধা হচ্ছে।’’

Advertisement

সাইকেলে বিষ্ণুপুরের হাঁড়িপাড়া দিয়ে যাওয়ার সময় সোমবার সন্ধ্যায় দলমাদল রোডের বাসিন্দা সৌম্যর সাইকেলের ধাক্কায় এক শিশু পড়ে যায়। অভিযোগ, সৌম্য শিশুটিকে মাটি থেকে তুলতে গেলে উল্টে তাকেই ছেলেধরা বলে সন্দেহ করে এলাকার লোকজন চড়াও হন। বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে তাঁকে বেদম মারধর করা হয়। পুলিশই তাঁকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে। সেই থেকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ভর্তি। ওই ঘটনায় সে দিনই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়। বুধবার সুনির্দিষ্ট ভাবে আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন সৌম্যর বাবা তীর্থপ্রসাদ দে।

তিনি এ দিন বলেন, ‘‘চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে সৌম্য। সামান্য খাবার মুখে তুলেছে। তবে কথা বলার অবস্থায় নেই। ডাক্তাররা নজরে রাখছেন।’’ একই সঙ্গে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এখনও অবধি একজনও দোষী ধরা না পড়ায় খুব অবাক লাগছে। তবে পুলিশ প্রশাসনের উপর আস্থা আছে। দেখি, অপেক্ষা করি।’’ তিনি জানান, পুলিশের তদন্তের স্বার্থে আরও কয়েক জনের নাম তিনি জানাতে চান।

Advertisement

এ দিকে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শুনশান হাঁড়িপাড়া। একজন পুরুষেরও দেখা মেলেনি। দু’-এক জন প্রবীণ মহিলা বেরিয়ে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এ ভাবে আর ক’দিন চলবে? কয়েকটি লোকের ভুলের জন্য আমাদের গোটা পাড়াটার বদনাম হয়ে গেল। পাড়ার পুরুষরা পালিয়ে পালিয়ে থাকলে, সংসার চলবে কী ভাবে?’’

এ দিকে এ দিন ভোরবেলায় পুলিশের পোশাকে চার-পাঁচ জন কয়েকটি বাড়িতে ঢুকে দরজা ভেঙেছে, রিকশা ও ভ্যান ভেঙেছে বলে হাঁড়িপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন। এতে পাড়ায় আতঙ্ক আরও ছড়িয়েছে বলে তাঁদের দাবি। যদিও বিষ্ণুপুর থানা দাবি করেছে, পুলিশ ওই পাড়ায় মোটেই তল্লাশি চালায়নি। ওঁরা গল্প ফাঁদছেন। এলাকায় পুলিশের টহল রয়েছে। তবে পুলিশের একটি সূত্রে দাবি, মারধরের ঘটনায় জড়িচ সন্দেহে দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

দলমাদল এলাকার কাউন্সিলর পিঙ্কি নামহাতা বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের বলছে তল্লাশিতে যাচ্ছে। কাউকে পাচ্ছে না। আমরা সৌম্যর পরিবারের পাশে আছি।’’ এসডিপিও বলেন, ‘‘আমরা নিরীহ নির্দোষ কাউকে হয়রান করতে চাইছি না। তাই অভিযুক্তদের ধরতে একটু সময় লাগছে। অপরাধীরা যেখানেই থাকুক, খুঁজে বের করব। হাঁড়ি পাড়ায় পুলিশ পিকেট বসানোর কথা ভাবছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement