‘জব কার্ড’ হাতে বাড়ির দাওয়ায় সুধারানি কুণ্ডু। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
সপ্তাহ খানেক আগে একশো দিনের কাজের দাবিতে আরও কিছু লোকজনের সঙ্গে একশো দিনের কাজ চেয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়েছিলেন সত্তর বছরের বৃদ্ধা। সম্প্রতি এলাকায় কাজ শুরু হলেও তিনি সুযোগ পাননি। ঘটনায় বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের গেলিয়ার সুখজোড়া গ্রামের সুধারানি কুণ্ডু।
গেলিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের রঞ্জনা বিশ্বাস শনিবার বলেন, ‘‘উনি আবেদন করেছেন। কাজে নেওয়াও হবে। কিন্তু এক জনের বাড়ি গিয়ে দল বেঁধে চেঁচামেচি করাও তো খারাপ। সুধারানিদেবীর কাজ না পাওয়ার এটাও একটা কারণ বটে।’’ বিডিও (জয়পুর) বিট্টু ভৌমিক এ দিন বলেন, ‘‘তিন দিন আগে বৃদ্ধার অভিযোগ পেয়েছিলাম। দ্রুত তাঁকে কাজে নেওয়ার জন্য সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছিলাম গেলিয়া পঞ্চায়েতের প্রধানকে। এখনও কাজে না নেওয়া হলে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছি।’’
গেলিয়া পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, সুখজোড়া গ্রামের ভরতপুর মৌজার রহল্যাপাড়া, পাদুয়া, মারিকপাড়া ও মণ্ডলপাড়া অঞ্চলে একশো দিনের কাজে সেচ নালা সংস্কার মেঠো রাস্তা পরিষ্কার করা শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। ১২টি কর্মদিবস ধরা হয়েছে। কাজ করছেন ৪১০ জন। শনিবার রহল্যাপাড়ার মাটির বাড়িতে বসে সুধারানি বলেন, ‘‘কাজ চাইতে গিয়ে আমি কাজ হারালাম।’’ তিনি একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। করোনা পরিস্থিতিতে তা-ও হারিয়েছেন। সুধারানি জানান, চার মাস আগে শেষ একশো দিনের কাজ পেয়েছিলেন তিনি।
সুধারানি জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর আবার কাজের দাবি নিয়ে আরও কিছু লোকজনের সঙ্গে তিনি গিয়েছিলেন তৃণমূলের গেলিয়া অঞ্চল সভাপতি প্রান্তিক মণ্ডলের বাড়ি। এলাকায় কাজ শুরু হলেও তিনি না পাওয়ায় জয়পুর ব্লক অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সুধারানির ছেলে বিশ্বজিৎ কুণ্ডু দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। মায়ের কাজ কেন বন্ধ হল জানতে গিয়েছিলাম। খালি ধমক আর
হুমকি জুটেছে।’’ তৃণমূলের জয়পুর ব্লক সভাপতি ইয়ামিন শেখ অবশ্য বলছেন, ‘‘সমস্যা হয়েছিল। সবার সঙ্গে বসে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। কাজ না দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত দল নেয়নি। আবেদনের ভিত্তিতে সবাই কাজ পাবেন।’’ তৃণমূলের গেলিয়া অঞ্চল সভাপতি প্রান্তিক মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের ধারণা হয়েছিল, আমার জন্যই তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না। প্রাথমিক ভাবে কয়েকজন গালিগালাজ করেছিলেন। পরে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় বিষয়টি মিটেও যায়।’’বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হরকালী প্রতিহার বলেন, ‘‘মানবিকতা বলে তৃণমূলের কিছু নেই। কেউ যাতে প্রতিহিংসা শিকার না হন, সেটা প্রশাসনের দেখা দরকার।’’ তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, ‘‘একেবারে তৃণমূল স্তরের বিষয়। আমার কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও খবর আসেনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’