Jadavpur University Student Death

যাদবপুরে পড়ুয়ামৃত্যুর বিচার চান আর এক পুত্রহারা মা, সাত বছর আগে মৃত্যু বাঁকুড়ার সৌমিত্রর

২০১৬ সালের এমনই এক দিনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বাঁকুড়ার পড়ুয়া সৌমিত্র দে’র। সেই সৌমিত্রর মা চন্দনা এখন ফাঁসি চান খুনিদের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৩ ১৭:৫৭
Share:

সৌমিত্রর ছবি হাতে নিয়ে তাঁর বাবা লক্ষ্মণ দে এবং মা চন্দনা দে। — নিজস্ব চিত্র।

নয় নয় করে পেরিয়ে গিয়েছে সাত সাতটা বছর। ২০১৬ সালের এমনই এক দিনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া মেধাবী পুত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিল বাঁকুড়ার ছত্রআড়া গ্রামের দে পরিবারকে। সাত বছর পর সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই আর এক ছাত্রের মৃত্যু আবার ফিরিয়ে আনল শোকের আবহ।

Advertisement

বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের ছত্রআড়া গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সৌমিত্র দে। তাঁর বাবা লক্ষ্মণ দে পেশায় কৃষক। মা চন্দনা দে সামলান ঘরের কাজকর্ম। দুই ছেলের মধ্যে মেধাবী সৌমিত্রকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন দে পরিবারের সকলে। স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করে সৌমিত্র ভর্তি হয়েছিলেন বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে। সেখান থেকে স্নাতক স্তরে ভাল ফল করে তিনি দর্শনে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থেকেই চলছিল পড়াশোনা। ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর দুপুরে আচমকা টেলিফোনে পরিবারের কাছে সৌমিত্রর মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছয়। তখন তিনি তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। সৌমিত্রর পরিবার জানতে পারে সৌমিত্র হস্টেলে নিজের ঘরে সিলিং ফ্যানে গলায় গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার পর ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে কখনও সৌমিত্রর পরিবার ছুটে গিয়েছে যাদবপুরের হস্টেলে, আবার কখনও পুলিশের কাছে। কিন্তু সৌমিত্রর পরিবারের দাবি, তাঁরা আজও সুবিচার পায়নি।

যাদবপুরে আবার এক ছাত্রের মৃত্যু সাত বছর পর নতুন করে পুত্রশোক জাগিয়ে তুলেছে সৌমিত্রর মা চন্দনার মনে। ঘটনার খবর শোনা থেকে তিনি কেঁদে চলেছেন। বার বার স্বামী লক্ষ্মণকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘এই ছেলেটি আবার সৌমিত্রর মতো হয়ে যাবে না তো? এর পরিবার বিচার পাবে তো? আর কত মায়ের কোল খালি হলে টনক নড়বে সকলের?’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা গ্রামের ছাপোষা মানুষ বলে বিচার পাইনি। আমার ছেলে মেধাবী ছিল বলে তাকে খুন করে যাদবপুরের হস্টেলে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন কেউ আমাদের কথায় কোনও গুরুত্ব দেয়নি। এ বার অন্তত এর খুনিদের ফাঁসি দেওয়া হোক।’’

Advertisement

সৌমিত্রর দাদা প্রশান্ত দে বলেন, ‘‘আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে, এ কথা আমরা আজও মনে করি না। আমার ভাইকে র‌্যাগিং করে মেরে ফেলা হয়েছিল। পরে খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা ঘটনার প্রকৃত তদন্ত চেয়ে বার বার বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েও সুবিচার পাইনি। এই ছাত্রটির ক্ষেত্রে যেন তেমনটা না হয়।’’

(পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী রবিবার তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের নাম না-লিখতে অনুরোধ করেছেন। এই মৃত্যুমামলা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর যৌন নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’ আইনে হওয়া উচিত বলেও তাঁর অভিমত। কমিশনের উপদেষ্টার অনুরোধ মেনে এর পর আনন্দবাজার অনলাইন মৃত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement