জমছে আবর্জনা। —নিজস্ব চিত্র
জঞ্জাল ও আগাছায় ঘিরে ফেলেছে গোটা চত্বরটাই।
জমা জল ডিঙিয়েই ঢুকতে হচ্ছে রোগী ও আত্মীয় পরিজনদের।
নিজেদের শয্যায় শুয়ে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ রোগীরা।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের বেশ কিছু প্রান্তে ডেঙ্গির ভ্রূকুটি দেখা দিয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে কয়েক জনের। এই বেগতিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এমনই সব ছবি দেখা গেল নলহাটি ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কেন এই হাল? এর দায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকেই ঠেলেছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। নলহাটি ১ বিএমওএইচ অনঘ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘গত জানুয়ারিতে এখানে যোগ দেওয়ার পরেই গোটা চত্বরের আগাছা নির্মূল করার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিজস্ব তহবিলে মাসের পর মাস আগাছা কেটে-জঞ্জাল পরিষ্কার করার মতো টাকা নেই। রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে এ ব্যাপারে আর্থিক সাহায্য চেয়ে বিডিও-কে জানানো হয়েছিল। পুরসভাকেও জানান হয়েছে।’’ এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া মেলেনি বলেই তাঁর দাবি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্দরের এমন বেহাল ছবি ধরা পড়লেও অনঘের দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকলেও বেশির ভাগেরই ‘ভাইরাল ফিভার’। ব্লকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ায় কেউ আক্রান্ত হননি।
নলহাটি শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে নলাটেশ্বরী পাহাড়ের পিছন থেকে শুরু করে ব্লক অফিস লাগোয়া ৩০ শয্যা বিশিষ্ট নলহাটি ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির অবস্থিত। বর্ষায় বৃষ্টির জল পড়তেই কাঁটাগুল্ম জাতীয় আগাছায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর ভরে গিয়েছে। জায়গায় জায়গায় জমেছে জলও। ওই সব স্থানেই জন্ম হচ্ছে মশা ও অন্যান্য জীবাণুবাহক পতঙ্গের। বিএমওএইচ বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাতে একটি দামি জেনারেটর রয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে সেটি চালানো যায় না। তিনটে ইনভার্টারের মাধ্যমে লেবার রুমে কেবল মাত্র পাখা ও আলো জ্বালানো হয়। বাকি সমস্ত ওয়ার্ড ও কোয়ার্টারগুলিতে কেবলমাত্র আলো জ্বালানো হয়।’’ পাখা না ঘোরায় মশার উপদ্রব আরও বেড়ে যায় বলেই জানালেন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি থাকা মাঠকলিঠার ফজল শেখ, খাপুরের আম্বিয়া বিবি, পাহাড়ি গ্রামের রেহেনা বিবি এবং প্রসূতি পূর্ণিমা মালরা।
এ দিকে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে অবাধে দুষ্কৃতী কর্মকাণ্ড চলে বলে অভিযোগ উঠেছে। জলের পাইপ চুরি গিয়েছে। দিনের বেলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর থেকে বালবও চুরি করে নেওয়া হয়েছে। তার জেরে রাতের বেলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরের বেশ কিছু জায়গা আঁধার থাকে। সেখানে দুষ্কৃতীরা ড্রেনড্রাইট ও অন্যান্য নেশার আসর বসায়। এমন অবস্থার কথা মেনে নিয়েছেন বিএমওইচ-ও। তাঁর দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে হাইমাস্ট আলো বসানোর জন্য এলাকার তৃণমূল বিধায়ক মইনউদ্দিন শামসকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর মহেশ্বর ক্ষিরহরি অবশ্য দাবি করেছেন, জঞ্জাল সাফাই করার জন্য লোক লাগানো হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বর্হিবিভাগের সামনে যাতে জল না জমে, তার জন্য জায়গাটি উঁচু করার ব্যবস্থাও করা হবে। অন্য দিকে, নলহাটি ১ বিডিও কিংশুক রায়ের আশ্বাস, ‘‘ওই জেনারেটর চালু রাখার জন্য কীভাবে মাসিক খরচ দেওয়া যায়, তা নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে আলোচনা করব। একশো দিন কাজের প্রকল্পে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জঞ্জাল ও আগাছা পরিষ্কার করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।’’