মেজিয়া কলেজ মাঠে মিঠুন চক্রবর্তীকে দেখতে ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলায় দলের সংগঠনের ক্ষমতা জরিপ করতে এসে খুব একটা খুশি হলেন না বিজেপির তারকা নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। সংগঠন চাঙ্গা করায় আরও গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিলেন জেলা নেতৃত্বকে। কর্মীদের সমস্যার কথা শুনে তাদেরও মনোবল বাড়াতে ‘ভোকাল টনিক’ দিলেন। দল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার দুর্লভপুরের সাংগঠনিক বৈঠক ও মেজিয়ায় কর্মিসভায় এ মেজাজেই পাওয়া গেল বিজেপির রাজ্য কোর কমিটির সদস্য মিঠুন চক্রবর্তীকে।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুরের একটি লজে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার মণ্ডল সভাপতি ও জেলা কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মিঠুন ও দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু মিঠুনকে দেখতে হলঘরে ভিড় করেন কর্মীরা। তাঁদের সামলাতে নেতাদের হিমশিম খেতে দেখে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে নিজেই ভিড়কে খানিক কড়া সুরে বাইরে যেতে নির্দেশ দেন মিঠুন। কর্মীরা বাইরে বেরিয়ে গেলে মণ্ডল সভাপতি ও জেলা কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক শুরু হয়।
বিজেপি সূত্রে খবর, মণ্ডল সভাপতিদের কাছে তাঁদের নিজেদের এলাকার সাংগঠনিক সমস্যা, রাজ্যের তরফে দেওয়া দলীয় নানা কর্মসূচিগুলির অগ্রগতি কতদূর হয়েছে, তা জানতে চান মিঠুন। কর্মসূচিগুলির অগ্রগতি তেমন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মিঠুন। সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে বেশি দূর এগোনো যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্রের আরও দাবি, মিঠুন জানিয়েছেন, গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি জয়লাভ না করলেও বিধায়কের সংখ্যা গতবারের তিন থেকে বেড়ে ৭৭ হয়েছে। এটাও এক ধরনের জয় বলে দাবি করেন মিঠুন। এরপরেই তিনি জানান, আরও ভাল ফলাফল করতে হলে সাংগঠনিক ফাঁক-ফোঁকর ভরাট করতে হবে। নেতাদের এলাকায় যাতায়াত বাড়াতে হবে।
বিজেপিতে পুরনো ও নতুনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত এক্ষেত্রে পুরনো ও নতুন কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের বার্তা দেন বলে সূত্রের খবর। সুকান্ত কর্মীদের জানান, দল কাউকে পদ দিতে পারে, তবে যোগ্য নেতা হয়ে উঠতে ওই পদাধিকারীকেই সচেষ্ট হতে হবে। ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠক সেরে মিঠুন ও সুকান্ত শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা বাউরির বাড়িতে যান মধ্যাহ্নভোজের জন্য। বিকেলে তাঁরা যোগ দেন মেজিয়ার কলেজ মাঠের পঞ্চায়েত কর্মী সম্মেলনে।
সেখানে মিঠুন পুরুলিয়ার হুড়ার লধুড়কার সভার মতোই প্রশ্ন-উত্তরের ধাঁচে কর্মীদের কাছ থেকে সমস্যার কথা শুনতে চান। সেখানে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা না পাওয়া, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি না পাওয়া, বিজেপি করার জন্য রাজ্যের সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মতো বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসে। মিঠুন বলেন, “একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ করা হয়েছে, তা রাজ্য সরকার জানায়নি। ফলে কেন্দ্র আপাতত টাকা দেওয়া স্থগিত রেখেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করুন। তাহলেই নিজের অধিকার ফিরে পাবেন। বিজেপির পঞ্চায়েত হলে আপনাদের কোনও অভিযোগ থাকবে না।”
তাঁর সংযোজন, “আমি রাজনীতি করি না, মানুষের নীতিতে বিশ্বাস করি। মানুষের সমস্যা শুনি। আমি আপনাদের লোক। বিজেপির উপরে ভরসা, বিশ্বাস হারাবেন না।” পরে সাংবাদিকদের সুকান্ত বলেন, “দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত বিজেপি আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে উপহার দেবে। এ বারে মনোনয়নে কেউ বাধা দিতে এলে আমরাআদা খাওয়াব।”
বিজেপিকে কটাক্ষ করে বড়জোড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যে প্রকল্পের টাকা না পাঠিয়ে কেন্দ্রের বিজেপির সরকার মানুষকেই বঞ্চিত করছে। ওরা মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার অধিকার হারিয়েছে। রাজনীতি নীতি-আদর্শের লড়াই। কিন্তু বিজেপি উন্নয়ন আটকে দেওয়ার নোংরা রাজনীতি করছে। এটাকেমন নীতি?’’