দাঁড়ানোই সার, বেরোল না টাকা

কালো টাকা উদ্ধারে কেন্দ্রের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের’ জেরে হাতটান অবস্থা মধ্যবিত্তের ঘরে। ব্যাঙ্ক খুললেও বেশিরভাগ মানুষই টাকা তুলতে পারেননি। শুক্রবার থেকে এটিএম পরিষেবা চালু হলে অন্তত কিছু টাকা হাতে আসবে বলে আশা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু এ দিনও ঝাঁপ খুলল না বেশিরভাগ এটিএমের। সমস্যা রয়েই গেল। দুই জেলা ঘুরে খোঁজ নিল আনন্দবাজার।কেন্দ্র জানিয়েছিল, শুক্রবারই অধিকাংশ এটিএম খুলে যাবে। কিন্তু ব্যাঙ্কের দীর্ঘ লাইন এড়াতে যাঁরা এটিএম-কে ভরসা করেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশকেই দিনভর শুধু হন্যে হতে হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১৪
Share:

ফাঁকা এটিএমে ঢুকে গ্রাহক দেখলেন মেশিনটাই বিগড়ে গেছে! পুরুলিয়ার হাসপাতাল মোড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

খুলল না এটিএম

Advertisement

কেন্দ্র জানিয়েছিল, শুক্রবারই অধিকাংশ এটিএম খুলে যাবে। কিন্তু ব্যাঙ্কের দীর্ঘ লাইন এড়াতে যাঁরা এটিএম-কে ভরসা করেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশকেই দিনভর শুধু হন্যে হতে হয়েছে। কারণ বেশির ভাগ এটিএমেরই ঝাঁপ এ দিন খোলেনি। দুই জেলাতেই একই ছবি।

একটি সূত্রের খবর, পুরুলিয়া জেলায় মোট এটিএমের সংখ্যা ১৮১টি। তার মধ্যে একটি ডাকবিভাগের। কিন্তু সারা জেলায় সাকুল্যে ২০টির মতো বিকেলের দিকে খোলে। ফলে যাঁরা আশা নিয়ে সকাল থেকে লাইন দিয়ে ছিলেন, তাঁরা বেজায় চটেছেন।

Advertisement

পুরুলিয়া শহরের হাসপাতাল মোড় ও লাগোয়া এলাকায় কয়েকটি ব্যাঙ্কের এটিএম রয়েছে। কিন্তু সকাল থেকেই সর্বত্র ঝাঁপ বন্ধ ছিল। ফিরে গিয়েছেন বহু মানুষ। কোচবিহারের তুফানগঞ্জের বাসিন্দা দেবজ্যোতি রায় বর্মা নামে এক তরুণকে দেখা গেল হন্যে হয়ে একটি থেকে আর একটি এটিএম কাউন্টারে ঘুরে বেরাচ্ছেন। পুরুলিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওই ছাত্রের কথায়, ‘‘সব জায়গাতেই এটিএম বন্ধ। হাতে টাকা নেই। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’’ একই ভাবে অসুবিধায় পড়েছেন সন্দীপকুমার সাহা নামে দুর্গাপুরের এক বাসিন্দা। দুপুর সওয়া একটা নাগাদ এটিএমের দরজা খোলা দেখে তিনি নিশ্চিত হয়েই ঢুকে পড়েছিলেন। বেরোলেন হতাশ হয়ে। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সকাল থেকে শহরের একের পর এক এটিএম ঘুরে বেরিয়েছি। এই এটিএম ফাঁকা দেখে আশা নিয়ে ঢুকেছিলাম। কিন্তু মেশিনটাই বিগড়ে আছে!’’

তবে জেলার বাদবাকি এলাকায় এটিএম কার্যত বন্ধই ছিল। আদ্রা ও রঘুনাথপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক মিলিয়ে এটিএমের সংখ্যা গোটা দশেক। তার মধ্যে এ দিন শুধু রঘুনাথপুরের ব্লকডাঙায় একটি এটিএম খোলা ছিল। ফলে সেখানে আশপাশের সমস্ত এলাকার লোক ভিড় করেন। রঘুনাথপুরের বাসিন্দা কপিলদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাত্র ২০০০ টাকা তুলতে যা দুর্ভোগ গেল!’’

বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ব্যাঙ্ক লাগোয়া এটিএমগুলিতে টাকা তোলা যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদ্রার আপার ও লোয়ার বেনিয়াসোলে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা লাগোয়া দু’টি এটিএমই বন্ধ ছিল। একই ছবি রঘুনাথপুরেও।

বাঁকুড়া জেলাতেও কমবেশি একই সমস্যা চলেছে। জেলা সদর বাঁকুড়া শহরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হাতে গোনা কয়েকটি এটিএম ছাড়া বেশির ভাগই ছিল বন্ধ। শহরের পাঠকপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এমন অর্থ সঙ্কটে কোনও দিন পড়তে হতে পারে, ভাবিনি। ভিড়ের ঠেলায় ব্যাঙ্কে ঢুকতেই পারিনি দু’দিন। শহরের সব এটিএমগুলো খোলা থাকলে এতটা সমস্যা হতো না।” বিষ্ণুপুর শহরেও শুধুমাত্র সাহাপাড়ার মোড় সংলগ্ন একটি এটিএম খোলা ছিল। শহরের পুরো এলাকা তো বটেই গ্রাম থেকেও লোকে সেখানে টাকা তুলতে লাইন দিয়েছিলেন।

যাঁরা ভাগ্যবান, কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি তাঁদেরও। সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুরে এটিএম থেকে বাঁকুড়ার নুনগোলা রোডের বাসিন্দা প্রবীর ঘোষ কিছু টাকা হাতে পেয়েছেন। তাঁর কথায়, “হাতে যা কিছু খুচরো টাকা ছিল এক দিন আগেই ফুরিয়ে গিয়েছে। সংসারের জিনিসপত্র কিছুই কিনতে পারিনি। তাই ভোগান্তি নিয়েই যে টাকা পেয়েছি, মনে হচ্ছে তাই যেন অমূল্য।’’

কেন এটিএম চালু করা গেল না? বিষ্ণুপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তার অভিযোগ, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে কম টাকা দেওয়া হয়েছে। যে টাকা এসেছে তা বাতিল হওয়া নোটের ভাঙানি দিতেই বের হয়ে গিয়েছে। এই কারণেই জেলার সব এটিএম খোলা যায়নি।” আবার বাঁকুড়া শহরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শীর্ষ আধিকারিক অন্য দাবি করছেন। তাঁর বক্তব্য, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকা পাঠালেও এখনও বহু এটিএম থেকেই বাতিল হওয়া নোট তোলা যায়নি। সেই কারণেই বহু এটিএম চালু করা যায়নি।”

বৃহস্পতিবার রাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কলকাতা অফিস থেকে পুরুলিয়া জেলায় টাকা ঢুকলেও কেন এটিএম বন্ধ থাকল? জেলার একটি কারেন্সি চেস্ট শাখার শাখা প্রবন্ধক জয়কিষুণ দাস জানাচ্ছেন, কিছু নিয়মের জটিলতায় ওই টাকা এ দিন ব্যবহার করা যায়নি। জেলার একটি ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক রাজকিশোর সাহু বলেন, ‘‘আমরা অবশ্য হেড অফিসের অনুমতি নিয়ে গ্রাহকদের টাকা দিচ্ছি।’’

বাঁকুড়া শহরের একটি ব্যাঙ্কে পুলিশের পাহারায় এল টাকা।—নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কেও নাকাল

সকাল থেকে টাকা জমা দিতে ও টাকা পাল্টাতে যাঁরা ব্যাঙ্কে-ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছিলেন, তাঁরাও কম হয়রান হননি।

বৃহস্পতিবার থেকে টাকা দেওয়া হবে বলে সকালেই পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধ রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন কেন্দা থানার কুড়মাশোল গ্রামের বাসিন্দা যুধিষ্ঠির মাহাতো। কিন্তু রাত পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা তুলতে পারেননি। বদলাতেও পারেননি। তাই শুক্রবার খুব সকালেই তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু দুপুরের খানিক আগে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দরজার বাইরে নোটিস সাঁটিয়ে দেয়— টাকা বদলানো যাবে না। যুধিষ্ঠিরবাবুর মতোই হতাশ মানুষের লাইন তখনও ব্যাঙ্কের দরজা ছাড়িয়ে রাস্তায়। ওই ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টাকা কম থাকায় ওই সিদ্ধান্ত।’’ তাঁর আশ্বাস, আজ শনিবার যথারীতি বদলানো বহাল থাকবে।

পুরুলিয়া পুরসভা চত্বর লাগোয়া ঝালদার একটি ব্যাঙ্ক এ দিন সকালেই নোটিস দেয়, ‘এই শাখায় বদলানো এবং লেনদেন দু’টোই বন্ধ।’ গ্রাহকেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, টাকা নেই বলেই এই নোটিস। ঝালদার বাসিন্দা প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘ব্যবসার কাজে টাকার দরকার। চেক দিয়ে পাঠালাম কিন্তু ফেরত এসেছে।’’ জয়পুরেও একই ছবি। জয়পুরের বাসিন্দা দেবাশিস দাস বলেন, ‘‘জয়পুরের ব্যাঙ্কগুলিও এ দিন গ্রাহকদের টাকা দিতে পারেনি।’’

সাঁতুড়ি ব্লক এলাকায় মাত্র ৪টি ব্যাঙ্ক ও দু’টি এটিএম রয়েছে। এটিএমগুলি বন্ধ। ব্যাঙ্কগুলির সামনে বিরাট লাইন পড়েছিল। নিজের অ্যাকাউন্ট হোক বা জমা করে তোলার ক্ষেত্রেও ২০০০ টাকার কেউ পাচ্ছেন না। সব অবশ্য ১০০ ও ৫০ টাকার নোট মিলছে। কিন্তু ওই এলাকায় একটি ব্যাঙ্কে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার বেশি পাওয়া যায়নি।

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ধানাড়ার বাসিন্দা অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পরে কাউন্টারে ১০ হাজার টাকা তোলার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু মাত্র ২০০০ টাকা পেয়েছি।” আবার সাঁওতালডিহির ইছড়ের বাসিন্দা তারিণীপ্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘সকাল দশটা থেকে ব্যাঙ্কে লাইনে দাঁড়িয়ে বিকাল অবধি টাকা হাতে পাইনি।”

সিমলাপাল থানার পার্শ্বলা এলাকায় এটিএম নেই। ভরসা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। এলাকার বাসিন্দা বিবেকানন্দ সিংহ মহাপাত্র বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার খুব সকাল থেকেই ওই ব্যাঙ্কে লাইন পড়েছিল। সন্ধ্যাতেও লাইন ছিল। কিন্তু টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় সবাই টাকা পায়নি। এ দিন সকালেও ভিড় ছিল। কিন্তু ২০০০ টাকার বেশি কাউকেই দেওয়া হচ্ছে না।’’ তিনি জানান, এলাকায় একটি ডাকঘর থাকলেও সেখানে টাকার লেনদেন নেই। ফলে তাঁর মতো অনেকেই হাতে খুচরো টাকা না থাকায় দোকান-বাজার করতে বিপাকে পড়েছেন।

ধুঁকছে গ্রামাঞ্চল

গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও করুণ। দুই জেলার ব্লকগুলিতে নাম মাত্র ব্যাঙ্ক। এটিএমের সংখ্যাও তারও কম। এটিএমগুলি বন্ধ থাকায় ফলে ব্যাঙ্কে লম্বা লাইন পড়ছে। ব্যবসায়ী থেকে আম জনতা— সবাই খুচরো পেতে নাকাল হচ্ছেন। ফলে সংসার চালাতে অনেকে হিমসিম খাচ্ছেন। আবার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বেচাকেনা কমে গিয়েছে। পাইকেরের কাছে মাল তুলতেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

এ দিন সাঁতুড়ি, পাড়া, রঘুনাথপুর ২ ব্লক এলাকাতেও কোনও এটিএম কাউন্টারই খোলেনি। সাঁতুড়ির বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক সুশান্ত কেওড়া বলেন, ‘‘স্কুল ছুটির পরে রামচন্দ্রপুরে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে গিয়েছিলাম। লম্বা লাইন দেখে ভেবেছিলাম এটিএমে টাকা তুলব। কিন্তু ঝাঁপ তো বন্ধ!” সাঁওতালডিহিতে আবার এটিএম খোলা থাকলেও টাকা ছিল না বলে অভিযোগ।

গ্রামের এটিএমে টাকা না পেয়ে সোজা পুরুলিয়া শহরে এসেছিলেন জয়পুরের বারবেন্দ্যা গ্রামের বাসিন্দা অতুল মাহাতো। তাঁর অভিজ্ঞতা, দিনভর একের পর এক এটিএম ঘুরলাম। সব জায়গাতেই এক ছবি কোথাও টাকা নেই।’’ একই অবস্থা হুড়ার কুলাবহাল গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জিত করেরও। গ্রামে ছোট দোকান রয়েছে তাঁর। বলছিলেন, ‘‘যে দিন থেকে পাঁচশো ও হাজারের নোট অচল হয়েছে, সে দিন থেকেই ব্যবসা মার খাচ্ছে। দোকানে মালপত্র নেই। ভেবেছিলাম এ দিন শহরের এটিএমে টাকা মিলবে। দেখছি একের পর এক এটিএমেরই এক অবস্থা!’’

বিষ্ণুপুরের ঘুঘিমুড়া গ্রামের যুবক অমল দাসেরও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁর কথায়, “গ্রামে এটিএম বা ব্যাঙ্ক কিছুই নেই। বিষ্ণুপুরে টাকা তুলতে গিয়েছিলাম। সাহাপাড়া মোড় সংলগ্ন একটি ব্যাঙ্কের এটিএম-ছাড়া শহরের কোনও এটিএম খোলা ছিল না। ব্যাপক ভিড়ে টাকা তুলতে পারিনি।”

রানিবাঁধের অম্বিকানগরে একটি মাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক রয়েছে। ওই ব্যাঙ্কের একটি এটিএমও রয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই ওই এটিএমের ঝাঁপ খোলা হয়নি। ব্যাঙ্কে যাঁরা টাকা ভাঙাতে গিয়েছিলেন, তাঁদের ৫০০ টাকার বেশি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা উত্তম কুম্ভকার বলেন, “এলাকার বহু মানুষই টাকা তুলতে না পেরে সমস্যায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হয়, তারই অপেক্ষায় দিন গুনছি আমরা।”

ডাক দিও না

ডাকঘরের ছবিটাও বদলায়নি। অধিকাংশ ডাকঘরেই ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোট বদল হয়নি বলে অভিযোগ। শহরাঞ্চলে কাজ হলেও গ্রামাঞ্চলে এই সমস্যাই বেশি। হুড়ার বাসিন্দা শান্তিপদ রক্ষিত এ দিন সকালে এলাকার ডাকঘরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুপুরের আগেই ডাকঘরে টাকা শেষ। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলে কলকাতায় লেখাপড়া করে। ওকে টাকা পাঠাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে ফের লম্বা লাইন দেখেও সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লাইনেই দাঁড়াতে হয়েছে।’’

এ দিকে, পুরুলিয়া জেলা সদর থেকে টাকা না আসায় এ দিনও মানবাজার সাব পোস্ট অফিস থেকে নোট বদল সম্ভব হয়নি। পুরুলিয়া সদর ডাকঘরে এবং বাঁকুড়া প্রধান ডাকঘরে অবশ্য গ্রাহকদের এ দিন টাকা দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়া ডাক বিভাগের সুপার তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা ৩৫টি উপ-ডাকঘরে টাকা পাঠিয়েছি। সব জায়গাতেই কাজ হচ্ছে।’’ যদিও মানবাজার সাব পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার সত্যজীবন রায় বলেন, ‘‘শুক্রবারও জেলা থেকে টাকা আসেনি। ফলে গ্রাহকদের টাকা কেবল জমা নেওয়া হচ্ছে। নোট বদল হয়নি।’’ এক রসিকজনের মন্তব্য, ‘‘ডাক বিভাগের বক্তব্য একটাই, জমা দাও কিন্তু টাকা চেয়ে ডাক দিও না।’’

পালা করে

ব্যাঙ্ক তখন সবে খুলেছে। মানবাজারের ব্যাঙ্ক মোড়ে একটি রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দরজা থেকে পুরনো সব্জি বাজার পর্যন্ত লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছিল। মানবাজারের পোদ্দার পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সুনীল দত্ত বলেন, ‘‘সকাল সাতটার সময় ছেলেকে ব্যাঙ্কে লাইন দিতে পাঠিয়েছিলাম। আমি বেলা ১০টা নাগাদ ওকে সরিয়ে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু কখন টাকা পাব জানি না। খুচরো টাকা যা ছিল, এই ক’দিনে সংসার খরচে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি।’’

টাকা লোপাট

পাঁচশো ও একহাজার টাকা বাতিল হয়েছে শুনে বাজারের থলিতে পাঁচ হাজার টাকা ভরে দুবড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমা দিতে এসেছিলেন পাড়া থানার বালিচষা গ্রামের প্রৌঢ়া সানুবালা স্বর্ণকার। একাই সকাল সাড়ে ন’টায় ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ঘণ্টাখানেক পরে ব্যাঙ্কে ঢুকে টাকা জমা করতে গিয়ে দেখেন, থলে থেকে টাকা উধাও! ব্যাঙ্কের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘সামান্য চাষ আছে। দিনমজুরী করে ওই টাকা জমিয়েছিলাম। সর্বনাশ হয়ে গেল।’’ প্রতিটি ব্যাঙ্কেই গ্রাহকদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হাতের কাছে পুলিশ কর্মীদের পেয়ে ঘটনাটি মৌখিক ভাবে তাঁদের জানান ওই প্রৌঢ়া। কিন্তু পুলিশকর্মীরা টাকা উদ্ধার করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফেরেন সানুবালা।

আদ্রার একটি ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন।—নিজস্ব চিত্র।

লাইনে অসুস্থ

শুক্রবার বেলার দিকে সাঁওতালডিহির ভোজুডি কোল ওয়াশারিতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তোলার লাইনে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এক ব্যক্তি। স্থানীয় আলহাডি গ্রামের বাসিন্দা নেপাল রেওয়ানি নামের ওই ব্যক্তিকে ভোজুডি কোল ওয়াশারির হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

যানজট

দিকে দিকে এটিএম বন্ধ। বাঁকুড়ার মাচানতলার স্টেট ব্যাঙ্ক মোড়ে এটিএম খোলা শুনে তাই শহরবাসী ছুটে ছিলেন সেখানে। ফলে সকাল থেকেই এটিএমের সামনের রাস্তা মোটরবাইক ও সাইকেল ভরে যায়। সেই সঙ্গে রাস্তার উপরে এটিএমে টাকা তুলতে আসা মানুষের লাইন পড়ে যাওয়ায় রাস্তায় যানজট পাকিয়ে ওঠে। দিনভর চলে সেই জট। সামাল দিতে নামে পুলিশ। কিন্তু ভিড়ের চোটে বারবার থমকে যায় গাড়ি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement