টোটো-ধরা। কড়া ভূমিকায় প্রশাসন।—নিজস্ব চিত্র
শহরে কোন কোন পথে টোটো চলতে পারবে, সম্প্রতি তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু তার পরেই অভিযোগ ওঠে, নির্দেশিকার তোয়াক্কা না করে অবাধে শহর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু টোটো। সরেজমিনে সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এ বার পথে নামলেন মহকুমাশাসক। আর, অভিযোগ যে পুরোপুরি মিথ্যে নয়, তাও নিজের চোখেই দেখলেন।
সোমবার রুটের বাইরে চলা টোটো ধরতে শহরের মাচানতলা এলাকায় অভিযান চালান বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসক অসীমকুমার বালা এবং বাঁকুড়া সদর থানার আইসি রাজর্ষি দত্ত। কমবেশি বারোটি টোটোকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তাঁরা। সেগুলির জরিমানা করা হয়। বেগতিক দেখে আগেভাগে উল্টোপথ ধরে সরে পড়েছে আরও বেশ কিছু টোটো। অভিযান শেষে মহকুমাশাসক বলেন, “প্রশাসন যখন রুট ঠিক করে দিয়েছিল, টোটো চালকেরা সেটি মেনে নিয়েছিলেন। তার পরেও তাঁদের নিয়ম ভাঙতে দেখে অবাক হলাম।’’ মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, নিয়ম ভাঙা বরদাস্ত করা হবে না। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেবে।
গত কয়েক বছরে বাঁকুড়া শহরে যানবাহন অনেক বেড়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাট রয়েছে আগের চেহারাতেই। বাড়তি গাড়ির চাপ সামলাতে না পেরে শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলি প্রায়ই থমকে যায় যানজটে। গাড়ি তো দূরের কথা, জটের মধ্যে দিয়ে মোটরসাইকেল গলবারও জো থাকে না। রিকশাচালকদের লাগাতার আন্দোলন ছাড়াও এই যানজটের সমস্যাও টোটোর রুট নির্ধারণ করে দেওয়ার পিছনে একটা বড় কারণ হিসাবে কাজ করেছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। টোটোর অবাধ গতিবিধি আটকানো না গেলে সেই সমস্যা পুরপুরি মিটবে না বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন।
তবে টোটোর রুট নির্ধারণ করে দেওয়ার সময়ই রিকশা চালকেরা নিয়মিত নজরদারির দাবি তুলেছিলেন। এই অভিযানের পরে বাঁকুড়া রিকশা চালক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নিয়ম চালু হওয়ার পরে টোটোর রুট ভাঙা নিয়ে বারেবারে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় পার করে প্রশাসন রাস্তায় নেমেছে বলে রিকশাচালকদের একাংশের অভিযোগ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযানের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
কিন্তু চালকেরা রুট মানছেন না কেন? বাঁকুড়া জেলা ই- রিকশা ইউনিয়নের সভাপতি সিন্টু রজকের দাবি, প্রশাসনের ঠিক করে দেওয়া রুট অনেক চালকের কাছে এখনও স্পষ্ট হয়নি। তাই মাঝেমধ্যে ভুল করে ফেলছেন তাঁরা। তিনি বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি চালকদের নিয়ে একটা বৈঠক করা হবে। সেখানে রুটের ব্যাপার তাঁদের বুঝিয়ে বলা হবে।’’ তিনি জানান, বুঝিয়ে বলার পরেও কোনও চালক যদি নিয়ম ভাঙেন, তাহলে সংগঠনই তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে।
সিন্টুবাবুর বলেন, ‘‘রুট ভেঙে যে সমস্ত চালকেরা টোটো চালাবেন তাঁদের চিহ্নিত করে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে। প্রশাসনের নিয়ম সবাইকেই মেনে চলতে হবে।”