সাংবাদিক বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
যে রুটে রবিবার রোড-শো করেছেন অমিত শাহ, ঠিক সেই পথেই বোলপুরে রোড-শো করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! শাহের সফরের ঠিক ৯ দিনের মাথায়।
নভেম্বরে এমনই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বাঁকুড়া। এ বার বীরভূমেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের পরে পরেই আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বোলপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফরের কথা জানান জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁকে প্রশ্ন করায় হয়, এটা কি অমিত শাহের পাল্টা রোড-শো? অনুব্রতের জবাব, ‘‘ধরে নিতে পারেন। রাজনৈতিক দল সব সময় জবাব দেওয়ার জন্য তৈরিই থাকে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর রোড শো-এ আড়াই লক্ষ লোকের সমাগম করার চ্যালেঞ্জও নিয়েছেন অনুব্রত।
সব মিলিয়ে বীরভূমের এই জব্বর শীতেও রাজনীতির উত্তাপ অনেকটা চড়া। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে ২৮ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী বীরভূম সফরে আসছেন। ওই দিন বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে তাঁর একটি প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা। পরের দিন রোড শো। রবিবার অমিত শাহের রোড-শো যেখান থেকে শুরু হয়েছিল, বোলপুরের সেই ডাকবাংলো মাঠ থেকেই যাত্রা শুরু করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। বোলপুর চৌরাস্তায় শেষ হওয়ার কথা। সেখানে সভামঞ্চে তাঁর বক্তৃতা দেওয়ার কথাও রয়েছে। শুধু রোড শো নয়, ২৯ তারিখ বোলপুর লাগোয়া কোনও গ্রামে মমতার ‘বঙ্গধ্বনি’ যাত্রা করারও কথা রয়েছে বলে অনুব্রত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘২৭ তারিখ আমার রোড শো করার কথা ছিল। কিন্তু, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী ২৮ তারিখ প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন, উনিই পরের দিন রোড শো করবেন।’’
রবিবার এক দিনের বোলপুর ও শান্তিনিকেতন সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অমিতের রোড শো-এর সময় চোখে পড়ার মতো জনসমাগম লক্ষ্য করা গিয়েছে। উপচে পড়া ভিড় শাসকদলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। রবিবারই বোলপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ‘বঙ্গধ্বনি’ যাত্রা করেন অনুব্রত। কিন্তু অমিত শাহের রোড শো-এর তুলনায় ‘বঙ্গধ্বনি’ যাত্রা অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, নিজের গড়ে পাল্টা কিছু একটা করে দেখানো দরকার ছিল অনুব্রতের। মুখ্যমন্ত্রীর রোড শো-এ লক্ষাধিক লোকের ভিড় করার চ্যালেঞ্জটা সে কারণেই নিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রোড শো-কে এ দিনও কটাক্ষ করে অনুব্রত বলেন, ‘‘বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, আসানসোল মুর্শিদাবাদ থেকে লোক আনব না। বোলপুর-সহ জেলার আরও কয়েকটি ব্লক থেকে আমি আড়াই লক্ষ লোক এনে ২৯ তারিখের রোড শোতে দেখিয়ে দেব!’’
বিজেপি নেতৃত্বের কটাক্ষ, অমিত শাহের রোড শো শাসকদলের রাতের ঘুম কেড়েছে। তাই ছুটে আসতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন তৃণমূলের নিজস্ব মত পথ কোনওটাই নেই। বিজেপিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করাই তৃণমূলের কাজ। রবিরারে রোড শো-এ যা লোক হয়েছিল, তাতে ভয় পেয়েছেন অনুব্রত। লোক ডেকে ভিড় হয়তো করাতে পারবেন। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে থেকে তৃণমূল সরে গিয়েছে।’’
যা শুনে তৃণমূলের পাল্টা, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির অনুমতি নিয়ে তাঁর কর্মসূচি ঠিক করবেন নাকি? জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেও প্রথম স্থানে ছিলাম আমরাই। দু’টি লোকসভা আসনও আমাদের দখলে। মানুষের সঙ্গে জুড়ে থাকার ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া আন্তরিক চেষ্টা বিধানসভা ভোটের ফলেই প্রকাশ পাবে।’’ বিজেপির এমন জন সংযোগ কোথায়—প্রশ্ন ওই তৃণমূল নেতার।