থেঁতলে খুন বধূ, স্বামী গ্রেফতার

কৃষিপ্রধান গ্রাম মধুবন। শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সিমেন্টের গাঁথনি দেওয়া এক কামরার ইটের বাড়ি। মাথায় অ্যাসবেস্টসের ছাউনি। সামনে জটলা করেছিলেন গ্রামের লোকজন। দরজার পাশে পড়েছিল রক্তমাখা ইট। চাদর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪৮
Share:

ঘটনাস্থল: বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া মধুবন গ্রামে এই বাড়িতেই থাকতেন দম্পতি।নিজস্ব চিত্র

ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার সকালে বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া মধুবন গ্রামের ঘটনা।

Advertisement

মৃতার নাম রমা মাঝি (২৭)। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালে গ্রামেরই যুবক যাদব মাঝির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। মায়ের অভিযোগ, বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পণের দাবিতে রমার উপরে অত্যাচার শুরু হয়। তার জেরেই এই খুন বলে অভিযোগ করছেন তিনি।

কৃষিপ্রধান গ্রাম মধুবন। শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সিমেন্টের গাঁথনি দেওয়া এক কামরার ইটের বাড়ি। মাথায় অ্যাসবেস্টসের ছাউনি। সামনে জটলা করেছিলেন গ্রামের লোকজন। দরজার পাশে পড়েছিল রক্তমাখা ইট। চাদর।

Advertisement

পড়শিরা জানাচ্ছেন, তাঁরা তখন খেতের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। রমা এবং যাদবের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। এ দিনও তেমনটাই শুনে গোড়ায় আমল দেননি। হঠাৎ আর্ত চিৎকার। কয়েক জন পড়শি দাবি করেছেন, তাঁরা ছুটে গিয়ে দেখতে পান, রক্তাক্ত অবস্থায় রমা ছটফট করছেন। যাদব মাঠ দিয়ে ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে।

তাঁরা জানান, দ্রুত ওই বধূকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তখন বেলা সাড়ে ৮টা। রমার মাথায় গভীর ক্ষত ছিল। রক্তক্ষরণ হচ্ছিল অতিরিক্ত। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে।

বিষ্ণুপুর থানার পুলিশের দাবি, খবর পেয়ে গ্রামে যাওয়া হচ্ছিল। পথেই চকবাজারে দেখা মেলে অভিযুক্ত যাদব মাঝির। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। রমার পরিজনেদের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।

মামা শঙ্কর বসানি জানান, রমার ডান পা ছিল বাম পায়ের তুলনায় ছোট। হাটাচলায় সমস্যা হত। বিএ পাশ করেছিলেন। অন্যদিকে মাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরোননি যাদব। রমার ভাই দিলীপ তেওয়ারি বলেন, ‘‘দিদি গ্রামের বাচ্চাদের টিউশন দিত। জামাইবাবু বিষ্ণুপুরের কাটানধারে কাঁসার বাসন পালিশের কারখানায় কাজ করে।’’

একই গ্রামে দু’জনের বাড়ি। প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ে হয়েছিল ২০১৬ সালে। দ্বারিকা গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের স্থানীয় ১২ নম্বর গ্রাম সংসদের সদস্য দুর্গা বাগদি জানান, মাস কয়েক আগে থেকে পাড়াতেই একটি ঘর তুলে থাকতে শুরু করেছিলেন রমা ও যাদব। তার পরেও অশান্তি মিটছিল না।

রমার মা আনন্দময়ী তেওয়ারি স্বামীর মৃত্যুর পরে এলাকারই একটি মুড়ির কলে কাজ করে সংসার চালান। তিনি বলেন, ‘‘যৌতুক চেয়ে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল জামাই। ইদানিং অত্যাচার আরও বাড়ছিল। থানায় অনেক বার বলেছি। পুলিশ বিশেষ গা করেনি।’’

তাঁর অভিযোগ, ঘটনার দিন তিনেক আগেও একই অভিযোগ নিয়ে তাঁরা থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ মিটমাট করে নিতে বলে।

যদিও রমার মায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। দাবি করেছে, থানায় এর আগে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। রমার পরিজনেদের অভিযোগ পেয়েই খুনের মামলা রুজু করে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদবকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement