রক্তের দালাল চক্রের রমরমা

বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে যে সমস্ত রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই রক্তপরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। রক্ত পরীক্ষার মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীকে ডেঙ্গির জীবাণু, টাইফয়েডের পরীক্ষা লিখছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ 

বোলপুর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪৪
Share:

প্রতীকী চিত্র

রক্ত পরীক্ষা নিয়ে দালাল-চক্রের রমরমা চলছে বলে অভিযোগ উঠল বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। রোগীর আত্মীয় পরিজনদের অভিযোগ, চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের একাংশের মদতেই এমনই ঘটনা ঘটে চলেছে। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তীর্থঙ্কর চন্দ্র অবশ্য বলছেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দেখা হবে।’’

Advertisement

বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে যে সমস্ত রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই রক্তপরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। রক্ত পরীক্ষার মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীকে ডেঙ্গির জীবাণু, টাইফয়েডের পরীক্ষা লিখছেন চিকিৎসকেরা। বোলপুর মহকুমার হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডেঙ্গির জীবাণু পরীক্ষার সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। টাইফয়েড পরীক্ষার ব্যবস্থা বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে না থাকলেও সেক্ষেত্রে রোগীকে নিজে বাইরে গিয়ে টাইফয়েড পরীক্ষার করিয়ে আনতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালের পক্ষ থেকে। কিন্তু রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের একাংশ চিকিৎসক ও কর্মীদের মদতেই হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে রোগীর কাছে হাসপাতালের কর্মী পরিচয় দিয়ে রোগীর কাছ থেকে

রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গির ও টাইফয়েড পরীক্ষার নামে মোটা অঙ্কের টাকাও

Advertisement

রোগীর পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রোগীর পরিজনের অভিযোগ, একটি দালাল চক্রের মদতে এই কাজ হচ্ছে।

পরিজনেরা জানাচ্ছেন, এর ফলে রোগীর কাছ থেকে একবার দালালরা হাসপাতালের কর্মীর পরিচয় দিয়ে রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করছেন। আবার যারা হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন তাঁরাও ওই রোগীর কাছ থেকে রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করছেন। এর ফলে রোগীরা বুঝতে পারছেন না কে আসল স্বাস্থ্যকর্মী। এ ছাড়াও রোগীদের কাছ থেকে রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করার পর তার রিপোর্টটিও বাইরে থেকে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

দিন কয়েক আগেই বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বোলপুর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নায়েকপাড়ার বাসিন্দা মামণি সাহা, বোলপুর অধ্যাপক কলোনির বাসিন্দা সুলেখা দাস, কাশীপুরের সবিতা পাল, পারুলডাঙ্গার মিনতি মাল। এঁদের সকলের কাছ থেকেই রক্ত পরীক্ষার জন্য দু’বার করে রক্ত নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মামনি সাহা, সুলেখা দাস, সবিতা পালরা বলেন, ‘‘আমাদের কাছ থেকে দু’বার করে রক্ত নেওয়া হয়। ডেঙ্গির জীবাণু পরীক্ষার জন্য টাকাও নেওয়া হয় আমাদের কাছ থেকে।’’

রোগীর আত্মীয়দের প্রশ্ন, সরকারি হাসপাতালে সমস্ত পরিষেবা নিখরচায় পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে বাইরে থেকে দালালরা কীভাবে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে রোগীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করছে? সেই রক্ত পরীক্ষার জন্য তাদের কাছ থেকে টাকাও দালালরা নিচ্ছে কী করে? বীরভূম জেলা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নুরুল হক বলেন, ‘‘যেখানে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গির জীবাণু পরীক্ষার সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে রোগীরা বিনামূল্যে পরিষেবা পাচ্ছেন না কেন? রক্ত পরীক্ষা করাতে রক্ত হাসপাতাল থেকে বাইরেই বা কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? ডেঙ্গির জীবাণু রিপোর্ট বাইরে থেকেই বা কেন দেওয়া হচ্ছে রোগীকে?’’

রোগীরা জানান, এই ধরনের রক্তের দালালচক্রের অভিযোগ আগেও পাওয়া গিয়েছে হাসপাতালে। সেই সময় দালালদের চিহ্নিত করে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। সুপার বলছেন, ‘‘হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডেঙ্গির জীবাণু পরীক্ষা করানো হয়। এই ব্যাপারে রোগীদের আরও সচেতন করতে আগামী দিনে হাসপাতালের বিভিন্ন চত্বরে পোস্টারিং করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement