প্রতীকী চিত্র।
দুর্গাপুর ব্যারাজে জলের ঘাটতির প্রভাব পড়ল বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে (এমটিপিএস)। জলসঙ্কটের জেরে সোমবার একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় এমটিপিএস। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা জল পরিশোধন করে ফের ব্যবহার করাও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, এমটিপিএস কলোনির বাসিন্দাদের জন্য বরাদ্দ জলের পরিমাণও কমানো হয়েছে।
শনিবার দুর্গাপুর ব্যারাজের লকগেটে ভেঙে জল বেরিয়ে যায়। এর ফলে, বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাটির এমটিপিএসের পাশাপাশি, বড়জোড়া, বাঁকুড়া ১ ও বাঁকুড়া ২ ব্লকেও নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। এমটিপিএস সূত্রের খবর, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট আটটি ইউনিটের মধ্যে সাতটি সব সময় সচল থাকে। ওই সচল ইউনিটগুলির মধ্যেই একটি এ দিন বন্ধ করে দেওয়া হয় জলের অভাবে। ওই ইউনিটটি থেকে ৪৬০-৪৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের আধিকারিকেরা জানান, দৈনিক গড়ে ১,৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এমটিপিএসে। সেখানে এ দিন ১,১১৭ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়েছে। এ দিকে, কলোনির বাসিন্দাদের অভিযোগ, খুবই অল্প সময়ের জন্য জল দেওয়া হচ্ছে। এমটিপিএসের ডিজিএম প্রবীর চাঁদ বলেন, “এখন যতটা সম্ভব জলের খরচ কমানোই আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জল সংগ্রহ করে, পরিশোধন করে, ফের কাজে লাগানো হচ্ছে। কলোনির বাসিন্দাদের কিছুটা কম জল দেওয়া হচ্ছে।”
বড়জোড়া, বাঁকুড়া ১ ও বাঁকুড়া ২ ব্লকে চাহিদা মোতাবেক জল বিলি শুরু করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। তার পরেও কিছু গ্রাম থেকে জল না পাওয়ার অভিযোগ উঠছে। বাঁকুড়া ১ ব্লকের উপরবাঁধ গ্রামের বধূ মামণি বাগদি বলেন, “শনিবার থেকে জল আসেনি গ্রামের কলে। টিউবওয়েলগুলিও খারাপ হয়ে রয়েছে। অথচ ,প্রশাসন গ্রামে জল বিলি করতে আসেনি।” বিজেপির বাঁকুড়া ১ মণ্ডল সভাপতি বিকাশ ঘোষের অভিযোগ, “এই ব্লকের বহু গ্রামেই জল নেই। কোথাও প্রশাসন খবর নেয়নি।” বাঁকুড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “সমস্ত পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা এলাকার পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। এখনও কোনও এলাকা থেকেই জলসঙ্কটের কথা জানা যায়নি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ট্যাঙ্ক ও জলের পাউচ রয়েছে। কোথাও সমস্যা হলেই পাঠানো হবে।” বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের কাজল পোড়েল জানান, শনিবার ঘুটগোড়িয়া পঞ্চায়েতে দু’টি জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হয়। মালিয়াড়া পঞ্চায়েতের তরফে দু’হাজার জলের পাউচ পঞ্চায়েত সমিতির কাছে চাওয়া হয়েছে। সেগুলি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তিনটি যন্ত্রে দৈনিক ১ লক্ষ ৮০ হাজার জলের পাউচ তৈরি করা হচ্ছে। সমস্ত ব্লকেই পর্যাপ্ত জলের পাউচ দেওয়া হয়েছে।” বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ সোমবার বলেন, “জলসঙ্কটের জেরে কোথাও সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাইনি। এমনটা যাতে না হয়, বিডিওদের সে দিকে নজর রাখতে বলেছি।”