শুধু চাকচিক্যই নয়, শয্যাও ৩০ থেকে বেড়ে হল ৬০।—নিজস্ব চিত্র
সার দিয়ে নতুন শয্যা। ভবনে নতুন নীল ও সাদা রংয়ের পোঁচ। ভবনের ভিতরটাও ঝাঁ চকচকে। এক ঝলক দেখলে কে বলবে, এটা গ্রামীণ হাসপাতাল! নতুন কলেবরে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকে এ ভাবেই এক কদম এগোল পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লক। বুধবার দ্বারোদ্ঘাটন হল বলরামপুরের বাঁশগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনের। এ দিন দ্বারোদ্ঘাটন করেন পুরুলিয়ার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো।
অন্য দিকে, এ দিনই মনসা পুজোয় হাসপাতালের বহির্বিভাগ ছুটি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় আদ্রার কাঁটারাঙ্গুনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে শো-কজ করেছে কাশীপুর ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। কাশীপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) ফিরোজ মণ্ডল বুধবার বলেন, ‘‘মনসা পুজোতে হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ রাখার কোনও সরকারি নির্দেশ নেই। তা সত্ত্বেও ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রর বহির্বিভাগ ওই পুজোর জন্য নোটিস দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসককে শো- কজ করা হয়েছে।”
কাটারাঙ্গুনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অতীতে ইনডোর থাকলেও দীর্ঘদিন হল সেই পরিষেবা বন্ধ। ফলে এমনিতেই হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বেকো পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুধু বহির্বিভাগের পরিষেবা পান আশপাশের আট-দশটি গ্রামের বাসিন্দারা। এ দিন সকালে চিকিৎসা করাতে এসে অনেকেই দেখেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ। দেওয়ালের নোটিসে লেখা, মনসা পুজো উপলক্ষে বুধবার হাসপাতাল বন্ধ থাকবে। এ খবর জানতে পেরেই বিষয়টি বিএমওএইচকে জানান কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শনে যান বিএমওএইচ। তিনি নিজেও এমন নোটিস দেখে অবাক হন। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ রাখা যায় না। পুরো ঘটনা ঊর্ব্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, গত ৩ অগস্ট পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়াও। সেই সময়েই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ওই প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই বলরামপুরের বাঁশগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের নভেম্বরে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ বা ইনডোর ৩০ শয্যা থেকে ৬০ শয্যা করার কাজ শুরু হয়। কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।
সাংসদ বলেন, ‘‘এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এলাকার মানুষজন এ বার আরও উন্নত পরিষেবা পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী পিছিয়ে পড়া এই জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জেনারেটরের অভাব রয়েছে।
এই সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন সাংসদ। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘কাশীপুরের কল্লোলী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকেও ৩০ থেকে ৬০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করা হচ্ছে। এই কাজের জন্যও প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’