ফুটিফাটা মাঠে শুকিয়ে যাচ্ছে ধান

বৃষ্টির অভাবেই সঙ্কট

জেলার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল বলছেন, ‘‘ধানজমিতে জলের অভাবে ফাটল দেখা দেওয়ার খবর প্রায় প্রতিটি ব্লক থেকেই আসছে। তবে কোথায় কত পরিমাণ ধানজমিতে জলাভাব দেখা দিয়েছে, তা এখনও সম্পূর্ণ জানা যায়নি। প্রতিটি ব্লকের কৃষিপ্রযুক্তি সহায়কেরা এলাকা ঘুরে রিপোর্ট পাঠাবেন।’’ 

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১২
Share:

চলতি খরিফ মরসুমে বীরভূমে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি এখনও আছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে জেলার ১৯টি ব্লকেই ধানজমিতে জলাভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টি-নির্ভর অসেচ এলাকাগুলির ধানজমিতে জল না থাকায় মাটিতে ফাটল ধরেছে। সে সবের ধাক্কায় ধানের ফলন কম হবে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।

Advertisement

জেলার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল বলছেন, ‘‘ধানজমিতে জলের অভাবে ফাটল দেখা দেওয়ার খবর প্রায় প্রতিটি ব্লক থেকেই আসছে। তবে কোথায় কত পরিমাণ ধানজমিতে জলাভাব দেখা দিয়েছে, তা এখনও সম্পূর্ণ জানা যায়নি। প্রতিটি ব্লকের কৃষিপ্রযুক্তি সহায়কেরা এলাকা ঘুরে রিপোর্ট পাঠাবেন।’’

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমে চলতি মরসুমের জুলাই এবং অগস্ট মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা, তার থেকে ২৫ শতাংশ কম হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম। সেপ্টেম্বরে জেলায় যেখানে ২৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, সেখানে মাত্র ১৭২.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মরসুমে সার্বিক ভাবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার জন্য বৃষ্টি-নির্ভর অসেচ এলাকা, বিশেষ করে রাজনগর, দুবরাজপুর, খয়রাশোল— এই তিন ব্লকে খারিফ ধানের চাষ কম হয়েছে।

Advertisement

দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, রাজনগর ব্লকে চলতি মরসুমে ১৩ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে খারিফ ধান চাষ হওয়ার পরিবর্তে ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। অর্থাৎ শুধু রাজনগরেই ৩৫ থেকে ৩৬ শতাংশ জমিতে বৃষ্টির অভাবে ধান চাষ হয়নি। দুবরাজপুর ব্লকে ২২ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হওয়ার কথা। সেখানে ১৮ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সেখানেও বৃষ্টিপাত কম হওয়ার জন্য ১৬ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়নি। আবার বৃষ্টি-নির্ভর অসেচ এলাকা, জেলার খয়রাশোল ব্লকেও চলতি মরসুমে ২০ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হওয়ার কথা। সেখানে ১৭ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। খয়রাশোলে ১৫ শতাংশ জমিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ার ধান চাষ হয়নি।

একই অবস্থা লাভপুরেও। ব্লকের চৌহাট্টা মৌজার বেশ কিছু অসেচ এলাকায় বৃষ্টির অভাবে ধান চাষ হয়নি। লাভপুর ব্লকে এই মরসুমে ২০ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে খারিফ ধান চাষের পরিবর্তে ১৭ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকেও মুলুক মৌজায় বৃষ্টিনির্ভর অসেচ এলাকায় খারিফ চাষ কম হয়েছে। বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকে ২২ হাজার ৩১০ হেক্টরের পরিবর্তে ১৯ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ‘‘যে ভাবে ধানজমিতে জলাভাব দেখা দিয়েছে, তাতে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে ধানের ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি দেবে।’’ জেলার নলহাটি ১, রামপুরহাট ১, মুরারই ১ ছাড়াও বেশ কিছু এলাকায় জলাভাব চলছে। ধান বাঁচাতে রামপুরহাট ১ ব্লকের আয়াষ অঞ্চলের রানীনগর, লম্বোদরপুর, নাছিয়া, দেবগ্রাম— এই চারটি গ্রামের চাষিরা সম্প্রতি সেচ ক্যানালের জল ছাড়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন। সেচ দফতরের ময়ূরাক্ষী উত্তর ক্যানালের রামপুরহাট বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার জয়দেব মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সেচ ক্যানালের জল ছাড়া হয়েছে। আবেদনকারী চাষিদের বৃহস্পতি, শুক্রবারের মধ্যেই সেচের জল পৌঁছে যাবে।’’ এলাকার চাষিদের অবশ্য অভিযোগ, সইপুর গ্রামের কাছে সেচ ক্যানালের লকগেট নামিয়ে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জল মিলছে না।

জেলার উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সমীরকুমার ঘোষ জানান, সেচ সেবিত এলাকায় জলের জোগান দেওয়ার জন্য সেচ দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেচ দফতর থেকে কিছু কিছু এলাকায় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। যেখানে সরকারী ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প রয়েছে সেই সমস্ত প্রকল্পগুলিকে চালু করার জন্য বলা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement