কার্ডের মালিক বসে রয়েছেন বীরভূমের জেলা সদর সিউড়িতে। অথচ তাঁরই এটিএম ব্যবহার করে টাকা উঠে গেল কাতার, ইউরোপে!
মঙ্গলবার সিউড়ি থানা এবং জেলা সাইবার সেলের কাছে কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ জানালেন বীরভূম জেলা স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক, সিউড়ির বাসিন্দা সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। সোমনাথবাবু জানান, সিউড়ির এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এটিএম কার্ডও ওই ব্যাঙ্কের। তিনি কখনও কাউকে এটিএম কার্ডের পিন নম্বর জানাননি। মোবাইলে কিংবা মেলে ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ও পাননি, বা কাউকে পাঠাননি। অথচ, কার্ড ব্যবহার করে রবিবার গভীর রাতে চার দফায় মোট ৪৫ হাজার টাকা উঠে গিয়েছে। মেল-মারফত এটা জানার পরেই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে কার্ড ব্লক করিয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষক। সোমনাথবাবু কথায়, ‘‘একটু বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাসের জন্যই বড় ক্ষতির হাত থেকে রেহাই মিলল।’’
ওই শিক্ষকের ত্রুটি না থাকা সত্বেও যেহেতু এমন ঘটনা ঘটেছে, তাই ওই পরিমাণ টাকা ‘আন্ডার সেটেলমেন্ট’ উল্লেখ করে গ্রাহকের কাছে ১২০ দিন সময় চেয়েছে হেল্পলাইন। কেন, কী ভাবে এমনটা হল, সেটাও জানানো হবে বলে মেল মারফত সোমনাথবাবুকে জানিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তারপরেও সোমনাথবাবুর প্রশ্ন, ‘‘ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কী করবেন সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু, যেখানে আমার কোনও ভূমিকাই নেই সেখানে এমনটা ঘটবে কেন।’’ এরপরই গোটা ঘটনা পুলিশকে লিখিত ভাবে জানান তিনি।
ঠিক কী হয়?
সোমনাথবাবুর কথায়, ‘‘রবিবার রাতে ওই সময় ফোন অফ ছিল। রাতে ইন্টারনেট অন করে কম্পিউটারে কাজ করতে করতেই সেখানে মেলে প্রথম লেনদেনের অ্যালার্ট আসে। আমার কার্ড ঘরেই রয়েছে। তা হলে কী ভাবে লেনদেন হচ্ছ, সেটা বুঝতে না বুঝতেই আরও একটা লেনদেন হয়। বিপদ বুঝে হেল্পলাইনকে ফোন করে কার্ড ব্লক করানো পর্যন্ত চারটে লেনদেন হয়ে যায়। প্রতিটিতেই কিছু না কিছু কেনা হয়েছে। আমি না হয় রাতে জেগেছিলাম। ঘুমিয়ে থাকলে কী হতো ভেবে পাচ্ছি না।’’
পুলিশের সাইবার সেল মনে করছে, তথ্য হাতিয়ে ‘ডুপ্লিকেট’ কার্ড তৈরির চল দুষ্কৃতীদের মধ্যে রয়েছে। যার পোশাকি নাম ‘ক্লোনিং’ বা ‘স্কিমিং’। সোমনাথবাবুর কার্ডের তথ্য চুরি করে হয়তো এ ভাবেই কার্ডের প্রতিলিপি তৈরি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
কিন্তু, বিদেশে লেনদেন কেন?
পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় তিনি ফোটোগ্রাফার। প্রচুর আন্তর্জাতিক পুরস্কার রয়েছে সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের। বহু বার বিদেশে গিয়েছে। পুলিশ মনে করছে, ওই কার্ড নিয়ে দেশের ও বিদেশের নানা জায়গায় এটিএমে লেনদেন হয়েছে। তখনই কোনও ভাবে তাঁর কার্ডের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা।