প্রতীকী ছবি।
মানসিক ভারসাম্যহীন অন্তঃসত্ত্বাকে রাখার পরিকাঠামো ছিল না হোমে। কিন্তু রাখতে হয়েছিল। আদ্রার মণিপুর গ্রামের হোমের বৃদ্ধাবাসে ওই মহিলা সম্প্রতি সন্তানের জন্ম দেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মা ও শিশুকে ভর্তি করাতে হয়েছিল রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসাপাতালে। বুধবার সকালে সেখানেই মৃত্যু হয়েছে সদ্যোজাতের। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সাব ডিভিশনাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (রঘুনাথপুর) বিশ্বনাথ রক্ষিতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই মহিলাকে এনেছিল পুলিশ। সেই দিনই হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, তাঁকে হোমে রাখার ব্যাপারে মুশকিল রয়েছে। মণিপুর গ্রামের ওই হোম কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্রে অনাথ, উদ্ধার হওয়া শিশু, কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারের শিশু ও কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্য। সেখানে মানসিক ভারসাম্যহীন অন্তঃসত্ত্বাকে রাখার মতো পরিকাঠামোই নেই।
কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্রর সম্পাদক নবকুমার দাস বলেন, ‘‘পুলিশ ও প্রশাসনকে আমাদের সমস্যার কথা জানাই। কিন্তু আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত ওই মহিলাকে রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম।”
শিশু, কিশোরদের সঙ্গে ওই মহিলাকে রাখা সম্ভব নয় বলে শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধাবাসে তাঁকে রাখে হোম কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এসডিইএম ও প্রশাসনের কাছে তাঁকে স্থানান্তর করার আবেদন গত পাঁচ মাসে অনেক বার করা হয়েছিল বলে হোম কর্তৃপক্ষের দাবি। হোম সূত্রের খবর, বৃদ্ধবাসে রাখা হলেও ওই মহিলার অস্বাভাবিক আচরণের জন্য কর্মীরা তাঁর কাছে যেতে পারতেন না। ওই মহিলা এক কর্মীকে গালিগালাজ করে মারধরও করেছিলেন। নিয়মিত খাবার খেতেন না। বৃদ্ধাবাসের অন্য আবাসিকদের সঙ্গেও মিশতে পারতেন না।
কারও সঙ্গে থাকতে পারতেন না বলে তাঁকে একা একটি ঘরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেটা যে ওই মহিলার জন্য ভাল হচ্ছে না, তা বুঝতে পেরে চিকিৎসার জন্য তাঁকে উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল বলে হোম কর্তৃপক্ষের দাবি। কিন্তু গত পাঁচ মাসে কিছুই হয়নি। হোমের একটি সূত্রের দাবি, মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানসম্ভবা মহিলার যা চিকিৎসা প্রয়োজন, তার কিছুই করা সম্ভব হয়নি হোমে।
এই পরিস্থিতিতেই দিন তিনেক আগে বৃদ্ধাবাসে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। হোম সূত্রের খবর, ঠিক কখন সেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে সেটাও বুঝতে পারেননি কেউ। নবকুমার বাবুর দাবি, রবিবার সকাল ৭টা নাগাদ এক কর্মী খাবার দিতে গিয়ে বিষয়টি দেখতে পান।
হোমের কারও কারও অনুমান, মাঝরাত বা ভোরে সন্তানের জন্ম হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু কেউ সেটা জানতে পারেননি। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলা কাপড়ের নীচে সদ্যোজাতকে আড়াল করে রেখেছিলেন।
খবর পেয়েই হোম কর্তৃপক্ষ দ্রুত মা ও শিশুকে ভর্তি করায় রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। ১৯৩৬ গ্রামের শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয় নবজাতক শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে। মা-কে রাখা হয় প্রসূতি বিভাগে। শিশুটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে হাসপাতালের সুপার সোমনাথ দাস বলেন, ‘‘খুব কম ওজনের শিশুটি সংক্রমণ নিয়েই ভর্তি হয়েছিল। জন্মের পরেই খুব ঠান্ডা লাগায় সংক্রমণটা হয়। যথাযথ চিকিৎসা করেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই মহিলা এখনও ওষুধ ও খাবার থেকে চাইছেন না।
কেন মণিপুর গ্রামের হোম থেকে উপযুক্ত জায়গায় মানসিক ভারসাম্যহীন অন্তঃসত্ত্বাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি?
মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় জানান, নিয়ম অনুযায়ী এসডিইএম-এর কাছে উদ্ধার হওয়া মহিলাকে তোলার পরে তাঁকে স্থানীয় হোমেই পাঠানো হয়। পুরুলিয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য আলাদা কোন হোম নেই। তাই স্থানীয় মণিপুরের হোমে রাখা হয়েছিল ওই মহিলাকে।
মহকুমাশাসকের দাবি, হোম কর্তৃপক্ষ এসডিইএম-এর কাছে ওই মহিলাকে সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানানোর পরে এসডিইএম পুলিশকে যে কোনও ভাবে মহিলার পরিবারের খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু গোড়াতেই তো তাঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো যেত? প্রশাসনের ব্যাখ্যা, ওই মহিলা যে মানসিক ভারসাম্যহীন সেই বিষয়ে কোনও চিকিৎসকের কাছ থেকে শংসাপত্র নিয়ে হোম কর্তৃপক্ষ আদালত বা প্রশাসনের কাছে দেয়নি। ফলে সেটা করা যায়নি।
মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা জেনেছি সন্তানের জন্ম দেওয়ার আগে হাসপাতালে ওই মহিলার চিকিৎসা হয়েছিল। তার পরেও কেন, কী ভাবে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে সেই বিষয়ে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, ওই মহিলার অবস্থা সম্পর্কেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বিশদে জানতে চাওয়া হয়েছে।