উদ্যোগ আমোদপুর পঞ্চায়েতের

গৃহস্থের আবর্জনা থেকে জৈব সার

এক ঢিলে দুই পাখি। রাস্তাঘাট থাকবে সাফসুতরো, আবার রাসায়নিককে দূরে ঠেকে খেতের ফসলকে পুষ্টি যোগাবে জৈব সার। এই পুরো ব্যাপারটা শুধু দু’টি বালতির কেরামতি। সম্প্রতি সাঁইথিয়ার আমোদপুর পঞ্চায়েত এলাকার প্রতিটি বাড়িতে দু’টি করে বালতি দিয়েছে। তার একটিতে পচনশীল আবর্জনা ফেলবে গৃহস্থ। অন্যটিতে পচবে না এমন বর্জ্য।

Advertisement

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১২
Share:

কুসুমযাত্রা গ্রামে জৈবসার প্রকল্পের এলাকা। —নিজস্ব চিত্র

এক ঢিলে দুই পাখি। রাস্তাঘাট থাকবে সাফসুতরো, আবার রাসায়নিককে দূরে ঠেকে খেতের ফসলকে পুষ্টি যোগাবে জৈব সার। এই পুরো ব্যাপারটা শুধু দু’টি বালতির কেরামতি। সম্প্রতি সাঁইথিয়ার আমোদপুর পঞ্চায়েত এলাকার প্রতিটি বাড়িতে দু’টি করে বালতি দিয়েছে। তার একটিতে পচনশীল আবর্জনা ফেলবে গৃহস্থ। অন্যটিতে পচবে না এমন বর্জ্য। ১২টি সংসদ এলাকায় রোজ ১২টি ভ্যান গিয়ে সেই আবর্জনা নিয়ে আসবে। পঞ্চায়েত প্রধান কৃষ্ণা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রতিদিন আবর্জনা থেকে গড়ে সাড়ে তিন টন জৈব সার তৈরি হওয়ার কথা।’’

Advertisement

জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে যখন কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার সর্বত্র প্রচার, কর্মশালা প্রভৃতি করছে, সাঁইথিয়ার আমোদপুর পঞ্চায়েত গড়ে ফেলেছে আস্ত একটা কারখানা। জৈব সারের ওই কারখানার জন্য জমি দিয়েছেন বাসিন্দারাই। পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল এবং রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ইন্সটিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং অফ গ্রাম পঞ্চায়েত (আইএসজিপি) প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় ওই কারখানা তৈরি হয়েছে। কৃষ্ণাদেবী জানান, এলাকার চাষিদের চাহিদা মেটানোর পরে বাকি সার অন্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হবে।

পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানা তৈরির কাজটা খুব সহজ ছিল না। প্রায় বছর দুয়েক আগের কথা। কারখানা তৈরির কথা ওঠার পরে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন প্রায় বারো বিঘা জমি লাগবে। তবে পঞ্চায়েত প্রধান এবং তাঁর স্বামী রাজীব ভট্টাচার্য তাঁদের গ্রাম কুসুমযাত্রার চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন। এর ফলে কী সুবিধা হবে তাঁদের বুঝিয়ে বলা হয়। অনেকেই রাজি হন জমি দিতে। প্রাধান জানান, কুসুমযাত্রা গ্রামের রামচন্দ্র মণ্ডল, বিদুরচন্দ্র মণ্ডল, দেবনারায়ণ ভট্টাচার্য, গৌতম ভট্টাচার্য, অমর ভট্টাচার্য, জলধর মণ্ডল, অনিল মণ্ডল, নীলকণ্ঠ মণ্ডল, বৈদ্যনাথ মণ্ডল, অনাদীশ্বর ঘোষেরা বারো বিঘেরও বেশি জমি দান করেছেন কারখানা তৈরির জন্য।

Advertisement

কারখানা গড়তে খরচ ধরা হয় ২৬ লক্ষ টাকা। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি হাতে পাওয়ার পরে আইএসজিপি থেকে কিস্তিতে মোট ২০ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে ছ’লক্ষ টাকা দেয়। নভেম্বরের ৩০ তারিখ সিউড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের নির্মল বাংলা অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে কারখানার উদ্বোধন করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত ভট্টাচার্য। প্রধান জানান, সারের দাম এখনও ঠিক করা হয়নি। তবে কারখানা চালানোর খরচটুকু তোলার মতো ন্যূনতম দামই নেওয়া হবে।

আইএসজিপি-র আমোদপুর এলাকার কর্তা কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলায় এ রকমের তিনটি প্রোজেক্ট নেওয়া হয়েছে। অন্য দু’টি রামপুরহাট ও নানুরে। তবে আমোদপুরই প্রথম কারখানা গড়ে সার উৎপাদন শুরু করে দিল।’’ এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ব্লক এগ্রিকালচারাল ডেভলপমেন্ট অফিসার রাজীব হাজরা বলেন, ‘‘মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য জৈব সারের বিকল্প নেই। এই কারখানা চাষিদের খুবই উপকার করবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement