বাঁকুড়া মেডিক্যালের কোভিড ওয়ার্ডে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
কোভিড রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো কী অবস্থায় রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে চলল মহড়া (মক ড্রিল)। মঙ্গলবার বাঁকুড়া মেডিক্যাল ও ছাতনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মহড়া চলে। এর পাশাপাশি, ভেন্টিলেটরগুলি ঠিকমতো কাজ করছে কি না, সিসিইউ ও সাধারণ কোভিড ওয়ার্ডের বৈদ্যুতিক লাইনে কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখেন কর্মীরা। ঝাড়পোছ করা হয় রোগীদের শয্যাগুলিও।
বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিজস্ব অক্সিজেন প্লান্ট রয়েছে। সেটি নিয়মিত ব্যবহারও হচ্ছে। এ দিন সেই প্লান্টের অবস্থা খতিয়ে দেখেন হাসপাতালের কর্তারা। মেডিক্যাল সূত্রে খবর, হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য ৪৮টি সিসিইউ ও ১৫টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। এর বাইরে প্রসূতিদের ওয়ার্ডেও কোভিড আক্রান্তদের জন্য পৃথক শয্যার ব্যবস্থা আছে। শিশুদের জন্য ১২টি সিসিইউ ও ৬টি এসএনসিইউ শয্যা তৈরি রাখা হয়েছে। হাসপাতালের কোভিড নির্ণয় পরীক্ষার যন্ত্রপাতিগুলির কাজ খতিয়ে দেখে রিপোর্টও সংগ্রহ করা হয় এ দিন।
বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “কোভিড রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো কী অবস্থায় রয়েছে, মূলত তা এ দিন মহড়ায় খতিয়ে দেখা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্সদের সঙ্গেও বৈঠক করা হয়েছে। রোগী হাসপাতালে এলে কী ভাবে তাঁদের পরিষেবা দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
ছাতনা সুপার স্পেশালিটিতে ১২ শয্যার সিসিইউ ওয়ার্ড রয়েছে কোভিড রোগীদের জন্য। এ দিন ওই ওয়ার্ডের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন হাসপাতালের কর্তারা। বাঁকুড়ার ডেপুটি সিএমওএইচ (১) বার্নামান টুডু বলেন, “কোভিড-ঝড় উঠলে হাসপাতাল পরিষেবা দিতে কতটা প্রস্তুত, কোথায় কী খামতি রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।”
মহড়ার মাধ্যমে এ দিন করোনা রোগীদের ভর্তির ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হয় পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ভিডিয়ো কনফারেন্সে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কোভিড আক্রান্তদের ভর্তির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আচমকা কোভিড আক্রান্ত কোনও রোগী এলে তাঁকে দ্রুত ভর্তি করা যাচ্ছে কি না, বা কত দ্রুত আক্রান্তের চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে, মক ড্রিলের মাধ্যমে তা দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।”
নির্দেশ অনুযায়ী এ দিন মেডিক্যালের পুরনো ও হাতোয়াড়ার নতুন ক্যাম্পাসে গিয়ে কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসার সমস্ত পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন সুপার, চিকিৎসক, নার্স-সহ মেডিক্যালের পদস্থ কর্তারা। সামগ্রিক অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা বা প্রতিটি শয্যায় অক্সিজেন সরবরাহের যে পরিকাঠামো রয়েছে, তা খতিয়ে দেখেন তাঁরা।
মেডিক্যালের সুপার সুকোমল বিষয়ী বলেন, “মেডিক্যালের পুরনো ক্যাম্পাসে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পাঁচটি করে মোট দশটি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এখানে পিএসএ-র পরিকাঠামো রয়েছে। এই যন্ত্র বাতাস থেকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে। এ ছাড়া, হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসের মূল ভবনের তিনটি তলায় মোট ২৯২টি শয্যা রয়েছে। এখানে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এলএমও-রও পরিকাঠামো রয়েছে। সরাসরি রোগীর শয্যায় অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। কোনও কোভিড আক্রান্ত রোগীকে কী ভাবে পরিষেবা দেওয়া হবে, তা নিয়ে মক ড্রিলও হয়েছে।” রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটির সহকারী সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায়ও জানান, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য দশটি করে মোট কুড়িটি শয্যা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কুণালকান্তি দে বলেন, “এ দিন মেডিক্যাল কলেজে মহড়া হয়েছে। বুধবার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মহড়া হবে। এ ছাড়া, জেলার প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতাল ও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য দু’টি করে মোট চারটি শয্যা রয়েছে। তা প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”