প্রতিরোধ শুরু সোনামুখীতে

দীপালি-ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে ‘বহিরাগত’ ধরল বাম কর্মীরা

প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হয়েছিল আগেই। প্রতিরোধ শুরুও করে দিল বামেরা। সোনামুখী পুরসভায় ভোটে সন্ত্রাস চালাতে বহিরাগতদের জড়ো করছে তৃণমূল, এই অভিযোগ বাম-শিবির তুলছিল প্রচারলগ্ন থেকেই। ভোটের এক দিন আগে শুক্রবার সোনামুখীর একটি বাড়ি ঘেরাও করে বেশ কিছু বহিরাগতকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন বাম কর্মীরা।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

সোনামুখী শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৩
Share:

প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হয়েছিল আগেই। প্রতিরোধ শুরুও করে দিল বামেরা। সোনামুখী পুরসভায় ভোটে সন্ত্রাস চালাতে বহিরাগতদের জড়ো করছে তৃণমূল, এই অভিযোগ বাম-শিবির তুলছিল প্রচারলগ্ন থেকেই। ভোটের এক দিন আগে শুক্রবার সোনামুখীর একটি বাড়ি ঘেরাও করে বেশ কিছু বহিরাগতকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন বাম কর্মীরা।

Advertisement

যে বাড়ি থেকে ওই বহিরাগতদের আটক করা হয়েছে, সেটির মালিক সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহার ঘনিষ্ঠ হিসাবেই এলাকায় পরিচিত। গত লোকসভা ভোটের সময় বুথে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর ও ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল দীপালিদেবীর বিরুদ্ধে। তিনি নিজে এ বার পুরভোটেও প্রার্থী। বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, এ বারও ভোটের দিন সন্ত্রাস চালানো এবং ছাপ্পা ভোট করানোর উদ্দেশ্যেই ওই বহিরাগতদের জড়ো করেছিল তৃণমূল। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিধায়ক। পুলিশ জানিয়েছে, সোনামুখীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রুদ্রপাড়ার একটি ঘর থেকে ৩৭ জন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগেরই বাড়ি ইন্দাসে। কিছু ব্যক্তি সোনামুখী ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। ভোটের দিন ঝামেলা পাকানোর জন্যই এরা জড়ো হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, আটক হওয়া ব্যক্তিরা বিয়ে বাড়িতে এসেছিল।

স্থানীয় সিপিএম নেতারা দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই রুদ্রপাড়ার ওই বাড়িতে বাইরের লোকজন আসতে শুরু করে। শুক্রবার সকালেও জনা ১৫ লোক ট্রেনে করে দল বেঁধে ওই বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। রাত থেকেই বিষয়টিতে চোখ রেখেছিলেন এলাকার বাম কর্মীরা। এ দিন সকালে আরও লোক ঢুকতে দেখে তাঁদের সন্দেহ আরও বাড়ে। খবর পৌঁছয় জেলা নেতৃত্বের কানেও। সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারলাম, ওই লোকজন তৃণমূলের হয়ে ভোট করতেই এলাকায় এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনকে জানাই। দলীয় কর্মীদের বলি বাড়ি ঘিরে রাখতে।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়ে এ দিন দুপুরে ওই বাড়ির সামনে শতাধিক বাম কর্মী জড়ো ঘরে ঢোকার রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখেন। বেশ কিছু মহিলা কর্মীও উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পরে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন বাম কর্মীরা। বারবার অভিযোগ করার পরেও কেন পুর-এলাকা থেকে বহিরাগতদের হটানো হচ্ছে না, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। পুলিশ বামকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বাড়িতে ঢুকে দোতলা থেকে বহিরাগতদের বের করে থানায় নিয়ে যায়। অমিয়বাবুর দাবি, “ওই বাড়ির মালিক দীপালি সাহার ঘনিষ্ঠ। তৃণমূল বহিরাগতদের এনে ভোটের দিন ঝামেলা পাকানোর চক্রান্ত আঁটছিল।’’

বাড়িটির মালিক যে তৃণমূল কর্মী, তা মেনে নিচ্ছেন দীপালিদেবীও। তবে আটক ব্যক্তিরা এলাকার একটি বিয়ে বাড়িতে যোগ দিতে এসেছিল বলে তাঁর দাবি। কিন্তু, কোথায় সেই বিয়ে বাড়ি, তার হদিস তিনি দিতে পারেননি। দীপালিদেবী বলেন, “বাড়ি মালিক আমাদের দলের লোক। এলাকার বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে উনি ঘর ভাড়া দেন। একটি বিয়ে বাড়িতে যোগ দিতেই ওই ব্যক্তিরা শহরে এসেছিলেন।’’ বিয়ে বাড়ি কোথায় হচ্ছে? বিধায়কের জবাব, “তা আমি জানি না। আমার নিজের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আমি ব্যস্ত রয়েছি। এত খবর রাখার আমার সময় নেই!” ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা সিপিএমের সোনামুখী জোনাল কমিটির সদস্য সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “কোথাও কোনও বিয়ে বাড়ি হচ্ছে না! ওই বহিরাগতদের কাছে বোমা, বন্দুক ছিল।’’ যদিও আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোনও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি বলেই জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, বাঁকুড়ার তিনটি পুরসভার মধ্যে সোনামুখীই একমাত্র বামেদের দখলে ছিল। নিজেদের শক্তি ধরে রাখতে মরিয়া বামেরা প্রথম থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটে বহিরাগতদের নিয়ে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তুলছে। শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবিতে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছিল বামেরা। কিন্তু প্রশাসনের তরফে তেমন সাড়া না মেলায় নিজেরাই প্রতিরোধ গড়ে সন্ত্রাস রোখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অমিয়বাবু বলেন, “রাজ্যে পালাবদলের পর কোথাও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়নি। গত পঞ্চায়েত। লোকসভা নির্বাচনে মুখ বুজে মার খেয়েছি আমরা। এ বার আর নয়। প্রয়োজনে শক্তি দিয়ে সন্ত্রাস রুখব।’’

সিপিএমের যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দীপালিদেবী বলেন, “সোনামুখীতে আমরাই জিতছি। বহিরাগত আনার দরকার কী আমাদের? হার নিশ্চিত জেনেই ওরা (বামফ্রন্ট) এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারে নেমেছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার এ দিন ফোন ধরেননি। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি। সোনামুখীর বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে বহিরাগতদের খোঁজে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে পুলিশি টহল। নাকাবন্দি করা হয়েছে শহরে ঢোকার রাস্তাগুলিও।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement