সরেজমিনে: খনি এলাকার গ্রামে এপিডিআরের দল। নিজস্ব চিত্র
ডেউচা-পাঁচামির বাসিন্দারা খনির পক্ষে নন বলে এলাকা ঘুরে দাবি করল মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। যদিও প্রশাসন ও শাসক দল তৃণমূল উভয়েই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মঙ্গলবার এপিডিআরের ৩০ সদস্যের একটি দল মহম্মদবাজারের প্রস্তাবিত খনি এলাকায় এসেছিলেন। তাঁদের দাবি, প্রস্তাবিত খনি নিয়ে এলাকার মানুষের মনোভাব বুঝতেই তাঁরা এসেছিলেন। ছিলেন সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তাপস চক্রবর্তী, রাজ্য সহ সম্পাদক আলতাব আহমেদ, রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূর, নিশা বিশ্বাস, রাংতা মুন্সি প্রমুখ। জেলা থেকে ছিলেন শৈলেন মিশ্রও। তাঁদের অভিযোগ, সরকার, শাসক দলের পক্ষ থেকে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। নিরপেক্ষ নয় প্রশাসনও। প্রশাসনের এক কর্তার পাল্টা যুক্তি, ‘‘এলাকার মানুষ খনি চাইছেন না এ কথা ঠিক নয়। কারণ ইতিমধ্যেই একটি বড় সংখ্যায় চাকরির আবেদন জমা পড়েছে। জমি সংক্রান্ত নথি জমা পড়েছে।’’
এ দিন দুপুর প্রায় দুটো নাগাদ সংগঠনের সদস্যরা দেওয়ানগঞ্জের মুদিপাড়ায় যান। সেখানে বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। ঘণ্টাখানেক পর দলের কিছু সদস্য সেখান থেকে হরিণশিঙা ও সাগরবান্দি গ্রামে যান। কেন্দ্রপাহাড়ি ও গাবারবাথান গ্রামেও যান তাঁরা। দীর্ঘক্ষণ এলাকার বাসিন্দাদের কথা বলেন তাঁরা। পরে সংগঠনের রাজ্য সহ সম্পাদক আলতাব আহমেদ বলেন, ‘‘খনি নিয়ে এলাকাবাসী কী চাইছেন, কী বলছেন, তাঁরা পক্ষে না বিপক্ষে সেটা খতিয়ে দেখতেই এসেছিলাম। যত জনের সঙ্গে কথা বলেছি তার মধ্যে খনির পক্ষে কাউকে পেলাম না। তাঁরা এখানে যে অবস্থায় আছেন সেই অবস্থাতেই থাকতে চান।’’
এপিডিআরের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূরের অভিযোগ, ‘‘সরকারের তরফে এখানে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। জমি হস্তান্তর করতে পারা যাবে না বলে ইতিমধ্যেই একটি ফরমান জারি হয়েছে। সেটা মানুষের জমি সংক্রান্ত যে অধিকার, তার বিপক্ষে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘জমি দিতে বাধ্য করার জন্য ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। বাইক মিছিল হচ্ছে। মানুষকে তাঁর মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে না। রাজধর্ম পালনে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসনও।’’ এপিডিআর সদস্যরা দাবি করেন, মানুষের মতামত, ক্রাশার মালিক, খাদান মানিক ও সেখানকার শ্রমিকেরা তাঁরা কী চাইছেন তা মূল্যায়ণ করে সরকারের কাছে তাঁরা দাবি পেশ করবেন। তবে তাঁদের মূল বিষয়, যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তার বিরোধিতা করা।
অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোথাও কাউকে জোর করা বা ভয় দেখানো হচ্ছে না। নিপীড়ন চালানোর প্রশ্নই ওঠে না। প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে। মানুষকে সেটা বুঝতে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সম্মতিতেই এগোনো হচ্ছে। জোর করে জমি নেওয়া হবে না, এটা তো সরকার ঘোষিত নীতি।’’
শাসক দল তৃণমূলের বক্তব্য, বাইরে থেকে এসে কয়েক জন মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ভাবে কথা বলে গোটা খনি এলাকার মানুষ কী চাইছেন সেটা বোঝা সম্ভব নয়। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেউ কেউ ভুল বুঝে খনির পক্ষে মত না দিতে পারেন, কিন্তু এটা সামগ্রিক চিত্র নয়। তাহলে এত সংখ্যক আবেদন জমা পড়ছে কী করে?’’