নিরাপত্তা: পুলিশ পাহারায় স্ট্রং-রুম। নিজস্ব চিত্র
আজ ভোটগণনা। বেলা গড়াতেই জানা যাবে কার দখলে থাকছে নলহাটি।
সকাল আটটা থেকে নলহাটি হরিপ্রসাদ হাইস্কুলে শুরু হবে গণনা। দশটি টেবিলে ৪টে রাউন্ডের গণনায় প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ১৬টি ওয়ার্ডের জন্য প্রতিটি রাউন্ডে ৪টে করে ওয়ার্ড গণনা হবে। গোলমালের আশঙ্কায় গণনা কেন্দ্রের ভিতরে, বাইরে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকছে বলে জানিয়েছেন পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা রামপুরহাট মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস।
তাই বলে থেমে নেই ভোট নিয়ে রকমারি চর্চা। সব ওয়ার্ডে জিতেই কি পুরবোর্ড পুনর্দখল করবে তৃণমূল। নলহাটির ‘ঐতিহ্য’ মেনে বেশ কিছু ওয়ার্ড নিজেদের দখলে রাখবে বিরোধীরা। কিন্তু, ফল নিয়ে আলোচনার থেকেও বেশি করে উঠে আসছে রবিবার, ভোটের দিন রাখিরাধীদের নামিয়ে কী করে ভোর করিয়ে নিয়েছে তৃণমূল, সেই নিয়ে চর্চা। তা থেকে উঠে আসা মূল প্রশ্ন একটাই, ‘‘এমন ভোট কি আগে দেখেছে নলহাটি?’’
নলহাটি কলেজ মোড়, পোস্টঅফিস মোড় (হনুমান মন্দির নিয়ে পরিচিত), আউটডোর মোড়ের একাধিক আলোচনা তো বটেই, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক জনের মৃত্যুর পরে মাটি দিতে যাওয়া লোকজনও একটু অবসর পেয়েই ঢুকে পড়লেন ভোটের দিনে রাখিধারীদের তাণ্ডবের প্রসঙ্গে। স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মীও বলছেন, ‘‘এমন কিছু ওয়ার্ড রয়েছে সেখানে জয় নিশ্চিত ছিল। সেখানে গা-জোয়াড়ি করে আমাদেরই মুখ পুড়েছে।’’
নলহাটির পুরবোর্ড ১৬-০ করতে এ বার প্রথম থেকেই ঝাঁপিয়েছিল তৃণমূল। জেলা তো বটেই রাজ্যের নেতামন্ত্রীরাও মাস তিনেক ধরে যথেষ্ট ঘাম ঝরিয়েছেন। প্রচারে এসে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, ‘‘কেষ্টর (জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল) জন্যেই জিতব।’’ টানা প্রচারে থেকেছেন অনুব্রতও। বাড়ি বাড়ি প্রচার থেকে পথসভা, মিছিল বাদ ছিল না কিছুই।
তারপরেও বহু বুথে রাখিধারীদের নামিয়ে জোর করে বুথ দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধী শিবিরের। ভোটের দিন, রবিবারই ২, ৫, ১২, ১১— এই চারটি বুথে পুনর্নির্বাচন চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় বিরোধীরা। মঙ্গলবার নলহাটিতে বিরোধীরা একসঙ্গে পথসভা করেও সে দাবি তোলে। কিন্তু, পুনর্নির্বাচনে সায় দেয়নি প্রশাসন।
রবিবার ভোট শুরুর পরে এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছিল, প্রায় প্রতিটি বুথেই রয়েছেন চার-পাঁচ জন রাখিধারী। শাসকদলের হয়ে ভোট করাতেই তাঁদের আগমন। কৌশল ছিল, দুপুর একটার মধ্যে তৃণমূলের ভোটারদের ভোট দিয়ে দিতে বলা হবে। তার পরে মাঠে নামবেন রাখিধারীরা। বুথের দরজা বন্ধ করে অবাধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। সে ছবি তুলতে যেতেই রে রে করে এসেছিলেন চার-পাঁচ জন যুবক। তাদের হাতে ছিল রাখি। মেজাজ ছিল মারমুখী। সিপিএমের অভিযোগ ছিল, ‘‘বুথ জ্যাম করে, ছাপ্পা ভোট দেওয়ার কাজ নিপুণ ভাবে করেছে ওই রাখিধারীরাই। আর প্রশাসন পিছন থেকে তাদের মদত জুগিয়েছে নিষ্ক্রিয় থেকে।’’
কিন্তু, কী হতে পারে ফল? তার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে আজ দুপুর পর্যন্ত।