বোলপুরে রাস্তা জুড়ে কেবলই টোটো। রবিবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
রবিবার দুপুর ২টো ১০ মিনিট। বোলপুরের চিত্রা মোড়।
বাস স্ট্যান্ডের জনতা হায় হায় করে উঠল! একটুর জন্য বেঁচে গেলেন তিন বাইক সওয়ার। তিনজনই নানুর এলাকার বাসিন্দা। বোলপুর এসেছিলেন কাজে! লালপুলের দিকে যাওয়ার জন্য বাঁক নিয়ে মুখোমুখি টোটোর সামনে! খুব জোর বেঁচে গেলেন টোটোচালকও। যাত্রীদের বাস ধরাতে দ্রুত গতিতে নিয়ে আসছিলেন স্ট্যান্ডে। বাঁক বদলে ভুল!
বেলা চারটে। চিত্রা মোড়ের অদূরে লজ মোড়।
একই জটলা। এদিক ওদিক না দেখে, রাস্তার উপরে টোটো ঘোরানোর জন্য অল্পে বাঁচল দুই পড়ুয়া। জোর বাঁচল বিপরীত দিক থেকে আসা একটি চার চাকার গাড়িও। মোড়ে মোড়ে এমন ঘটনাই এখন চেনা দৃশ্য শহরের। স্বাভাবিক ভাবে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। টোটো চালককে সতর্ক করে, ফের স্বভাবিক হয় ওই রাস্তায় চলাফেরা।
সন্ধে রাত। চৌরাস্তা।
ফের রিকসা, টোটো আর সাইকেলে জড়িয়ে গেল চৌরাস্তা! টোটোর মিছিল যেন স্টেশন রোডে। সন্ধের ট্রেন স্টেশনে থামতেই জট। সন্ধের বাজারের ভিড় আর টোটোর মিছিল যেন মোড়ে মোড়ে আটকে দেয় শহরের গতি। সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে গাড়ি। অথচ, বিকল্প কোনও পথ নিয়ে হেলদোল নেই কারও।
রবিবার শহরের অন্যতম মোড়গুলির কোনওটিতেই এ দিন সিভিক ভলেন্টিয়ার বা পুলিশ দেখা যায়নি। রাস্তার ওপর এমনিতে টোটো দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা থেকে শুরু করে যাত্রী ধরার চল দীর্ঘ দিনের। অভিযোগ, তাতেও হুঁশ নেই প্রশাসনের। তবে এই শহরের ট্রাফিকের দায়িত্ব যার কাঁধে, পুলিশের সেই সাব ইন্সপেক্টর প্রসেনজিৎ দত্ত অবশ্য সদলবলে হাজির ছিলেন গীতাঞ্জলি সংস্কৃতি অঙ্গনের রাস্তায়। প্রায় পৌনে তিনটে পর্যন্ত সেখানেই তাঁকে দেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য, এ দিন গীতাঞ্জলিতে বীরভূম ও বর্ধমানের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একটি সভা ছিল।
টোটো সংগঠনের এক সদস্যের কথায় সরকারি ভাবে এই শহরে ফি দিন প্রায় দেড় হাজার টোটো চলে। বেসরকারি মতে অবশ্য সংখ্যাটা দু’ হাজার ছাড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘কোনও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে টোটো চলায় শহরের লজ মোড়, চিত্রা মোড়, চৌরাস্তা এবং স্টেশন মোড়ের মতো ব্যস্ত এলাকায় আকছার যানজট বাড়ছে। শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ঢোকার সময়ে, সন্ধের দিকে শহরে এখন দুর্ঘটনা নিত্য দিনের ঘটনা।’’
কিছুদিন আগেই শহরের চিত্রা মোড়, টুরিস্ট লজ মোড় এবং চৌরাস্তায় পরীক্ষামূলক ভাবে জেলা পুলিশের উদ্যোগে ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা’ চালু হয়েছে। কিন্তু সমস্যা সেই তিমিরেই। পুলিশের সহায়তায় ওই সমস্ত জায়গায় সিসি ক্যামেরায় নজরদারিরও কথা। ঘটনা হল, বোলপুরের জনসংখ্যা ও পরিধি দিনকে দিন বাড়লেও সার্বিক পরিকল্পনা সেই সাবেক। শহরের প্রধান রাস্তা কোথাও সঙ্কীর্ণ, তো আবার কোথাও রয়েছে বিপজ্জনক বাঁক। সমস্যা বাড়ছে যানবাহনের চাপ বাড়ার ফলেও। আঙুল উঠেছে পরিকল্পনা ও উপযুক্ত নজরদারির দিকেই। শহরের ব্যস্ত মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাতে স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রী, বাসিন্দাদের ভোগান্তি প্রতি দিনের ছবি। সেই দুর্ভোগ থেকে বাদ যায় না পৌষ মেলা কিংবা বসন্ত উৎসবের মতো অনুষ্ঠানও। আর টোটোর জন্য যান দুর্ভোগ এখন ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। স্থানীয়দের কথায়, টোটো চালকদের বেপরোয়া মনোভাব এবং দৌরাত্ম্যে কার্যত রাস্তায় হাঁটাচলা করাই দায়।
শহরের টোটোচালকদের সংগঠনের সভাপতি গোপাল হাজরার দাবি অবশ্য অন্য। তিনি বলেন, ‘‘বেপরোয়া টোটো চালানোর অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট চালকদের বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সংগঠনের সিদ্ধান্তে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা কিংবা কয়েক দিন রাস্তায় চলাচল বন্ধ অথবা দুটোই কার্যকর হয়েছে অতীতে।’’ গোপালবাবুর দাবি, দোষত্রুটির বিষয় শুধুমাত্র টোটো চালকদের একার নয়। সমস্যা সমাধানে সকলে এগিয়ে আসুক, সংগঠন সহযোগিতা করবে। বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতকে এ দিন বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।