গ্রামীণ: নবান্ন মেলায় ঢেকিতে ভাঙছে ধান। বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র
বোলপুরের গীতাঞ্জলি কালচারাল কমপ্লেকসে শুরু হল হস্তশিল্প মেলা ‘নবান্ন’। শনিবার এই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সম্রাট মুখোপাধ্যায়, শান্তিনিকেতন লেদার ক্লাস্টারের সম্পাদক দেবব্রত সেনগুপ্ত, বিশ্বভারতী শিল্পসদনের অধ্যাপক রাজকুমার কোনার, বাস্তুকার ও পরিবেশবিদ অরুণেন্দু বন্দোপাধ্যায় এবং চিত্রপরিচালক অশোক বিশ্বনাথন।
এ বারের নবান্ন মেলায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলঙ্গানার হস্তশিল্পীরা এসেছেন। মেলায় রয়েছে প্রায় ২৫০টি স্টল। মেলা চলবে ৫ মার্চ পর্যন্ত। প্রতি দিন দুপুর ১২টা থেকে সন্ধে ৮টা পর্যন্ত।
উদ্যোক্তারা জানান, ২০১৭ সালে ওই মেলায় ২০০ জন শিল্পী দোকান দিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়েছিল। এ বছর তাই শিল্পীদের মধ্যে মেলায় স্টল নেওয়ার জন্য আগ্রহ বেড়েছে। দর্শকরা জানান, ১৩ বছর আগে নবান্ন মেলার যে চেহারা ছিল, তা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। উদ্যোক্তাদের মূল লক্ষ, হস্তশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা। তাঁরা জানান, নবান্ন মেলায় গ্রাম থেকে শহরের সমস্ত শিল্পীরা নিজেদের জিনিস প্রদর্শনের সুযোগ পান। সারা বছর শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা করা হয়। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সাহায্যও মিলেছে।
প্রতি বছর বসন্ত উৎসবের কয়েক দিন আগে নবান্ন মেলার উদ্বোধন হয়। মেলা চলে দোলের কয়েক দিন পর পর্যন্ত। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবে পর্যটকেরা আসেন। সে জন্য এই সময় বিক্রি ভাল হয়। এছাড়াও এমন কিছু জিনিস এই মেলায় পাওয়া যায়, যা সাধারণত বাজারে পাওয়া যাবে না। তাই আকর্ষণও বেশি থাকে। এই মেলা থেকে পর্যটকদের অন্যতম পাওনা হল হস্তশিল্পীরা কী ভাবে জিনিস তৈরি করেন, সেই পদ্ধতি চোখের সামনে দেখতে পাওয়া। প্রতি দিন সন্ধেয় থাকে ভিন্নস্বাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। উত্তরপ্রদেশের ধাতুর গয়না, সাহারানপুরের আসবাবপত্র, তেলঙ্গানার ইক্কত শাড়ি, দিনাজপুরের শতরঞ্জি এ বারের নবান্ন মেলার বিশেষ আকর্ষণ। অন্য বারের মতো এ বছরও পশ্চিমবঙ্গ ও ভিনরাজ্যের বিভিন্ন প্রকারের চাল দেখতে পাওয়া যাবে মেলায়।
রবিবার বাচ্চাদের জন্য একটি অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সম্রাট মুখোপাধ্যায়ের একটি কর্মশালা রয়েছে। যেখানে তিনি হস্তশিল্পীদের ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে বোঝাবেন। মঙ্গলবার, কলকাতার একটি সেবাকেন্দ্রের উদ্যোগে শিল্পীদের স্বাস্থ্য ও চোখ পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্বভারতীর কলাভবনের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে তিন দিনের একটি কর্মশালা।
শনিবার উদ্বোধনের পর থেকেই ভিড় জমেছে মেলায়। মেলার হাজির পর্যটক শিখা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতি বছর নবান্ন মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। শিল্পীদের তৈরি নতুন আঙ্গিকের জিনিসই এই মেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।’’ একই কথা বললেন নবান্ন মেলার অন্যান্য দর্শকেরাও।