লাইন: লকডাউনের আগের দিন কীর্ণাহারের ব্যাঙ্কে। নিজস্ব িচত্র
রাজ্য সরকারের ঘোষণা মাফিক সপ্তাহে দু’দিন লকডাউন হচ্ছেই। সেই সঙ্গে সংক্রমণ রুখতে টানা আট দিন বীরভূম জেলার ছ’টি পুর শহরকেও সময়ভিত্তিক বা আংশিক লকডাউনের আওতায় আনতে চলেছে প্রশাসন। বুধবার করোনো পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরই মন্তব্য করব।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, সিউড়ি, বোলপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট, নলহাটি, দুবরাজপুর— এই ছ’টি শহরে আগামী ২৪ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই বিকেল তিনটে থেকে সকাল ছটা পর্যন্ত আংশিক লকডাউন থাকছে। বুধবার সন্ধে থেকেই প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে মাইকিং চলে। রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সম্পূর্ণ লকডাউন থাকছে।
এই দিনটিকে পুরশহরগুলিতে আংশিক লকডাউন করানোর প্রস্তুতি হিসাবে কাজে লাগানো হবে। উদ্দেশ্য একটাই, যত কম সংখ্যক মানুষকে রাস্তায় বের করা যায়।
প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের আসা থামার পরই বীরভূমে সংক্রমণের গতিতে রাশ পড়েছে। তবুও প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই মুহূর্তে দুটি স্বাস্থ্য জেলার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিনশোরও বেশি। এমন অনেক সংক্রমণ ধরা পড়েছে যাঁদের বাইরে থেকে আসা বা কোভিড পজ়িটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস পাওয়া যায় নি। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে।
আরও সমস্যার হল বাসিন্দাদের অনেকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। বার বার বলা সত্ত্বেও মাস্ক না-পরেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি মানার চেষ্টাও করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এ ভাবে চলতে থাকলে দিন দিন সংক্রমণ বাড়বে। সেটা ঠেকাতেই সপ্তাহে দু’দিন সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। এর বাইরে জেলার পুরশহরগুলিতে আংশিক লকডাউনের আওতায় এনে সেই চেষ্টাকেই আরও দৃঢ় করতে চাইছে বীরভূম জেলা প্রশাসন।
আনলক প্রক্রিয়া শুরু হতেই জেলা সদর সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, দুবরাজপুর, নলহাটির মতো শহরের প্রতিটিতেই লোকসমাগম অনেকাংশে বেড়েছিল। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেপরোয়া ভাবও। সেই চেতনা আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ফেরে কি না সেটাও দেখার। তবে সকালে যে সময় বাজার হাটে রাস্তায় প্রবল ভিড় থাকে সেই সময় লকডাউন না করে বিকাল তিনটে থেকে পরদিন সকাল ছটা পর্যন্ত আংশিক লকডাউন করে কী লাভ হল, সেই প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মানুষ। তাঁদের কথায়, ‘‘এই সময় তো এমনিতেই মানুষজন বাড়ি থেকে কম বের হন।’’ জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘মানুষকে তো একটা সময় দিতে হবে তাঁদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহের। অসুবিধা করা তো উদ্দেশ্য নয়। সকাল হোক বা বিকেল লকডাউন থাকলে রাস্তায় কম মানুষ বের হবেন, তাতে সংক্রমণ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।’’