বল্লভপুরের ঝিলে পরিযায়ীর দেখা নেই

শীত পড়ার সঙ্গেই হরেক রকমের পাখির দেখা মিলত বল্লভপুর অভয়ারণ্য সংলগ্ন তিনটি জলাধারে। স্থানীয় ভাষায় যেগুলি ঝিল নামেই পরিচিত। কিন্তু ঝিলগুলি সংস্কারের অভাবে অপরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় বিগত কয়েক বছরে পাখির সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৭
Share:

ভরপসা কেবল হরিণ। নিজস্ব চিত্র

শীত পড়ার সঙ্গেই হরেক রকমের পাখির দেখা মিলত বল্লভপুর অভয়ারণ্য সংলগ্ন তিনটি জলাধারে। স্থানীয় ভাষায় যেগুলি ঝিল নামেই পরিচিত। কিন্তু ঝিলগুলি সংস্কারের অভাবে অপরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় বিগত কয়েক বছরে পাখির সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। এতে হতাশ শান্তিনিকেতনের পাখিপ্রেমীরা। একই সঙ্গে পর্যটকরাও জানাচ্ছিলেন এই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। ঝিলগুলি পরিষ্কার করার আর্জি জানিয়েছিলেন সকলেই। সে কথা মাথায় রেখে শীত পড়ার মুখেই ঝিলের সংস্কার

Advertisement

শুরু করে বন বিভাগ। বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এক নম্বর ঝিলের কয়েকশো হেক্টর অংশ পরিষ্কার করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, তার পরও পরিযায়ী পাখির আনাগোনা সে ভাবে চোখে পড়েনি।

তবে পর্যটকের মরসুমে এখন আকর্ষণের জায়গায় রয়েছে এই অভয়ারণ্যের চিতল হরিণগুলি। এর আগে বল্লভপুর অভয়ারণ্য থেকে অতিরিক্ত হরিণ বক্সা জঙ্গল সহ অন্য অভয়ারণ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই সময় হরিণের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬১টি। নিয়মিত হরিণগুলির পরিচর্যা, খাবারের সঠিক পরিমাণের ফলেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন বন বিভাগের আধিকারিকেরা। শীতকাল চিতল হরিণের প্রজননের সময় হওয়ায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।

Advertisement

এক পর্যটক বললেন, ‘‘আমি কয়েক বছর আগে যখন এসেছিলাম তখন হরিণ খুব কম ছিল। এ বার এসে আর ভিতরে যাব না ভাবছিলাম। তখনই জানলাম, এখন হরিণের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে হরিণ দেখে মন ভরলেও পরিযায়ী পাখি আসেনি দেখে খারাপ লাগল।’’

হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি এই অভয়ারণ্য। ইতিহাস বলছে, প্রাকৃতিক ভাবে এই এলাকায় শালবন ছিল। ১৯৫৪-৫৫ সাল নাগাদ শালগাছের সঙ্গেই ফাঁকা অংশে আকাশমণি, শিশুগাছ লাগানো শুরু হয়। ১৯৫৭ সালে এই অভয়ারণ্যটি রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষিত হয়। এর ফলে ১৯৬৭-৬৮ সালে কিছু ব্ল্যাকবাক এবং চিতল হরিণ ছাড়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিতল হরিণেরই বংশবৃদ্ধি ঘটে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৭ সালে ২.০২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে অভয়ারণ্যটি গড়ে ওঠে। এই অভয়ারণ্যের এলাকার মধ্যেই রয়েছে ঝিল তিনটি। এদের মধ্যে একটি অভয়ারণ্য থেকে কাছে। অন্যটি প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র থেকে কাছে এবং আরেকটি ঝিল ঠিক মাঝখানে। শুধুমাত্র হরিণক্ষেত্রটিই ৪০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

ঝিল পরিষ্কার হওয়ার পরেও পরিযায়ী আসেনি দেখে মন ভাল নেই স্থানীয় বাসিন্দা এবং পাখিপ্রেমীদেরও। বিশেষ করে যাঁরা একটা সময় প্রচুর পরিযায়ীর ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন। তাঁরা জানালেন, গত দু’বছর ধরেই আর পরিযায়ীরা আসে না। আগে তাঁরা ভাবতেন, ঝিল অপরিষ্কার থাকাই এর একমাত্র কারণ। কিন্তু, এ বার তো অনেক আগে থেকেই ঝিল পরিষ্কার করা হয়েছে। তাও সে ভাবে পরিযায়ী আসেনি বলে জানালেন তাঁরা। খুব ভোরে গেলে কিছু পাখির দেখা মিলছে। এ ছাড়া দিনভর কোনও পাখি আসে না বললেই চলে। অথচ এই সময়টাতে আগে গ্রিন বি ইটার, ব্লু টেলড বি ইটার, ইন্ডিয়ান রোলার, জাকানা, স্নেক বার্ড সহ প্রায় ১৪-১৫টি প্রজাতির পাখির দেখা মিলত।

ঝিল অপরিষ্কার থাকার জন্যই পাখি আসা বন্ধ হয়েছে, এমনটা মানতে নারাজ এলাকাবাসী। সে রকম ব্যাপার হলে তো এ বারে পাখি আসার কথা ছিল। তাঁদের দাবি, পাখিদের নির্জন জায়গা পছন্দ। আশেপাশের এলাকা আগে কোলাহলমুক্ত ছিল। এখন পর্যটক বেড়েছে। পাশেই থাকা শনিবারের হাট এখন প্রতিদিনের হাট হয়ে গিয়েছে। তাতেই স্বাভাবিক পরিবেশ হারিয়ে গেছে। এর ফলেই পরিযায়ীরা এ বারও এল না।

বন বিভাগের আধিকারিক সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘সকলের দাবি মেনেই আমরা এক নম্বর ঝিল পরিষ্কার করার কাজ শীত পড়ার আগেই শুরু করেছিলাম। ইতিমধ্যেই অনেকটা পরিষ্কার করা হয়েছে।’’ কিন্তু আগের মতো পরিযায়ীর দেখা না মেলায় মুখভার তাঁদেরও। এই শীতেও হরিণ দেখেই ফিরতে হল পর্যটকদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement