প্রতীকী ছবি। ফাইল চিত্র
দুই জেলার সরকারি কোভিড হাসপাতালে এখনও অক্সিজেনের ঘাটতি না থাকলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে হাহাকার চলছে। পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা নামতে দেখে রোগীর পরিবারের লোকজন হন্যে হয়ে ঘুরছেন অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য। কিন্তু যে সমস্ত সংস্থা সরবরাহ করে থাকে, তারা জানিয়ে দিচ্ছে
মজুত নেই।
পুরুলিয়ার অবস্থা
পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়া এলাকার একটি সংস্থার তরফে কাশীনাথ নন্দী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছেন। ১৮টি সিলিন্ডার রয়েছে তাঁদের কাছে। বৃহস্পতিবার রাতে সবগুলি ভর্তি করা হয়েছিল। শুক্রবার বেলা ১১টার মধ্যে সব শেষ। শহরের চকবাজারের একটি ক্লাবের তরফে সঞ্জিত দত্ত জানান, ২০টি সিলিন্ডার রয়েছে তাঁদের। দৈনিক ৫০ টাকা ভাড়ায় দেন। এখন হাতে একটিও নেই। এ দিকে দিন-রাত ফোন করে মানুষজন চাইছেন।
সঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘আমরা এখনই এক হাজার সিলিন্ডার কিনতে প্রস্তুত। কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। মুর্শিদাবাদ থেকে কোনও রকমে পাঁচটা জোগাড় করা গিয়েছে। আসতে আরও সময় লাগবে।’’ শহরের আর একটি সংস্থার তরফে তুষার অবস্তি জানান, সব সিলিন্ডার বেরিয়ে গিয়েছে। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় এসেছি, যদি কয়েকটা সিলিন্ডার পাওয়া যায়। সেটা হলেই আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করা সংস্থার থেকে ভর্তি হয়ে যাবে।’’
বাঁকুড়ার পরিস্থিতি
একই অবস্থা বাঁকুড়াতেও। ‘বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, “হন্যে হয়ে অক্সিজেনের খোঁজে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছি। কেউ দিতে পারছেন না।” বাঁকুড়ার একটি নার্সিংহোমের অন্যতম কর্ণধার দীপক সরকার বলেন, “চাহিদা মতো অক্সিজেনের জোগান পাচ্ছি না। কোনও মতে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি।”
মাচানতলার অক্সিজেন ব্যবসায়ী অভিজিৎ মিত্র জানান, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বছরে একটি থেকে বড়জোর পাঁচটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হয়। তিনি বলেন, ‘‘বাকি সময় কিছু গ্রাহক জরুরি ভিত্তিতে সিলিন্ডার ভাড়ায় নিয়ে যান। ছবিটা একেবারে বদলে গিয়েছে গত দিন দশেকে।’’ অভিজিৎবাবু জানান, গত ছ’দিনে চোদ্দোটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এর বাইরেও প্রায় একশো জন মানুষ সিলিন্ডার কিনতে চেয়েও পাননি। ভাড়া নেওয়ার প্রবণতাও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বাধ্য হয়ে বাড়িতে অক্সিজেন ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে।”
অভিজিৎবাবু জানান, এতদিন তিনি বাঁকুড়ারই এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অক্সিজেন কিনতেন। তবে পরিস্থিতি দেখে এখন বাইরের সংস্থার কাছ থেকে কিনতে চাইছেন। তিনি বলেন, “বাইরের যে সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে। তবে এই ব্যবসায় অনেকটা নগদ টাকা লগ্নি করতে হয়। সেটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
হয়রান পরিজন
চূড়ান্ত মুশকিলে পড়েছেন রোগীদের পরিজনেরা। পুরুলিয়া শহরের বিটি সরকার রোডের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বাবা করোনা পজ়িটিভ। সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হল। অক্সিজেনের মাত্রাও কমতে শুরু করে। সবাইকে ফোন করেছি, কারও কাছে অক্সিজেন নেই।’’ শহরের রেনি রোডের অনুপম লাই জানান, আত্মীয়ের জন্য তিন দিন আগে সকাল থেকে চেষ্টা করেও অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করতে পারেননি। বন্ধুদের অনেকের চেষ্টার রাতে একটি পাওয়া যায়। বাঁকুড়ার এক স্কুল শিক্ষক বলেন, “বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা রয়েছেন। এমনিতে কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। তবে করোনা হলে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে। এখন তো শুনছি হাসপাতালে বেড মিলছে না। ফলে বাধ্য হয়েই বাড়িতে পরিকাঠামো গড়ে রাখতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রেখেছি।” ‘বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপার কথায়, “এই মুহূর্তে বাড়িতে অনেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রাখছেন বলে সমস্যা হচ্ছে। তবে হাসপাতালে যখন বেড মিলছে না, তখন বাড়িতে পরিকাঠামো তৈরি করে রাখায় অন্যায়ের কিছু দেখছি না। সরকারের উচিত, অবিলম্বে সিলিন্ডারের জোগান বাড়ানোয় জোর দেওয়া।”
হাসপাতাল-নার্সিংহোম
পুরুলিয়ার একমাত্র কোভিড হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে। সেখানে আপাতত অক্সিজেনের খামতি নেই বলে অবশ্য দাবি অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তীর। সংক্রমণের প্রথম পর্বে পুরুলিয়া শহরের যে বেসরকারি হাসপাতালটিকে কোভিড হাসপাতাল করা হয়েছিল, সেখানে নিজস্ব অক্সিজেন তৈরির ইউনিট রয়েছে। হাসপাতালটির তরফে রাজা শীল বলেন, ‘‘আমাদের নিজস্ব চাহিদা ইউনিট থেকে মিটলেও কোভিডের জন্য প্রশাসনের তরফে বাড়তি শয্যার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এই অবস্থায় বাড়তি অক্সিজেনের ব্যবস্থা বাইরে থেকেই করতে হবে। অক্সিজেন পেতে অসুবিধা যাতে না হয়, প্রশাসনের নিশ্চিত করা দরকার।’’
বাঁকুড়ার একমাত্র কোভিড হাসপাতাল ওন্দা সুপার স্পেশালিটি। সেটির সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, “এই মুহূর্তে হাসপাতালে অক্সিজেনের খামতি নেই। তবে পরিষেবা সচল রাখতে নিয়মিত জোগানটা চাই।” বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেন বলেন, “জেলার হাসপাতালগুলিতে এখনও অক্সিজেনের অভাব দেখা না দিলেও আরও বেশি জোগান দরকার। রাজ্যকে এ বিষয়ে বলেছি।’’