দাওয়ায় বসে আদিবাসীদের সমস্যা শুনলেন ডিএম

সিউড়ি ১ ব্লকের  ভুরকুনা পঞ্চায়েতের হরিপুর-বেলডাঙা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সমবেত তিন-চারটি আদিবাসী গ্রামের শ’তিনেক পুরুষ-মহিলা। কোথায় তাঁদের অসুবিধা, স্কুলের দাওয়ায় বসে তা মন দিয়ে শুনছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১০
Share:

হরিপুর-বেলডাঙা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের সামনে। নিজস্ব চিত্র

কেউ জানালেন, রেশনে জিনিস ঠিকমতো মেলে না। কারও ক্ষোভ, এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট। কেউ কেউ অভিযোগ করলেন, আদিবাসী পেনশন মিলছে না।

Advertisement

সিউড়ি ১ ব্লকের ভুরকুনা পঞ্চায়েতের হরিপুর-বেলডাঙা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সমবেত তিন-চারটি আদিবাসী গ্রামের শ’তিনেক পুরুষ-মহিলা। কোথায় তাঁদের অসুবিধা, স্কুলের দাওয়ায় বসে তা মন দিয়ে শুনছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। সঙ্গী ছিলেন তিন জন অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প, এমজিএনআরইজিএ, খাদ্য-সহ বিভিন্ন দফতরের জেলা আধিকারিকরা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টানা দু’ঘন্টা এমনই ‘জনতার দরবার’-এ হাজির থেকে জেলাশাসক জানতে চান, কেমন আছেন এলাকার মানুষ। খোঁজ নিলেন, আদিবাসী এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন কিনা। জানতে চাইলেন, রেশন ব্যবস্থা কেমন, সকলের কার্ড রয়েছে কিনা, ১০০ দিনের কাজ পান কিনা, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হয়েছে কিনা। পানীয় জলের জোগান কেমন, এলাকার অন্য সমস্যা গুলি কী কী, তা-ও খোঁজ নেন তিনি। যেখানে যা সমস্যা পেয়েছেন, সেগুলিকে যথাযথভাবে মেটানোর জন্য সঙ্গে থাকা আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।

Advertisement

জেলাশাসক যে বেলডাঙা গ্রামে এসে মানুষের কথা শুনবেন, এক দিন আগে জেনেছিলেন বিডিও (সিউড়ি ১) ও স্থানীয় পঞ্চায়েত। সেই জন্য ডাকা হয়েছিল হরিপুর, সংগ্রামপুর, বনকাটি-সহ তিন চারটি গ্রামের আদিবাসীদের। বাঁশ দিয়ে ত্রিপল খাটিয়ে রাখা হয়েছিল। কোনও চেয়ার ছিল না, যাতে জেলাশাসককে নিজের ভেবে সকলে মনের কথা বলতে পারেন। জেলাশাসকের নিজের কথায়, ‘‘আমি চেয়েছিলাম, মাটিতে বসে ওঁদের কথা শুনতে।’’

চলতি মাসের ৬ তারিখ রাজনগরের ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলবুনি করঞ্জাবুনি গ্রামে গিয়েও আদিবাসীদের অভাব অভিযোগ শুনেছেন জেলাশাসক। একই ভাবে বেলডাঙা গ্রামেও দরবার সারলেন। নিজের হাতে বিলি করলেন কিছু জাতিগত শংসাপত্র। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমি চাইছি প্রশাসনের সকলকে নিয়ে সপ্তাহে অন্তত দু’টি করে এমন বৈঠক করতে। যাতে আরও বেশি করে সরকারি প্রকল্প নিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে সচেতন করা যায়।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল সমস্যা উঠে এসেছে রেশন নিয়েই। গ্রামের বহু মানুষ অভিযোগ করেছেন, তাঁরা প্রাপ্য সামগ্রী পাচ্ছেন না স্থানীয় রেশন ডিলারের কাছ থেকে। রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ খাদ্য দফতরের আধিকারিককে তদন্ত করে দেখতে নির্দেশ জেন জেলাশাসক। ডিলার না শোধরালে প্রয়োজনে তাঁর লাইসেন্স বাতিল করার পথেও হাঁটতে পারেন, সে কথাও জানিয়েছন মৌমিতাদেবী। পানীয় জলের সঙ্কটের কথাও বারবার উঠেছে। সঙ্কট মেটাতে বিকল তিনটি কল সারানোর পাশাপাশি একটি সোলার সাবমার্সিবল পাম্প করে দেওয়ার আশ্বাস দেন জেলাশাসক। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানায়, জন্মের শংসাপত্র না-থাকায় কন্যাশ্রী মেলেনি। তাকে আশ্বাস দিয়েছেন, প্রধান শিক্ষককে ডেকে সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া হবে। জেলাশাসক জানাচ্ছেন, ওই গ্রামে আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন অনেক মানুষ। ১০০ দিনের কাজও চলছে। তবে কাজ চাইছেন এমন জবকার্ডধারীদের জন্য, আগামী সোমবার একটি শিবির করা হবে। তিনি জেনেছেন, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় এলাকার অনেক মেয়ে রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে না। এই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার দিকে জোর দেবে প্রশাসন। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড যাতে সকলে পান সেটাও দেখা হচ্ছে বলে জেলাশাসক জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement