অতীতের নববর্ষ ফেরাতে চান নবীনরা

বহু ভাষাভাষির শহর আদ্রায় বাংলা সংস্কৃতি চর্চা ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। এ বার নতুন বছরের শুরুতেই সেই হারানো অতীত ফেরানোর প্রয়াস শুরু হল। হাল ধরল সেই বাঙালি সমিতিই। জাঁকজমক তেমন ছিল না, কিন্তু অনুষ্ঠানের মূল সুর ছিল বাঙালির নিজস্ব আঙ্গিকে বাঁধা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আদ্রা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০১:২৫
Share:

ছন্দে: আদ্রায় বাঙালি সমিতির অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র

বহু ভাষাভাষির শহর আদ্রায় বাংলা সংস্কৃতি চর্চা ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। এ বার নতুন বছরের শুরুতেই সেই হারানো অতীত ফেরানোর প্রয়াস শুরু হল। হাল ধরল সেই বাঙালি সমিতিই। জাঁকজমক তেমন ছিল না, কিন্তু অনুষ্ঠানের মূল সুর ছিল বাঙালির নিজস্ব আঙ্গিকে বাঁধা। তাতে সাড়ে তিন দশক পরে এই শহরে বাংলা সংস্কৃতির শুষ্কপ্রায় ধারাটি ফের বেঁচে ওঠার জন্য জল পেল বলেই মনে করছেন সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজন। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন— অতীতকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার শুরু হল। আগামী দিনে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন তাঁরা।

Advertisement

বস্তুত এই রেলশহরের বরাবরই একটা সাংস্কৃতিক মনন ছিল। ব্রিটিশ আমলে তৎকালীন বিহারের অন্তর্ভুক্ত থাকা পুরুলিয়াতে বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র হিসাবেই আদ্রা রেলশহরে ১৯২০ সালে তৈরি উঠেছিল বাঙালি সমিতি। সে সময় বাংলা নববর্ষ খুবই ধুমধাম করে পালন করা হতো। আদ্রার প্রবীণ বাসিন্দা তথা সাহিত্যিক বিমলকান্তি ভট্টাচার্য স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন, ‘‘নববর্ষের দিনে নর্থ ইনস্টিটিউটের হলে বড়মাপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। কবিতা পাঠের আসর বসত। অন্যান্য অনুষ্ঠানও হতো। কলকাতা থেকেও বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিকেরা আদ্রায় আসতেন। এই অনুষ্ঠানের জন্য নববর্ষের দিনে নর্থ ইনস্টিটিউটের হলে সিনেমা দেখানো বন্ধ থাকত।” তিনি জানান, সে সময়ে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ক্ষুদিরাম দাস, অনুরুপাদেবী, জরাসন্ধ, নরহরি কবিরাজের মতো কবি, সাহিত্যিক ও গবেষকেরা আদ্রায় বাঙালি সমিতির নববর্ষের অনুষ্ঠানে এসেছেন। অনুষ্ঠানের খরচ জোগানোর জন্য ‘শঙ্খ’ নামের স্মরণিকা প্রকাশ করা হতো নববর্ষে।

তবে সেই সোনালি দিনের ঔজ্জ্বল্য ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে। নববর্ষে বড়মাপের অনুষ্ঠান গুটিয়ে হয়ে গেল ঘরোয়া অনুষ্ঠানে। তারপর দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক কার্যত টিমটিম করেই নববর্ষ পার করে আদ্রা।

Advertisement

সমিতির ব্যাটন হাতে ধরা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অবশ্য ফেলে আসা ঐতিহ্যেই ফেরার চেষ্টা করছেন। তাঁদের মধ্যে সাত্যকি দে, দেবাশিস দে, কুমারজিৎ চট্টরাজরা জানান, এ বার স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পেয়ে তাঁরা অন্যরকমের নববর্ষ পালন করেছেন। নাচ, গান, আবৃত্তি, তবলা, সেতারের ঠাস বুনোটে পুরো অনুষ্ঠানটি সুচারু ভাবে সাজিয়েছিলেন ওঁরা। উদ্যোক্তাদের কথায়, ‘‘অনেকেই এসে প্রশংসা করে গেছেন। আরও ভাল করার উৎসাহ পেলাম।” আদ্রার আরপিএফ ইনস্পেক্টর সঞ্জয় হাজরা, থানার ওসি মুকুল কর্মকার থেকে বাচিক শিল্পী জয়তী চট্টোপাধ্যায়— সবাই জানাচ্ছেন, পুরোপুরি বাঙালিয়ানায় মোড়া এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন তাঁরা। আমজনতার মুখেও সেই কথা। তাতেই আগামী নববর্ষ আরও রঙিন করে দেওয়ার রসদ পেয়েছেন নতুন উদ্যোক্তরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement