রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে আছে বালি। যে কোনও সময় ঘটে যাবে দুর্ঘটনা। হুঁশ নেই প্রশাসনের।
শহরের রাস্তাজুড়ে পড়ে থাকা ইমারতি সামগ্রীতে হড়কে মৃত্যুর ঘটনা জেলায় নতুন নয়। গত শনিবারই তারাপীঠে এমন পথের বালিতে বাইকের চাকা হড়কে মারা গিয়েছেন এক স্কুল শিক্ষিকা। পুলিশ রেকর্ড বলছে, তাঁর আগে আর তিন জনের মৃত্যু হয়েছে ওই পথেই, একই কারণে। বোলপুর শহরেও পথ-দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। এ শহরও পথে পড়ে থাকা বালি-পাথরের মরণ ফাঁদ!
নিত্যদিন দুর্ঘটনা এবং তার জেরে আহত ও বচসা প্রায় রোজকারের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বোলপুরের। তথাপি, শহরের একাধিক ওয়ার্ডে ইমারতি সামগ্রী ফেলে কোথাও দেদার ব্যাবসা চলছে। তো কোথাও আবার রাস্তা মেরামতির কাজ করতে গিয়ে ছড়ানো ইমারতি সামগ্রী। কার্যত, মরনফাঁদ পাতা রয়েছে শহর জুড়ে। হেলদোল নেই পুর কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনেরও। অভিযোগ উঠছে, কাউন্সিলরদের সঙ্গে ঠিকাদারদের গোপন আঁতাতের!
পুলিশ রেকর্ড এবং পুর বাসিন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুরের মধ্যে মুখ্য রাস্তা গুলিতে একাধিক দুর্ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে দায়ী রাস্তায় ফেলা এই ইমারতি সামগ্রী। সোমবার গোটা বোলপুর শহর জুড়ে নানা রাস্তায় দেখা গেল ছড়িয়ে রয়েছে ইমারতি সামগ্রী। ইদানিং কালে এই শহরে গড়ে উঠছে একাধিক বহুতল। ওই বহুতলের কাজের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত বাড়ি তৈরির জন্য পথেই রাখা হচ্ছে ওই সামগ্রী।
দৃশ্য এক। বোলপুর পুরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের জামবুনী এলাকা। সরকারি ও বেসরকারি নানা কাজকর্মের জন্য অহরহ ভিড় থাকে এই এলাকা। এই এলাকায় রয়েছে মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহ, মহিলা কলেজ, বেসরকারি বাসস্ট্যান্ড। রয়েছে শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের দফতর, বেসরকারি ব্যাঙ্ক, নার্সিং হোম এবং কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্র। এ হেন সদা ব্যাস্ত একটি এলাকার রাস্তার ওপর পড়ে রয়েছে ইট-পাথর-বালি।
কে ফেলেছে? কার ইট?
উত্তর নেই কারও কাছেই। অন্তত স্থানীয়দের কাছে পাওয়া যায়নি। পথ চলতি মানুষদের দাবি, নানা কারণে ফুটপাথ দখল হয়েছে অনেক আগেই। এবার মুখ্য রাস্তাও জবর দখল করে অনেকে ইমারতি ব্যবসা করছে। কেউ বা আবার নিজের বাড়ি, ঘর তৈরি কাজ করছে।
দৃশ্য দুই। বোলপুর পুরসভার ১০ নম্বার ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ রোড। এই ওয়ার্ডে শহরের সব থেকে বেশি বহুতল নির্মাণের কাজ চলছে। একটি বেসরকারি লজের পাশে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে পাথর। একটু সামনে আর পিছনে গেলে পাওয়া যাবে ইট, বালি পড়ে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘‘এলাকায় একটি বহুতল আবাসন প্রকল্পের কাজ যখন পুরোদমে চলছে তখন রাস্তা জুড়ে এ হেন অবস্থা ছিল। ওই কাজ শেষ হতে না হতে ফের এমন যন্ত্রণা শুরু হয়েছে।’’ কেউ কেউ আবার শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও প্রতিবাদ করার ভাষা হারিয়েছেন। সদুত্তর নেই কাউন্সিলরের কাছেও। কিন্তু গোটা রামকৃষ্ণ রোডের উপর বিপদজনকভাবে ইমারতি সামগ্রী পড়ে থাকায়, প্রাণ হাতে করে যাতাযাত করতে হয় নিত্য স্থানীয় বাসিন্দাদের। কেন না, এই রাস্তার উপর দিয়ে প্রত্যেক দিন কয়েক শ ছাত্রছাত্রী আসাযাওয়া করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরপ্রধান ও অনেক পুর কর্তাই নিত্য এ পথেই যাতায়াত করেন। কিন্তু নজর নেই কারও।
বোলপুর রামকৃষ্ণ রোড। ডান দিকে, ত্রিশূলা পট্টি।
দৃশ্য তিন। শহরের দু’নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিশুলাপট্টি এলাকা। এই এলাকার মুখ্য রাস্তার ওপর দিয়ে একাধিক জেলায় বাস আসা যাওয়া করে। ওই রাস্তার অপর একাধিক জায়গায় পরে রয়েছে বালি। বালি গাদা থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে মুখ্য রাস্তার ওপর। নিত্য দুর্ঘটনা এবং যানজটে ভোগান্তি হয় মানুষদের। নেই কোন হেলদোল। একই ছবি বোলপুর কলেজ রোড ধরে এগোলে শ্রীনিকেতন রোডেও। মাটির নীচে বিদ্যুতের তার নেওয়ার জন্য রাস্তার দু’ধারের মাটি তুলে ফেলা হয়েছে। তা নিয়েই গোটা রাস্তা প্রায় বন্ধের মুখে। আদতে গোটা শহরই এক ছবি। খাদি পাড়া, সারদা পল্লি, বাইপাস, রবীন্দ্র পল্লি, অন্নপূর্ণা পল্লি, ভুবনডাঙা, জামবুনি এলাকার রাস্তা অবরুদ্ধ হচ্ছে ইমারতি সামগ্রীতে। শুধু কি তাই? এই শহরের মধ্যে মালবাহী যান চলাচল করার জন্য পথের মাঝে বিপদ ঘটছে নিত্য।
বোলপুরের ছ’নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সেলার তৃণমূলের নরেশ বাউরি অবশ্য রাস্তা জুড়ে এ হেন ইমারতি সামগ্রী ফেলা দীর্ঘ দিনের ব্যাধি বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। তাদেরকে মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে। একাধিক ব্যক্তিকে সতর্ক করা হয়েছে। দিন চারেকের মধ্যে যদি ইমারতি সামগ্রী সরানো না হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বোলপুর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এহেন রাস্তা জুড়ে ইমারতি সামগ্রী ফেলা পুর কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নিলেও, অভিযুক্তদের কয়েক দিনের নোটিশ পাঠিয়ে, ওই মাল তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু কেন এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? বোলপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “খুব শীঘ্রই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। অবিলম্বে শহরে এহেন বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে পুরবাসীকে অবগত করার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এবং মুখ্য রাস্তায় সতর্ক করা হবে।”
ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী