Jhalda

ফোঁড়া ‘ড্রেস’ করাতে গিয়ে মৃত্যু, নালিশ

জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান  তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘ঘটনাটি নিয়ে খোঁজ নেব।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া ও ঝালদা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৭:২১
Share:

প্রতীকী ছবি।

পায়ের ফোঁড়া ‘ড্রেস’ করাতে গিয়ে পুরুলিয়ার ঝালদা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক কর্মীর ‘অসতর্কতায়’ রক্তপাত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিউমোনিয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এ উল্লেখ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। বুধবার শিশুর পরিবার পুরুলিয়া জেলা রোগীকল্যাণ সমিতি, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ এবং ঝালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও ঝালদা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

Advertisement

জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘ঘটনাটি নিয়ে খোঁজ নেব।’’ তবে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, আজ, বৃহস্পতিবার এসিএমওএইচ পদমর্যাদার এক আধিকারিক তদন্তে ঝালদায় যাবেন।

মৃত শিশু নীল মাছুয়ার (২) ঝালদা শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। অভিযোগকারী তার মা সবিতা মাছুয়ার। তিনি জানান, নীলের ডান পায়ের পাতায় একটি ফোঁড়া হয়েছিল। ২৩ এপ্রিল তার চিকিৎসা করাতে ঝালদা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি। সেখানকার এক ডাক্তারের পরামর্শে এক স্বাস্থ্যকর্মী ফোঁড়া ‘ড্রেসিং’ করেন। শনিবারও সেখানে ‘ড্রেসিং’ করানো হয়। সমস্যা হয় সোমবার।

Advertisement

সবিতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘সোমবার ছেলেটা ঘরে খেলছিল। কোনও সমস্যা ছিল না। বেলা ১০টার সময় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘ড্রেসিং’ করাতে নিয়ে যাই। কিন্তু এ বার এক স্বাস্থ্যকর্মী ‘ড্রেসিং’ করানোর সময়ে ক্ষত থেকে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে। তা দেখে আমরা ভয় পেয়ে গেলে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এসে জানান, ছেলের শরীরে রক্ত কম। আরও কিছুটা পরে জানানো হয়, ছেলে মারা গিয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আমাদের দেরি না করে সৎকার করতে বলেছিল। না হলে পুরুলিয়ার মর্গে পাঠিয়ে দিলে, করোনা-পরিস্থিতিতে গ্রামে দেহ এনে সৎকার করা নিয়ে ঝামেলা হতে পারে বলে ভয় দেখানো হয়।’’ সোমবার তাঁরা শিশুটির দেহ মাটি চাপা দেন।

পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দেওয়া শিশুটির ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এ মৃত্যুর কারণ ‘নিউমোনিয়া’ লেখা রয়েছে দেখে ওই পরিবারের সন্দেহ হয়। সবিতাদেবীর দাবি, ‘‘ওই সার্টিফিকেটে ফোঁড়ার অস্ত্রোপচারের বিষয়ে কিছু লেখা নেই। আমাদের অভিযোগ, চিকিৎসার গাফিলতিতেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তদন্ত চাই।’’

শিশুর বাবা আত্মা মাছুয়ার ঝালদা পুরসভার অস্থায়ী সাফাই কর্মী। ঘটনাটি কানে যায় স্থানীয় কাউন্সিলর সুরেশ আগরওয়ালের। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ যখন উঠেছে, তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তেমন হলে শিশুর দেহ মাটি থেকে তুলে ফরেন্সিক তদন্ত করানো হোক।’’ বাঘমুণ্ডি কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোও দাবি করেন, ‘‘ঘটনার প্রকৃত তদন্ত করা প্রয়োজন।’’

ঝালদার ব্লক মেডিক্যাল অফিসার দেবাশিস মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সে দিন আমি অন্য কাজে ছিলাম। শুনেছি, শিশুটিকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হয়েছিল। এ ছাড়া, রক্তাল্পতাও ছিল। অস্ত্রোপচারে কোনও সমস্যা হয়নি। নিউমোনিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আগেও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে শিশুটিকে এখানে আনা হয়েছিল। সে সংক্রান্ত নথি আমাদের কাছে রয়েছে।’’ যদিও শিশুর মায়ের দাবি, কোনও দিনই তাঁর ছেলের শ্বাসকষ্ট ছিল না। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘ঘটনাটি নিয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement