মুখোমুখি: হঠাৎ পরিদর্শনে হাসপাতালে জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র
সোমবার ভরদুপুর। ঘড়ির কাঁটা ১টার ঘর পার করে ফেলেছে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল তথা মেডিক্যাল কলেজের প্যাথোলজি বিভাগে ঢুকে জেলাশাসক রাহুল মজুমদার দেখলেন, এক জন টেকনিসিয়ান বসে মাছি তাড়াচ্ছেন। কোনও রোগী নেই। তার পরে শোরগোল পড়ে যায়। হাসপাতালের কর্তারা এসে পৌঁছন। দিনের শেষে তাঁদের থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন জেলাশাসক। নির্দেশ দিয়েছেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যে রোগীদের পরিষেবা পাওয়ার কথা— সেটা যেন স্পষ্ট করে বিভাগের বাইরে লিখে দেওয়া হয়।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ আসছিল, রোগীরা প্যাথোলজি বিভাগ থেকে পরিষেবা পাচ্ছেন না। তাই সরেজমিন পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলাম।’’ এ দিন দুপুরে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তিনি ওই হাসপাতালে পৌঁছন। মূল ভবনের এক তলায় ওয়ার্ডমাস্টারের ঘরের উল্টোদিকে প্যাথোলজি বিভাগ। সেখানে গিয়েই বসেন তাঁরা। ছুটে আসেন হাসপাতালের কোয়ালিটি ম্যানেজার দেবদীপ মুখোপাধ্যায়। সুপার অসুস্থ জেনে জেলাশাসক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে খবর দিতে বলেন।
খবর পেয়েই চলে আসেন পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত। জেলাশাসক তাঁদের বলেন, ‘‘এসে দেখলাম মাত্র একজন কর্মী রয়েছেন। রোগীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছিল। আমরা বলায় রক্ত নেওয়া হচ্ছে। এটা কী ভাবে চলতে পারে?’’
এই সমস্ত কথাবার্তা যখন চলছে, তখন হাজির হন বিভাগের চিকিৎসক চিরঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমাদের কাছে নিয়মিত অভিযোগ আসছে, এই বিভাগ থেকে রোগীরা ঠিক মতো পরিষেবা পাচ্ছেন না। বান্দোয়ান, আড়শা, বলরামপুরের মতো দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসবেন আর বেলা ১২টার পরে পরিষেবা পাবেন না— এটা চলতে পারে না।’’
ঘটনায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়তে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘আমরা খুবই অস্বস্তিতে। গোটা জিনিসটা দেখলাম। যে ভাবে জেলাশাসক বলেছেন, সেই অনুযায়ী আমরা দেখব কী ভাবে পরিষেবার উন্নতি করা যায়। যাঁদের কাজে গাফিলতি রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সেটাও দেখা হচ্ছে।’’
গোটা ঘটনা নিয়ে চিকিৎসক চিরঞ্জীববাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি।