আনন্দে: পৌষমেলায় খুদে পর্যটকেরা। নিজস্ব চিত্র
পৌষমেলা মানেই নাগরদোলার বাহার। এ বারের মেলায় বড়দের নজর কেড়েছে ‘রেঞ্জার’। ছোটদের আকর্ষণের মূলে রয়েছে ‘জাম্পিং’। এই দুটি নাগরদোলাই এ বারের মেলায় নতুন। যদিও টিকিটের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে সমস্যায় সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানালেন, আগে যে টাকায় দু-তিনটে নাগরদোলা চড়া যেত, এখন একটা নাগরদোলা চড়তে সেই টাকার টিকিট কাটতে হচ্ছে।
এরই মধ্যে রবিবার রাতে হঠাৎ একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি জায়ান্ট হুইল থেকে কিছু জন পড়ে যাচ্ছে। ১৬ সেকেন্ডের সেই ভিডিয়োটি পৌষমেলার ভিডিয়ো হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। পরে অবশ্য জানা যায়, মে মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের একটি মেলায় এই ঘটনা ঘটেছিল। তাকেই পৌষমেলার বলে প্রচার চালানো হচ্ছিল। আরও একটি ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি মেয়ে নাগরদোলার কাছে পরে রয়েছে। সেই ভিডিও-র সঙ্গেও এ বারের পৌষমেলার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই বলেই জানিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। অহেতুক গুজব কিংবা আতঙ্ক ছড়াতে নিষেধ করছেন তাঁরা। তবে এই ভিডিও-র কোনও প্রভাব পরেনি বলেই জানাচ্ছেন মাধবী রায়। পৌষমেলায় দুটি জায়ান্ট হুইলের মধ্যে একটির কোষাধ্যক্ষ তিনি। বললেন, ‘‘অনেকে এসে জিজ্ঞেস করছিল। সবাইকে সত্যিটা বলেছি। এমন কিছু সমস্যা হয়নি।’’ ৫০ টাকা টিকিটে ছয় রাউন্ড ঘুরছে তাঁর জায়ান্ট হুইলটি। এ বারের পৌষমেলায় জায়ান্ট হুইল, তোরা তোরা, ব্রেক ডান্স, রেঞ্জার, মিকি মাউস সহ আরও কয়েকটি নাগরদোলা মিলিয়ে কমপক্ষে ৫০টি নাগরদোলা বসেছে।
সন্ধ্যা পড়তেই ভিড় জমছে সেখানে। ড্রাগন ট্রেন এবং ব্রেক ডান্সের টিকিট ৫০ টাকা করে। দুটিই ঘুরছে ছয় রাউন্ড। বাচ্চাদের জন্য অকুয়া ফান বোটিংয়ের টিকিটও ৫০ টাকার। সময় থাকছে পাঁচ মিনিট।
অন্য দিকে, বাচ্চাদের মিকি মাউসের টিকিট ৪০ টাকার। সেখানেও পাঁচ মিনিট খেলতে পারছে তারা। রানীগঞ্জ থেকে বাবলু বাউরি এসেছেন জাম্পিং নিয়ে। টিকিট ২০ টাকা। ১০ বছর পর্যন্ত বাচ্চারা পাঁচ মিনিট পর্যন্ত থাকছেন সেটিতে। বাচ্চাদের জন্য আছে সিটি রাইডও। ৪০ টাকার টিকিট সেখানে। এ ছাড়াও বড়দের জন্য অক্টোপাস এবং তোরা তোরার টিকিট ৬০ টাকার। দুটিই ছয় রাউন্ড ঘুরছে। মেলায় গিয়ে জানা গেল, ভাইরাল ভিডিও-র ঘটনা সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। যাঁরা জানেন, তাঁরা বাকিদের সত্যিটা বোঝাচ্ছেন। যাঁরা জানেন না, তাঁরা বিশ্বাস করে নিচ্ছেন।
যদিও সোমবার বিশ্বভারতীর এনএসএস স্টল থেকে বিষয়টি নিয়ে বারংবার ঘোষণা করা হয়েছে। ভিডিও কোনও ভাবেই পৌষমেলার নয়, সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে সেই ঘোষণা নাগরদোলা থাকা এলাকা পর্যন্ত এসে পৌঁছোয়নি। মেলাতে ঘুরতে থাকা পর্যটকরা এই ঘোষণা শুনতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তবে নাগরদোলার ক্ষেত্রে টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়াতে সমস্যায় জেন-ওয়াই। অথচ তাঁদের আকর্ষণটাই বেশি থাকে। শিল্পী মুখোপাধ্যায়, সৌরভ কর, শিবম রায়, শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায়দের কথায়, ‘‘আমাদের লক্ষ্যই থাকে সব নাগরদোলাতে চাপব। কিন্তু, এখন টিকিটের যা দাম বেড়েছে, নাগরদোলাতে চাপতেই সব জমানো টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।’’
নাগরদোলা নিয়ে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ বারের মেলায় পরিবেশের স্বার্থে সবই ‘গ্রিন জেনারেটর’ ব্যবহৃত হচ্ছে। তাতে এক লাফে খরচ বেড়েছে অনেকটাই। তাতে সমস্যা বাড়লেও ভিড়ে বিশেষ ভাটা পড়েনি। বেশ কিছু বিদেশি পর্যটককেও নাগরদোলায় চড়তে দেখা গিয়েছে। জার্মানির নিকোলাস ও জোনাস দু’জনেই জায়ান্ট হুইলে চেপে উচ্ছ্বসিত। ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে সাময়িক বিভ্রান্তি তৈরি হলেও সব মিলিয়ে নাগরদোলাতে জমজমাট পৌষমেলা।